নূসরাত ইমা নূসরাত ইমা ::

বিরোধী দল নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকো এর মৃত্যুতে সমবেদনা জানাই । এক জন মায়ের পক্ষে এরচে মর্মান্তিক খবর আর কিছুই হতে পারেনা।এই দুঃখের সময় তার রাজনৈতিক বিরোধী বেগম জিয়া কে সমবেদনা জানতে তার কার্যালয় পর্যন্ত গিয়েছিলেন তার জন্য ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রী কে ।

প্রধানমন্ত্রী একজন মা হিসেবে আর একজন মা কে সান্তনা দিতে গিয়েছিলেন বলেই আমরা জানি। যেমনটা খালেদা জিয়া করেছিলেন জনাব ওয়াজেদের মৃত্যুর পর। জনাব ওয়াজেদের মৃত্যুর পর একজন স্বামী হারা নারী গিয়েছিলেন আর একজন সদ্য স্বামী হারা নারীকে সান্তনা দিতে। এটি প্রায় ৬ বছর আগের ঘটনা।

কিন্তু আজকে আর ঐ দিনের সাথে পার্থক্য এই যে সেদিন বেগম জিয়া কে কেউ অমর্যাদা করে গেইটের বাইরে থেকে বিদায় করে দেয়নি। আজকে বিএনপি যা করলো সেটা শুধু রাজনৈতিক ভাবে নিন্দনীয় তা নয়। সামাজিকভাবেও চরম নিন্দনীয়।

কেউ মারা গেলে শত্রু যদি সমবেদনা জানাতে আসে তখন তাকেও ঘরে ঢুকতে দেয়া হয়।আজ যখন দেশের মানুষ জানতে পারলো রাজনীতির এই সংকটময় অবস্থায় দেশের দুই নেতা অন্তত কিছুটা সময়ের জন্য মুখোমুখি হওয়ার এবং কথা বলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তখন কিছুটা হলেও আশাবাদী হয়েছিল। আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যার যেখানে সুযোগ হয়েছে সে তখনি এই ইতিবাচক ব্যপারটি দেখার জন্যে টিভির সামনে বসে গিয়েছিল। সবাই অপেক্ষায় ছিল তাদের দুই নেতার সাক্ষাতের।

প্রথমে মানুষ হয়তো বিশ্বাস করতে পারছিলো না। কিন্তু যখন সবাই ব্যপারটা বিশ্বাস করলো ঠিক তখন বিএনপি থেকে বক্তব্য আসলো বেগম জিয়া কে ইঞ্জেকসান দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। যদিয়ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। তবুও ধরে নিলাম এটা সত্যি।

তাহলে প্রধানমন্ত্রী যখন চলেই আসলেন তখন কি এমন একজন মানুষও ছিলেন না যিনি গেট খুলে প্রধানমন্ত্রী কে ভেতরে নিয়ে যেতে পারেন? বিএনপির স্থায়ি কমিটির যে তিন চার জন সদস্য ছিলেন তাদের মাঝে কি এই ভদ্রতাবোধ টুকু নেই যিনি একজন মানুষকে বাড়ির ভেতরে সম্মানের সাথে নিয়ে যেতে পারেন?

বিএনপি কি এই শোক নিয়ে রাজনীতি না করে পারতো না? তারা যে ব্যবহার করে পুরোপুরি উল্টো চাল দিয়ে জনমনে তাদের জন্য বিরক্তির উদ্রেক করেছে সেটা বুঝার মতো রাজনীতি জ্ঞান কি তাদের কারু নেই? তারা কি ভাবছে প্রতিদিন মানুষ পুড়িয়ে এত সহজে ক্ষমতায় বসতে পারবে?

এখন তো মনে হচ্ছে যতোই সংলাপ-সংলাপ করুক তারা সংলাপ চায়ই না। যদি চাইতো তাহলে আজকের এই প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিরোধী দল নেতার দেখা হওয়াটা কে সুযোগ হিসেবে নিতো ।

মানছি এই শোকাবহ পরিবেশে রাজনৈতিক আলাপ হতো না।কিন্তু অবস্থার কিছুটা তো উন্নতি হতো।এখন দেশে যে পরিস্থিতি তাতে এই দুই নেতার দেখা-কথা হওয়াই যে কতো বড় একটা স্বস্তির ব্যপার সেটা তারা বুঝেও এড়িয়ে গেলেন! বলতে পারি ইচ্ছাকৃত ভাবেই এড়িয়ে গেলো বিএনপি!

জানি না আমাদের দেশের রাজনৈতিকগণ কবে শিষ্টাচার শিখবেন? দুঃখজনক ব্যাপার হল এখন আমাদের দেশের রাজনীতি এতোটাই নিন্ম পর্যায়ে গিয়েছে যে মানুষের মৃত্যুই এখন রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার। সাধারণ মানুষের মৃত্যুর কথা বাদই দিলাম। নিজের ছেলের মৃত্যুটা কেও রাজনীতির বাইরে রাখলেন না বিএনপি নেত্রী।

জানিনা কে বা কারা বিরোধী নেতার পরামর্শদাতা কিন্তু তারা যে আজ খুব ভুল একটা পরামর্শ তাকে দিলেন, সেই ভুল পরামর্শ গ্রহন করে বর্তমান অবস্থার যে আরও ঘোলাটে করলেন এবং সেই ভুলের মাশুল যে এই দেশের সাধারণ মানুষ কে আর কতদিন দিতে হবে সেটা ভেবেই হতাশ এবং সঙ্কিত বোধ করছি!

লেখক: haider_nusrat@yahoo.com

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here