2016-07-02-17-Sena-02-07-16নিউজ ডেস্ক:গুলশানের আর্টিজান রেস্তরাঁয় বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় অনেক প্রশ্নেরই জবাব মিলছে না। হামলাকারী বন্দুকধারীরা কোত্থেকে এলো, এ দেশে কোথায় তারা জড়ো হয়েছিল, নিজেদের মধ্যে কিভাবে যোগাযোগ হয়েছে, ভেতরে বন্দীদের হত্যার পরও বন্দুকধারীরা কেন সেখানে নির্বিঘ্নে বসেছিল, বন্দীদের কখন হত্যা করা হলো প্রভৃতি নানা প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।–নয়াদিগন্ত।

কতজন জঙ্গি এই হামলায় অংশ নিয়েছিল তা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে প্রশ্নের। বন্দুকধারীরা তাদের কোনো দাবি আদায়ের জন্য এই হামলা চালাল তা এখনো অজানা। এ দিকে এই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে ঘটনার পরদিন ভোরে। আর একজন হলেন ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত করিম রেজা। উদ্ধারের পর তাকে সন্দেহভাজন মনে হওয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে।

এত নিরাপত্তার মধ্যে কিভাবে ঢুকল বন্দুকধারীরা? : গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় এত নিরাপত্তার মধ্যে কিভাবে বন্দুকধারীরা নির্বিঘেœ ওই রেস্তরাঁয় প্রবেশ করল তা এখন সবার প্রশ্ন। গুলশান, বনানী ও বারিধারার মোড়ে মোড়ে আছে সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তা চৌকি, পুলিশের চেকপোস্ট, টহল পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যেও কিভাবে বন্দুকধারীরা কোনো বাধা ছাড়াই ওই রেস্তরাঁ পর্যন্ত পৌঁছল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ গোয়েন্দারা।

এত কিছুর বাইরেও এই এলাকার নিরাপত্তার জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা মোতায়েন থাকে। এর বাইরে বিদেশীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আলাদা একটি ইউনিট কাজ করে থাকে। কোনো কিছুই ঠেকাতে পারেনি বন্দুকধারীদের।

দীর্ঘ দিন এরা কোথায় ছিল? : যে ক’জন বন্দুকধারী শনাক্ত হয়েছে তারা সবাই পরিবার থেকে দীর্ঘ দিন বিচ্ছিন্ন। রোহান ইমতিয়াজের সাথে পরিবারের যোগাযোগ ছিল না এক বছর ধরে। তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা ইমতিয়াজ খান বাবুল ফেসবুকে ছেলেকে ফিরে আসার জন্য আকুতিও জানিয়েছিলেন। মালয়েশিয়া মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিব্রাস ইসলাম ফেসবুকে সক্রিয়া থাকলেও গত জানুয়ারি থেকে সে ফেসবুকে নিষ্ক্রিয়। ধারণা করা হচ্ছে জঙ্গি তৎপরতায় ব্যস্ত হওয়ার পরও সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় থাকে।

কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা? : সাইট ইন্টেলিজেন্স এবং আইএস’র নিজস্ব বার্তা সংস্থা আমাক অস্ত্রধারীদের যে ছবি ছেপেছে তাতে দেখা গেছে তারা কালো পোশাকে। আইএস সাধারণ এই কালো পোশাকই ব্যবহার করে থাকে। এ ছাড়া তাদের আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রসহ হাস্যোজ্জ্ব¡ল দেখা গেছে। মনে হচ্ছে ওটি কোনো ট্রেনিং ক্যাম্প। প্রশ্ন জেগেছে অস্ত্র হাতে তারা এ দেশে বসেই ছবি তুলেছে, না আইএস নিয়ন্ত্রিত কোনো এলাকার ছবি এটি? তারা কি দেশের বাইরে কোথাও গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে?

ঢাকায় তারা কোথায় জড়ো হয়েছিল? : প্রশ্ন জেগেছে হামলার আগ মুহূর্তে ঢাকায় তারা কোথায় জড়ো হয়েছিল? ঘটনার একদিন আগে কানাডা থেকে একজন বাংলাদেশে এসেছে। সে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তারা এসে কোথায় জড়ো হয়েছিল। প্রশ্ন জেগেছে তারা যে মোবাইল ব্যবহার করেছে তার সিম নিবন্ধিত কি না? নিবন্ধিত সিম হলে তারা কিভাবে এই সিম ব্যবহার করে নির্বিঘেœ এত বড় নৃশংস হামলা চালাল?

হত্যার পরও কেন এত সময় নিলো? : আইজিপি বলেছেন, হামলার ২০ মিনিটের মধ্যেই বিদেশীদের হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। প্রশ্ন জেগেছে হত্যার পরও হামলাকারীরা কেন নির্বিঘেœ সকাল পর্যন্ত বসেছিল? তারা কেন বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। কমান্ডোরা যখন অভিযান চালাল তখন তারা কেন ভেতরে নীরব ছিল? একটি সূত্র বলেছে, অনেকের ধারণাÑ হত্যার পরও তারা সময় নিচ্ছিল যাতে বিষয়টি ভালোভাবে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় উঠে আসে। বাংলাদেশে যে আইএস আছে তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষা করছিল হামলাকারীরা।

হামলাকারী আসলে কতজন? : প্রশ্ন জেগেছে হামলাকারী আসলে কতজন ছিল। অপারেশন শেষে দাবি করা হয়েছিল ছয় বন্দুকধারী নিহত হয়েছে। পরে দেখা গেল ওর মধ্যে একজন ওই রেস্তরাঁরই শেফ। এদিকে পুলিশের আইজিপি বলেছেন, ঘটনার পর তারা দু’জনকে গ্রেফতার করেছেন। ঢাকার কমিশনারও বলেছেন, তারা দুজনকে গ্রেফতার করেছেন এবং উদ্ধারের পর ডিবি কার্যালয়ে যে ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তার মধ্যে একজনকে সন্দেহভাজন হওয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে। এ দিকে আইএস-এর নিজস্ব বার্তা সংস্থা আমাক এ পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

২০ মিনিটে ১৭ জনের গলা কাটা যায় কি না? : আইজিপি বলেছেন, হামলার ২০ মিনিটের মধ্যেই বিদেশীদের হত্যা করা হয়। প্রশ্ন জেগেছে ২০ মিনিটের মধ্যে গলা কেটে ১৭ জনকে হত্যা করা যায় কি না?

বন্দুকধারীদের টার্গেট কেন আর্টিজান? : গুলশান-বনানীসহ অভিজাত এলাকায় অনেক রেস্তরাঁই রয়েছে যেখানে বিদেশীদের যাতায়াত রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে অনেক হোটেল রেস্তরাঁয় বিদেশীর ভিড় জমে যায়। প্রশ্ন জেগেছে তাহলে বন্দুকধারীরা কেন ওই রেস্তরাঁ টার্গেট করল? কেন সেখানে হামলা চালাল?

আফতাব গ্রুপের এমডির ছেলে আটক : আর্টিজানে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় রেস্তোরাঁ থেকে আটক হয়েছে তাহমিদ হাসিব খান নামে এক কানাডা প্রবাসী যুবক। তাহমিদ আফতাব বহুমুখী পোল্ট্রি ফিডের এমডি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে। সে কানাডা প্রবাসী বলে জানা যায়। ঘটনার এক দিন আগে সে ঢাকায় আসে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ গোয়েন্দারা। রেস্তোরাঁয় কমান্ডোদের অভিযান শেষে সে রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে এসেছিল। এছাড়া নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকসহ আরো দু’জন আটক আছে। এদিকে আটক রেস্তোরাঁ কর্মচারী শাওনকে গতরাতে পুলিশ হেফাজতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

কোন দাবি নিয়ে হামলা চালালো বন্দুকধারীরা? : সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো কোন দাবি নিয়ে এই বন্দুকধারীরা হামলা চালাল? কেন তারা নিজেদের জীবন শেষ করল? সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেখানেই বন্দুকধারীরা এভাবে হামলা চালায়, কাউকে বন্দী করে- তার একটি উদ্দেশ্য থাকে। বন্দুকধারীরা তাদের দাবি জানায়। কিন্তু এখানে কোনো দাবি করেনি বন্দুকধারীরা। ঢুকেই যাকে যে অবস্থায় পেয়েছে মেরে দিয়েছে। প্রশ্ন জেগেছে তাদের টার্গেটই কি ছিল এভাবে বিদেশীদের হত্যা করা? না এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছেন, যারা বেঁচে আছে এমন আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেই এমন তথ্য মিলতে পারে। তবে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আটককৃতরা আহত ও অসুস্থ অবস্থায় এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। সুস্থ হয়ে ফিরলেই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here