পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিন গুগল বুধবার ঢাকার রাস্তায় ‘গুগল বাস বাংলাদেশ প্রকল্প’ চালু করেছে। মূলত শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতেই বিশ্বের দেশে দেশে এ সেবার সম্প্রসারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশ ভারতেও গুগল বাস সেবা চালু হয় ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে। তার ঠিক পাঁচ বছর পর গতকাল বুধবার বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করলো গুগল বাস (ঢাকা মেট্রো-স ১১-০২৪১)। গুগল বাসে কী আছে তা এক নজরে জেনে নেওয়া যাক।

গুগল বাসে যা ভালো
গুগল বাস দেখতে অনেকটা ৫২ সিটের বাসের মতো, বেশ দীর্ঘ। অনেকটা ভলভো বাসের মতোও। বিশাল এই বাসটার সব আকর্ষণ ভেতরে। তবে বাসের বাইরের অংশটা সাদা রঙের। সেই সাদার মাঝে ফুটে রয়েছে গুগল বাস লোগোসহ ছবি। পাশে লেখা গুগল বাস বাংলাদেশ পাওয়ারড বাই গুগল। বাসের সামনের স্ক্রিনের ওপর লেখা গুগল বাস বাংলাদেশ। বাসের ভেতরে রয়েছে মাত্র তিনটি আসন। যেহেতু এটি যাত্রী পরিবহন করার কোনও বাস নয়, তাই সিট কয়টি সেটা নিয়ে মাথা না ঘামালেও চলবে। মাথা ঘামানোর বিষয় রয়েছে অন্য জায়গায়।

বাসটির ভেতরে রয়েছে আলোর খেলা। লেজার দিয়ে আলোকে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কমলা রঙের আলো (কারো কাছে হলুদও মনে হতে পারে) বেশ চোখ কাড়ে। বাসের ভেতরের দেওয়ালে বা গায়ে রয়েছে চার ধরনের রং। এক পাশে রয়েছে হলুদ এবং সবুজ এবং অন্য পাশে রয়েছে গাঢ় লাল ও নীল রং। বাসের ভেতরটা ঝাঁ চকচকে। স্টেইলেস স্টিলে মোড়ানো। মেঝেটাও তাই। এ কারণে আলোর খেলা জমে ওঠে। দেওয়ালে ঝোলানো রয়েছে ৮টি মনিটর। প্রথম দেখায় ওগুলোকে টেলিভিশন ভুল হতে পারে যে কারো। আসলে ওগুলো টাচ স্ক্রিন মনিটর। এসবে রয়েছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ। শিক্ষার্থীরা বা যে কেউ মনিটরের স্পর্শকাতর পর্দা ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঢুকে যেতে পারেন ভার্চুয়াল দুনিয়ায়।

বাসটিতে রয়েছে থ্রিজি ইন্টারনেট সংযোগসহ ও উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেম। বাসের ভেতরেই অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা যা শিখবে তা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এমন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বা মোবাইল ফোনে চর্চা করারও সুযোগ পাবে। এ ছাড়াও ভবিষ্যতে গুগল বাসে যুক্ত হবে এমন স্মার্টফোন এবং ট্যাব দিয়ে গুগল গ্লাস, গুগল ড্রাইভ, গুগল কমিউনিটিস এবং গুগল হ্যাংআউট বিষয়েও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানা গেল।

গুগল বাসটি আগামী এক বছরে বাংলাদেশের ৩৫টি স্থানে ৫০০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেটবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করে শিক্ষার্থীরা যাতে নিজ নিজ প্রচেষ্টায় ব্যবসায় ও কোনো প্রকল্প তৈরি ও পরিচালনার কলাকৌশল জানতে পারেন সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবে গুগল। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি শিগগিরই গুগল বাস চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল—এই ছয়টি বিভাগীয় শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরগুলোর নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছাবে।

শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের কলাকৌশল ও উপযোগিতা শেখাতে গুগল বাসের কর্মশালায় একজন প্রশিক্ষক থাকবেন। সেই সঙ্গে তাঁদের গুগলের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা সম্পর্কে ধারণা দেবেন তিনি। গুগলের এসব পণ্য-সেবার মধ্যে রয়েছে—গুগল সার্চ, ক্রোম, ডক্স, ম্যাপস, ইউটিউব, গুগল প্লাস ইত্যাদি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা যা শিখেছেন তা নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় এমন ধরনের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বা মোবাইল ফোনে প্র্যাকটিস বা চর্চা করার সুযোগ পাবেন।

গুগলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুগল বাসের মাধ্যমে ইন্টারনেটবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হবে। শিক্ষার্থীদের গুগলের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ব্যবহারের কলাকৌশল জানাবে গুগল। গুগলের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এমার্জিং মার্কেটসের কান্ট্রি ম্যানেজার জেমস ম্যাকক্লুর জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ তরুণেরাই দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারেন। আমরা মনে করি, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে তাঁরাই ইন্টারনেট কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন।’

গুগল বাসে যা মন্দ
গুগল বাসের ইঞ্জিন চালু হওয়ার সময় মৃদু শব্দ করলেও পরে আর তা মৃদু থাকে না। ক্রমেই তা বাড়তে থাকে। যা নিয়ে প্রথম দিনেই অনেকে অভিযোগ করেছেন। এমন শব্দে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ রক্ষা করা কঠিন হবে বলে উপস্থিত সাংবাদিকরা আলোচনা করেছেন। এছাড়া গুগল বাসে স্থাপিত মনিটরগুলোও বেশ উঁচুতে রাখা হয়েছে। ফলে শিশুদের জন্য নাগাল পাওয়াটাও বেশ কঠিন হবে বলে অনেকে বলছেন। তুলনামূলক মনিটরের সংখ্যা কম। এ সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারেও অনেকে উপস্থিত গুগল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here