021504Hasnat_ঢাকা: গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিতে শুরু করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম। গুলশানে হামলার রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে দেশি-বিদেশি লোকজনকে জিম্মি করে হত্যার ভিডিওচিত্র বাইরে পাঠানোর কাজে জঙ্গিরা যে বিশেষ মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহার করেছিল সেটি তাঁর ছিল বলে হাসনাত স্বীকার করেছেন। তবে তাঁর দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে তিনি ওই কাজ করেননি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি যেসব তথ্য দিতে শুরু করেছেন তাতে গুলশানের ওই জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা জানান, হাসনাত করিম বলছেন, তিনি সেই রাতে জঙ্গিদের খুব কাছাকাছি ছিলেন। জঙ্গিরা হলি আর্টিজানে কিভাবে ঢোকে, কিভাবে দেশি-বেদেশি লোকজনকে জিম্মি করে এবং তাঁর সামনেই ২০ জনকে হত্যা করে সেসব ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছেন তিনি। তবে তিনি দাবি করেন, এসবের কিছুই তিনি আগে থেকে জানতেন না। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হাসনাত করিম এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য দিয়েছেন এর মধ্যে অনেক নতুনত্ব আছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই তিনি জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকার কথা অস্বীকার করেন। সেই সঙ্গে সেই রাতে তাঁর হাতে যে অস্ত্রটি ছিল তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তবে সেই অস্ত্র জঙ্গিরা অনেকটা তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে নিতে বাধ্য করেছিল বলে তিনি দাবি করছেন।

আরেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, হাসনাত করিম রিমান্ডে যেসব তথ্য দিচ্ছেন তা কতটুকু সত্য সেটাও যাচাই-বাছাই চলছে। এ ছাড়া হেফাজতে কানাডাপ্রবাসী তাহমিদ হাসিব খানকেও নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে তিনি বারবারই বলছেন, তিনি পরিস্থিতির শিকার।

সূত্র মতে, প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে হাসনাত করিম বেশির ভাগ প্রশ্নেরই ঠিকমতো জবাব দেননি। দ্বিতীয় দিনে দুজনই অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তবে তাঁরা যা বলছেন তার অনেক তথ্য আগেই গোয়েন্দাদের জানা হয়ে গেছে।

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে হাসনাত রেজা করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে রিমান্ডে (জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজত) নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিট। হাসনাত ও তাহমিদকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১ জুলাই রাতে এই দুজনও হলি আর্টিজানে ছিলেন।

সিটি ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গুলশানের ঘটনায় হাসনাত করিমের কাছ থেকে তাঁদের অনেক কিছু জানার আছে। কারণ সেই রাতে হাসনাত করিমের সঙ্গে জঙ্গিদের যেভাবে কাছাকাছি দেখা গেছে আর কাউকে ততটা দেখা যায়নি। তাই হাসনাত করিমের তথ্যে এ ঘটনার অনেক গোপন রহস্য বের হতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন।

গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের ২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর রোডে হলি আর্টিজান বেকারি এবং ওকিচেন রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল জঙ্গিরা। প্রাথমিক অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারান পুলিশের দুই কর্মকর্তা। জিম্মিদের উদ্ধার করতে পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন। আহত একজন চিকিৎ্সাধীন অবস্থায় পরে হাসপাতালে মারা যায়। অভিযান শেষ হওয়ার আগেই ভোরের দিকে হাসনাত করিম রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে আসেন সপরিবারে। হাসনাত ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ মোট ৩২ জন উদ্ধার হন হলি আর্টিজান থেকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন তাহমিদও। ৩২ জনকেই পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর অন্যরা ছাড়া পেলেও হাসনাত ও তাহমিদ আর বাড়ি ফেরেননি বলে এত দিন দাবি করে আসছিল পরিবার।

গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, গুলশানে হামলার পরদিন হাসনাত, তাহমিদসহ ৩২ জনকে হেফাজতে নিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তবে সেই সময় জিজ্ঞাসাবাদে হাসনাত ও তাহমিদের কথাবার্তা এবং আচরণে সন্দেহ দেখা দিলে তাঁদের নজরদারির মধ্যে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রাখেন গোয়েন্দারা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here