স্টাফ রিপোর্টার :: বর্তমান সময়ে আলোচিত চিকোনগুনিয়া ও ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগ প্রতিরোধের টিকা নেই। তাই সচেতনতার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমিত রোগটি প্রতিরোধ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানী মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে চিকোনগুনিয়া ও ডেঙ্গুজ্বর বিষয়ে সাংবাদিক অবহিতকরণ সভায় তারা এ পরামর্শ দেন।
সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ডা. সামিয়া জামান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিকোনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত জ্বর যা আক্রান্ত মশার কামড়ে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এ রোগটি ডেঙ্গু, জিকার মতোই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া এডিস ইজিপ্টি, এডিস এলবোপিকটাস মশার মাধ্যমে ছাড়ায়। এসব মশার শরীরে ও পায়ে সাদা কালো ও ডোরাকাটা দাগ থাকে। সাধারণত ভোর, দিনের বেলা এবং সন্ধ্যায় এরা কামড়ায়। আর ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মাধ্যমে ও ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে অসাবধানতাবশত এটি ছড়াতে পারে। এ ছাড়া হঠাৎ ভারী বর্ষণ ও বর্ষা মৌসুমে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকোনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।
চিকোনগুনিয়া রোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, এ রোগের উপসর্গ হলো হঠাৎ জ্বর আসা, প্রচন্ড গিটে গিটে ব্যথা, প্রচন্ড মাথা ব্যথা, শরীরে ঠান্ডা অনুভূতি, বমিবমি ভাব, চামড়ায় লালচে দানা ও মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়। চিকিৎসার বিষয়ে তিনি জানান, এ রোগের ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক, এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে জ্বর ও ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। গিটের ব্যথায় সেক দেয়া যাবে। তবে জ্বর যদি ৫ দিনের মধ্যে ভালো না হয়। বমি হলে, রোগী বোধশূন্য হলে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত বা গর্ভবতী হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে। আর এর বাইরে যদি স্বাভাবিক জ্বর হয়, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি একটি নতুন রোগ বলে গ্রামপর্যায়ে অনেক চিকিৎসকই জানেন না। তবে সেখানে প্রচার করা হচ্ছে। চিকোনগুনিয়া টোগা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাস। মশাবাহিত হবার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলা হয়। আর এক্ষেত্রে ডেঙ্গু জিকা ভাইরাস একই মশার মাধ্যমে ছড়ায়, এমনকি রোগের লক্ষণও একই রকম।
উল্লেখ্য, চিকোনগুনিয়া রোগটি ১৯৫২ সালে আফ্রিকায় প্রথম দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার এবং ইন্দোনেশিয়ায় এর বিস্তার লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে রোগটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে এর পর দু-একটি বিচ্ছিন্ন রোগী ছাড়া বড় ধরনের বিস্তার দেশে লক্ষ করা যায়নি। আর বর্ষার পরপর মশার উপদ্রব বেশি হলে এটির বিস্তার দেখা যায়।