ষ্টাফ রিপোর্টার :: আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেছেন, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় রাজধানীসহ দেশে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মসজিদে সাদা পোশাকে পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের (এসবি) একজন করে সদস্য থাকবে। তারা ইমামরা তাদের বক্তব্য ও খুতবায় জঙ্গিদের নিয়ে কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে কিনা তা নজরদারি করবে। যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদের পক্ষে ভুল ব্যাখা ও উসকানি দেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শনিবার সকালে পুলিশ সদর দপ্তরে ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলামের ভূমিকা’ শীর্ষক মাশায়েখ-ওলামাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, কোথাও কোথাও ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যুবকদের জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের বোঝানো হচ্ছে যে মানুষ হত্যা করলে বেহেশতে যাওয়া যাবে। আসলে ইসলাম ও জঙ্গিবাদ এক বিষয় নয়। জঙ্গিবাদ দেশ ও ইসলামের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি। তাই জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বন্ধ করা প্রয়োজন।
এ ধরনের কাজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা উসকানি দিচ্ছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে হত্যার কোনো স্থান নাই। তারা কোরানের আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে, আয়াতের খ-িত অংশ ব্যাখ্যা করছে।
ওলামা-মাশায়েখদের ওয়াজ মাহফিল বা বয়ানে জঙ্গি কর্মকা-ের বিরুদ্ধে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, ইসলামের আদর্শ, সত্যিকার দর্শন সবার মাঝে প্রচার করতে হবে। ধর্মের নামে যারা জঙ্গিবাদের কথা বলবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।
শহীদুল হক বলেন, যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত তাদের সৎ সাহস নেই। এ কারণে তারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করছে। এদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা প্রয়োজন। প্রতিটি জঙ্গি হামলার ঘটনার বিচার হচ্ছে। সব জঙ্গিবিষয়ক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। ২১ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ হয়েছে। দ্রুত সব মামলার নিষ্পত্তি হোক এটাই তারা প্রত্যাশা করেন।
এ সময় পিস টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে দাবি জানান ওলামারা। তাঁরা অভিযোগ করেন, এই চ্যানেলটি ইসলামবিরোধী তথ্য প্রচার করছে।
এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, জঙ্গিবাদী প্রচার চালালে তা তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে?। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা মনে করেন চ্যানেলটি যদি জঙ্গিবাদী প্রচার চালায় তাহলে তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
আলোচনা সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হকের সঙ্গে অংশ নেন ৩৫টি আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিবেরা। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের দুজন শিক্ষকও ছিলেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ সভা চলে।
ওলামা ও ইমামরা বলেন, ওয়াহিবি, জাহাবি, সালাফি, মওদুদবাদী হিযবুত তাহরীর সব একই গোষ্ঠী এবং তারা জঙ্গি কর্মকা-ে জড়িত। তাদের মোটিভেট করতে হবে। প্রয়োজনে তারা কী চায় তা নিয়ে সরাসরি বসতে হবে।
শহীদুল হক বলেন, এখন থেকে ওয়াজ মাহফিল করতে হলে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আর ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রেকর্ড করতে হবে। তিনি বলেন, তাদের (আলেম-ইমাম) সাহায্যে জঙ্গিবাদ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে চায় পুলিশ। তিনি খুতবায় জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার রাখার আহ্বান জানান।
শহীদুল হক আরো বলেন, মসজিদের ইমামদের তালিকা করতে হবে। মুজাহিদের ফাঁসির দিন অনেক মসজিদে দোয়া ও কান্নাকাটি হয়েছে। ইমামদের তালিকা পুলিশের কাছে থাকলে তাদের চিহ্নিত করা যেত।
সভায় উপস্থিত পুলিশের বিশেষ শাখাপ্রধান অতিরিক্ত আইজি জাবেদ পাটেয়ারী বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করে যাবে পুলিশ। ইসলামের অপব্যাখ্যা করে যুবসমা?জকে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। তাদের ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে কাউন্টার দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে তিন লাখেরও বেশি মসজিদ, মাদ্রাসা আছে। সেখানে একজন করে কনস্টেবল দেয়ার মতো লোকবল নেই পুলিশের।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যারা উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারাই জঙ্গিবাদ চালাচ্ছে। মওলানা ফারুকী, মওলানা খিজির খান এবং গোপীবাগের পীরের বাসায় ৬ খুনের মামলা বেশ অগ্রগতি হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খিজির খানের বাসা থেকে লুট হওয়া মালামাল টাঙ্গাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর মসজিদগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আলেম-ওলামাদের সঙ্গে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মতবিনিময় করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সভায় মওলানা আব্দুস সালাম বলেন, জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। জঙ্গিবাদ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একের পর আলেম-ওলামা খুন হচ্ছে। এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তালিকা তৈরি করা উচিত। গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের পৃথক কারাগারে রাখা উচিত। তা না হলে জঙ্গিরা কারাগারের ভেতরেও জঙ্গিবাদের পক্ষে প্রচারণা চালানোর সুযোগ পাবে। মাদ্রাসা বোর্ড এখনো জঙ্গি ও রাজাকার মুক্ত হয়নি। এখানে সবার দৃষ্টি দিতে হবে।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নর গোলাম ম?াওলা নকশবন্দী বলেন, জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা যুক্ত তারাই বোমা মারছে। মসজিদের ইমামদের খুতবা রেকর্ড করা ও তাদের নামের তালিকা করা উচিত। তাহলেই সরকারবিরোধী ও জঙ্গিবাদের পক্ষে প্রচারণা বন্ধ হবে।
আহলে সুন্নত আল-জামায়াতের সভাপতি সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেরী বলেন, সারাদেশে হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যাও অনেক। কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার মাধ্যমে সারাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে। এসব মাদ্রাসা গুরুত্বের সঙ্গে মনিটরিং করা উচিত।