জয়পুরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারত থেকে অবাধে আসছে যৌন উত্তেজক ও নেশা জাতীয় ট্যাবলেট ইয়াবা। সীমান্তের চোরাচালানী ও মাদক ব্যবসায়ী চক্র এখন ফেন্সিডিলের পাশাপাশি আনছে ইয়াবা। যাচ্ছে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ফেন্সিডিল বহনের চেয়ে ইয়াবা বহন সহজ এবং তুলনামূলক ভাবে লাভজনক হওয়ায় মাদক পাচারকারীরা এখন ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভুটিয়াপাড়া, মঙ্গলবাড়ী, পশ্চিম ভুটিয়াপাড়া এবং পাঁচবিবি উপজেলার হাটখোলা, আটাপাড়া, বাগজানা, রতনপুর, কড়িয়া ও খাংগইরহাট সীমান্ত পথে সমপ্রতি প্রতিনিয়ত ভারত থেকে চোরাপথে আসছে ইয়াবা। এরপর সুযোগ বুঝে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে ইয়াবার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকারের মাদকও আসছে পুর্বের মতই।

অতি সমপ্রতি যৌন উত্তেজক ও নেশা জাতীয় বিপুল পরিমান ইয়াবা সহ জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশের হাতে এবং র‌্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যদের হাতে গ্রেফতারকৃত ২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর দেওয়া তথ্যে হতবাক হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনও। তাদের তথ্য মতে, জয়পুরহাট এবং দিনাজপুরের বাংলাহিলি সীমান্ত পথে প্রতিদিন ভারত থেকে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭০ হাজার পিচ ভায়াগ্রা জাতীয় নেশা ও যৌন উত্তেজক ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার হয়ে আসে। এরপর তা পাচার হয়ে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল সহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। ফেন্সিডিলের চেয়ে ইয়াবা বহন সহজ ও লাভজনক হওয়ায় মাদক পাচারকারীরা এখন ফেন্সিডিলের পাশাপাশি ইয়াবাকে বেছে নিয়েছে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, মানিকগঞ্জ এবং রাজশাহীতে ফেন্সিডিলের তুলনায় ইয়াবার চাহিদা বেশি বলেও জানায় সূত্রটি।

গত ১৬ নভেম্বর বুধবার রাতে জয়পুরহাট শহরের বি এ ডি সি মোড় থেকে সদর থানা পুলিশ ৫০ হাজার পিচ যৌন উত্তেজক ইয়াবা ট্যাবলেট সহ বাবলু (৩০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত বাবলু জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সমসাবাদ গ্রামের হজরত আলীর পুত্র। সে পাঁচবিবির সীমানত্ম পথে ট্যাবলেটগুলো পাচার করে এনে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বগুড়ায় নিয়ে যাচ্ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে। এরপর অন্য একজন ব্যবসায়ী এগুলো ঢাকায় পাচার করে নিয়ে যাবার কথা ছিল বলেও জানায়।

তবে তার দেওয়া তথ্য মতে, মাদকসেবীদের একটা বড় অংশ এখন ইয়াবা সেবনে জড়িয়ে পরেছে । অধিকাংশ ফেন্সিডিল সেবনকারীরাই এখন ফেন্সিডিলের পরিবর্তে ইয়াবা সেবন করছে। যুবকদের পাশাপাশি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হলে থাকা মেয়েদের একটা বিশাল অংশ ইয়াবা সেবন করে।

সে আরও জানায়, শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই প্রতিদিন ৩০ হাজার পিচ ইয়াবা বিক্রয় হয়। যার অধিকাংশই জয়পুরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত পথে পাচার হয়ে আসা ইয়াবা। ঢাকা শহরের মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা ইয়াবাকে ”বাবা” এবং চট্টগ্রামে ইয়াবাকে ”ডাড্ডি” আর ফেন্সিডিলকে ”মাম্মি” বলে সম্বোধন করে সাংকেতিক নাম হিসেবে বলেও জানা যায়।

এছাড়া অতি সমপ্রতি বিপুল পরিমান ইয়াবা সহ বাংলাহিলি সীমান্ত পথে জয়পুরহাট র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া এক মাদক ব্যবসায়ীর তথ্যে হতবাক হতে হয়। তথ্য মতে, আটক মাদক ব্যবসায়ী বগুড়া শহরের ফেন্সিডিল ও গাঁজা ব্যবসায়ী। কিন্তু এখন সে ফেন্সিডিলের পরিবর্তে ভায়াগ্রা জাতীয় নেশা ও যৌন উত্তেজক ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রয় করে। আর শুধু বগুড়া শহর এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন প্রতিদিন ইয়াবার চাহিদা ৫ থেকে ৭ হাজার পিচ। ছাত্র এবং যুবকদের পাশাপাশি হলে কিংবা মেসে থাকা মেয়েরাও এই ইয়াবার নিয়মিত ক্রেতা ও সেবনকারী। আটক ওই মাদক ব্যবসায়ী আরও জানায়, তিনি বগুড়ার একটিমাত্র কলেজ হোষ্টেলেই প্রতিদিন ২ হাজার পিচ ইয়াবা বিক্রয় করে। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন যাবত জয়পুরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারত থেকে ইয়াবা এনে বগুড়ায় বিক্রয় করে আসছিল।

জয়পুরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার মাদক পাচারকারী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং সীমান্ত পথে সংশিস্নষ্ট একটি প্রশাসনের লাইনম্যান পরিচয়ে পাচার হয়ে আসা বিভিন্ন মাদক ও অবৈধ মালামাল থেকে চাঁদা আদায়কারী একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জয়পুরহাট ও বাংলাহিলি সীমান্ত পথে এখন ফেন্সিডিলের চেয়ে কয়েকগুন বেশি হারে ভায়াগ্রা জাতীয় নেশা ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ইয়াবা এবং সেনেগ্রা পাচার হয়ে আসছে। তুলনামূলক ভাবে বহনে সহজ এবং চাহিদা বেশি ও লাভজনক হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা এখন ইয়াবা আর সেনেগ্রাকে বেছে নিয়েছে মাদক হিসেবে। এক সঙ্গে ৫০/৬০ হাজার পিচ ইয়াবা বহন করা যায় অতি সহজেই। কারন এটি একটি ট্যাবলেট জাতীয় নেশা। এছাড়া একসঙ্গে এত বেশি পরিমান ফেন্সিডিল বহন করতে না পারা ও ঝুঁকিপুর্ন হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবা বেছে নিয়েছে। তবে সীমান্তের যেসব এলাকা দিয়ে ফেন্সিডিল কিংবা ইয়াবা, সেনেগ্রা পাচার হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে যোগসাজস করে অর্থের বিনিময়েই করা হয়। আর এই অর্থ আদায় হয় ওই প্রশাসনের লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে। বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি এবং ট্রেন পথে এসব মাদকদ্রব্য বহন করা হয় বলেও জানা যায়।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত  পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানায়, মাদকদ্রব্যগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাহিলি সীমান্ত পথে পাচার হয়ে আসে। পাঁচবিবি সীমানত্ম পথে ফেন্সিডিল ও শাড়ী কাপড় কিংবা কসমেটিক্স জাতীয় মালামাল ভারত থেকে পাচার করে আনার চেষ্টা করা হলেও তা র‌্যাব কিংবা পুলিশের হাতে আটক হয়। তবে এ সীমান্ত পথে ভায়াগ্রা, ইয়াবা কিংবা সেনেগ্রা পাচার হয় না। এছাড়া যাবতীয় পাচার রোধে সীমান্তে টহল বাড়ানো সহ নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।

জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানায়, জয়পুরহাট সদর উপজেলার সীমানত্ম এলাকা খুবই অল্প। পাচার রোধে মঙ্গলবাড়ীতে বিজিবি ক্যাম্পের পাশাপাশি একটি পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে। এ সীমান্তে কখনও কখনও ভারতীয় শাড়ী-কাপড়, সার, কসমেটিক্স পাচার হয়ে আসলেও তা পুলিশের হাতে ধরা পরে। তবে এই সীমান্ত পথে কোন মাদক পাচার হয় না ।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/এস এম শফিকুল ইসলাম/জয়পুরহাট

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here