মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি :: সমাজসেবায় একুশে পদক পাচ্ছেন নোয়াখালী বেগমগঞ্জে অবসি’ত গান্ধী আশ্রমের মহাসচিব ঝর্ণা ধারা চৌধুরী।
এছাড়াও এবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি স্বরূপ কামাল লোহানী ও অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানসহ দেশের ১৫ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক পেয়েছেন। এর মধ্যে দুই জনকে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৩ জানুয়ারিতে প্রথম কোনো বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ঝর্ণা ধারা চৌধুরীর নাম উঠে এসেছে ভারতের অন্যতম শীর্ষ বেসামরিক পদক পদ্মশ্রী প্রাপ্তদের তালিকায়। ভারতের ৬৪তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে পদক প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের মহাসচিব ঝর্ণা ধারা চৌধুরীই প্রথম বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে এ পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। সামাজিক কর্মকান্ডে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য তাকে এ সম্মান দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পদ্মশশ্রী প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
“দীর্ঘদিন বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে নোয়াখালীর মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং নিঃস্বার্থ সেবার স্বীকৃতি হিসেবে ঝর্ণা চৌধুরীকে এ সম্মান জানানো হয়েছে।” সাধারণত মার্চ বা এপ্রিল মাসে নয়া দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিতদের হাতে পদক তুলে দেন।
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট একটি উন্নয়ন ও জনসেবামূলক সংস্থা। গান্ধীর পল্লী উন্নয়ন দর্শনের ওপর ভিত্তি করে ১৯৪৬ সাল থেকে নোয়াখালীতে এ সংস্থা কাজ করে আসছে।
১৯৪৬ সালের শেষদিকে নোয়াখালীতে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ছুটে আসেন ভারতের জনক মহাত্মা গান্ধী। সেখানে সাম্প্রদায়িক সমপ্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রায় চার মাস খালি পায়ে গ্রামের পর গ্রামে হেটে অহিংসার বাণী প্রচার করেন। তার সেই স্মৃতি নিয়ে নোয়াখালীতে গড়ে ওঠে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট।
শৈশব থেকে ওই ট্রাস্টে কাজ করে আসছেন ঝর্ণা চৌধুরী। বলা হয়ে থাকে, তার আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই ওই এলাকার দরিদ্র মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এই ট্রাস্টের জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ড। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এই ট্রাস্ট অঙ্গণে ২০০০ সালে একটি জাদুঘর চালু করা হয়। গত বছর নারী শিক্ষা বিস্তার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ বছর ‘বেগম রোকেয়া পদক’ পেয়েছেন ঝর্ণাধারা চৌধুরী ।
জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই রোকেয়া পদকের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত করে। ৯ ডিসেম্বর১৪ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পদক তুলে হয়েছে।
এতে বলা হয়, “নারী শিক্ষা বিস্তার, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গ্রাম বাংলার অসহায় ও দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ঝর্ণাধারা চৌধুরী পদকের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।”
মহাত্মা গান্ধীর অহিংসর নীতিতে উজ্জীবিত হয়ে ঝর্ণাধারা চৌধুরী ছোটবেলা থেকেই মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করেন । ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর জেলায় গড়ে ওঠা গান্ধী মেমোরিয়াল প্রাথমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ঝর্ণা ধারা চৌধুরী।