কন্যাশিশু দিবস ২০১৫এমএ মামুন :: বিয়ে নয়, সুন্দর শৈশব শিশুর অধিকার। আসুন বাল্যবিবাহ কে না বলি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন থাকলেও সঠিক প্রয়োগ নেই সমাজে। বিয়ে হচ্ছে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান, যা প্রতিটা প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের একটি অনন্দঘন ও স্মরনীয় অনুষ্ঠান।

কিন্তু বাল্যবিবাহে সে রকম কিছুই ঘটে না। বাল্যবিবাহ কোন আনন্দের বার্তা অনে না,বরং আনে বেদনা আর সর্বনাশা। কিছু ক্ষেত্রে বিয়ের পর করনীয় সম্পর্কে পরিস্কার থাকে না। এ অবস্থায় সংসায় শুরু হলে বিপর্যয়ের মুখোমুখি পড়ে। শারীরিক ও মানসিক ভাবে বেড়ে উঠার আগে স্মতি বহুল শৈশবের কাহিনীর ইতিঘটে। মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হয়ে পড়ে।

ফলে এক প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ ও দূর্দশাগ্রস্থ দাম্পত্য জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। বাল্যবিবাহ বে-আইনি হলেও আমাদের দেশে সামাজিক ভাবে অনুমোদিত। ফলে আইন থাকলেও অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেদে এর প্রভাব বেশি।

২০১১সালের ইউএনএফপিএ কর্তৃক একটি প্রতিবেদনে যে কয়টি দেশে উচ্চমাত্রায় বাল্যবিবাহ হয় তার মধ্যে বাংলাদেশ ৩য় তম।

সামপ্রতিক সাতক্ষীরার বেশকিছু উপজেলাতে বাল্যবিবাহ বেড়েই চলেছে। গরীব পরিবারের কন্যার জন্য কোন প্রস্তাব এলে অপেক্ষা না করে পরিবার সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলে। খুব বেশি যাচাই বাচায় না করে কন্যার অমতে বাল্যবিবাহ দেয়া হয় ।

একদিকে বাল্যবিবাহ দেয়া হচ্ছে অন্যদিকে বিয়ের সাথে দেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা ও জিনিষ পত্র। বাল্যবিবাহ এক অপরাধ অন্যদিকে যৌতুক আবারও একটি অপরাধের সৃষ্টি করছে। সাথে সাথে পরিবারে প্রবেশ করা মাত্র সংসারের দায়ভার গ্রহন করে অল্পদিনে সন্তান ধারণে মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যহানী ঘটে। এসব বিষয়ে জানার পরেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যাক্তিরা বিয়ে দিতে আর্থিক ও সার্বিক সহযোগীতা করেন। কোন রকম প্রতিরোধে এগিয়ে আসলে হুমকি-ধামকি ছাড়া আরো অনেক কিছু প্রভাব পড়ে তার উপর।

তাছাড়া বর্তমানে দালাল, অস্বাধু ব্যক্তিদের খপ্পরে পরে জন্মসনদ নকল ও কোটের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ দিয়ে আসছে। নষ্ট করে দিচ্ছে তাদের শৈশব-কৌশর লেখা-পড়া, আনন্দ-হাসি। এখন জনমনে প্রশ্ন উঠেছে সরকারসহ বহু এনজিও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বাল্যবিবাহের তথ্য খাকার সত্বেও পদক্ষেপ নেন না। এটা কী তাদের ব্যার্থতা না জনপ্রিয়তা কমে যাবে বলে বাধা দেন না।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে বলা হয়েছে ১৮ বছরের কম নারী ও ২১ বছরের কম পুরুষের বিয়ে প্রদান করা হলে ১ মাস প্রর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান থাকলেও বাস্তবায়ন নেই। এদেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ১৯২৯ সালের আইন চালু করা হয়। যা এখনো কার্যকরী। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে (১৯৮৪তে সংশোধিত)শিশু বিবাহকারীর,বাল্যবিবাহ সম্পন্নকারীর এবং সংশ্লিষ্ট পিতা মাতার বা অভিভাবকদের শাস্তির বিধান রয়েছে।

তাই সংবিধানে শুধু আইন থাকলে চলবে না, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভুমিকা দরকার। তাহলে দেশ থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধ হবে, পাবে শিশু কন্য নতুন জীবন। তাই সকলের কাছে প্রত্যাশা যে সচেতনতা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের কঠোর আইন ও বাস্তবায়ন বাংলাদেশে একান্ত জরুরি।

লেখক: এমএ মামুন, সহ-সভাপতি ছাত্র সাংবাদিক ইউনিয়ন, দেবহাটা। ইমেইল: mamamun.news@gmail.com
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here