ষ্টাফ রিপোর্টার :: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিপ্রায়ে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকার ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেস্কের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক শেষে লন্ডনে পৌঁছেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ওয়াশিংটনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাঙ্ক ও লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাতঃরাশ বৈঠক হয় বলে জানা গেছে।
দলের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সহকারী মহাসচিব (রাজনীতি) মিরোস্লাভ জেনকারের সঙ্গে বৈঠকে মির্জা ফখরুল বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য জাতিসংঘের সহায়তা চান।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে সংলাপে মধ্যস্থতা এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবেদন জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচনের চিত্র ও বাংলাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পীড়নের কিছু ডক্যুমেন্ট হস্তান্তর করেন।
সেসব ডকুমেন্টে বর্তমান সরকার কিভাবে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, অনিয়ম করে তার কৌশল ও চিত্র তুলে ধরা হয়। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পত্রিকার খবর ও ছবিও উপস্থাপন করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার বিচার প্রক্রিয়া, তার মুক্তিপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়া এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, মামলা ও গ্রেফতার হয়রানির বিষয়গুলোও অবহিত করা হয়।
বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে বিএনপির একজন নেতা জানান, মিরোস্লাভ জেনকার তাদের বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন এবং একটি ইতিবাচক ফলাফল আসবে বলে আশ্বাস দেন।
বিএনপির প্রতিনিধিরা মিরোস্লাভ জেনকারকে অবহিত করেন যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে দুই দফা চিঠি দিয়ে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়েছিলেন।
একই বছরের ২৩ আগস্ট দুই নেত্রীর সঙ্গে সরাসরি টেলিফোন করে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন বান কি মুন। তারই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও সংস্থাটির মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো সে সময় তিনবার বাংলাদেশ সফর করে প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
তারানকোর মধ্যস্থতায় ২০১৪ সালের ১০ ও ১১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা কয়েকবার বৈঠকেও বসেন। তবে সে সময় আওয়ামী লীগ তাদের অঙ্গীকারগুলোকে স্থির থাকেনি বলে অভিযোগ করেন বিএনপি প্রতিনিধিরা।
এই প্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল আবেদন করেন যে, আগামী নির্বাচনে সন্দেহ অবিশ্বাস ও সংঘাত এড়াতে যেন জাতিসংঘ নিজেদের তত্ত্বাবধান করে। বৈঠকে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও  তাবিথ আওয়াল ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে, শুক্রবার সকালে ওয়াশিংটন ডিসিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক দফতরের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে এ বৈঠক হয় মির্জা ফখরুলের। এ সময় বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরার পর আসন্ন নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ লোকজনের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা চান মির্জা ফখরুল।
এ বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র এদিন বিকালে সাংবাদিকদের জানান, আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতায় সবসময়ই বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। এর বেশি আর কোন তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওই মুখপাত্র।
জাতিসংঘ ও ওয়াশিংটনে বৈঠকের পর লন্ডনের উদ্দেশে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন মির্জা ফখরুল। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮ টায় লন্ডনে পৌঁছান ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার তার দেশে ফেরার কথা।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here