খোশ আমদেদ মাহে রামাযানমুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাসুম:: খোশ আমদেদ মাহে রামাযান। রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস মাহে রামাযান। বিশ্ব মুসলিমের প্রিয় মাস মাহে রামাযান। মুসলীম উম্মাহকে ইবাদাতের প্রাণ শক্তি ও তাকওয়া শিক্ষা দেওয়ার জন্য বছর ঘুরে অফুরন্ত রহমতের ভান্ডার নিয়ে হাজির হয়েছে মাহে রামাযান। মাহে রামাযানে অযস্ত্র রহমত বরকত লাভে ধন্য হয় পৃথিবী। মহান আল্লাহর অপার করুনায় মোচন হয় মানুষের পাপ রাশি। মানুষ পায় মুক্তি ও পরিত্রানের কাঙ্খিত সফলতা।

আর এজন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলাআমীন ঘোষনা করেছেন ‘‘হে ইমানদারগণ রোজা তোমাদের উপর ফরজ করা হয়েছে, যেমনি রোজা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, আর এজন্য যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’’ সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রামাযান।

সহানুভূতী, সংযম ও তাকওয়া অর্জনের মাস মাহে রামাযান। রামাযান হচ্ছে, সত্য-মিথ্যার, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী মানবতার মুক্তির একমাত্র দিশারী। মানব জাতীর পরিপূর্ণ জীবন বিধান আল-কুরআন নাযিলের মাস মাহে রামাযান । দীর্ঘ ১ মাস রামাযানের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে প্রতিটি মুসলমান শিক্ষা গ্রহণ করে বাকী ১১ মাস তাদের জীবন কিভাবে পরিচালিত করবে।

‘‘সিয়াম’’ অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা, শুধুমাত্র বৈধ খাদ্য গ্রহণ এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকলেই সিয়াম সাধনা হয় না। সারা বছর একজন মুসলমান স্বাভাবিক নিয়মে সকল প্রকার হালাল এবং বৈধ খাবার গ্রহণ করতে পারলেও রামাযানে দিনের বেলায় রোজার কারণে তাহার জন্য ওইসব হালাল খাবার ও কর্ম অবৈধ হয়ে যায়।

অর্থাৎ ১১ মাসে যা আমাদের জন্য হালাল এবং বৈধ। শুধু মাত্র রোজার কারণে ১ মাস দিনের বেলায় তা অবৈধ হয়ে যায়। তাহলে এবার ভাবুন, শুধুমাত্র রোজার কারনে ১১ মাসের বৈধ কাজগুলোও যেখানে পরিত্যায্য সেখানে অবৈধ কাজগুলোর ব্যাপারে সারা বছর আমাদের কি ভূমিকা হওয়া উচিত। রামাযান মাস মুসলমানদের জন্য সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ সবকিছুর পার্থক্য শিক্ষা দানের মাস।

এ মাসে একজন মুসলমান প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে জীবন গেলেও সে হারাম খাদ্য খাবে না, সুদ-ঘুস-পাপের পথে অর্থ কামাই করবে না। রোজা শিক্ষা দেয় একজন মুসলমান কখনোই অন্যায়, অসত্য, মিথ্যা, জালিয়াতী, দুর্নীতি, সুদ, ঘুস, প্রতারণা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ঠগবাজী খুন, ধর্ষণ, হত্যা, নারী নির্যাতনসহ কোন প্রকার হারাম বা অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত হতে পারে না।

অতএব প্রতি বছর মাহে রামাযান আসে আমাদেরকে সংযম, ত্যাগ ও সহানুভূতির পরম দিক্ষা দিতে। রামাযানে অর্জিত তাকওয়ার গুনে আমরা শুধু রমজান মাস নয় আমরা যেন সারা বছর গরীব-দুঃখী, অসহায়, নিপিড়িত-নির্যাতিত মজলুমানদের কল্যানে নিজেদেরকে নিয়োজিত করি।  দীর্ঘ ১ মাস দিনের বেলায় উপোষ থেকে, রোজা পালন করে, সকল প্রকার অন্যায়, অসত্য পাপাচার ও গুনাহের কাজ থেকে যে নিজেকে বিরত রাখার শিক্ষা গ্রহণ করল না তার পক্ষে রোজা পালনের কোন প্রয়োজন নেই।

রোজা পালনের মাধ্যমে আমরা খোদাভিতী অর্জন করব। সত্য ও ন্যায়ের পথিক হব, সর্বপরি আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এর নির্ধারিত সিরাতুল মুস্তাকীমের পথকে আকড়ে ধরে আমাদের গোটা জীবনকে আমরা কোরান ও হাদিসের আলোকে পরিচালিত করতে পারলেই পবিত্র মাহে রামাযান আমাদের জীবনে সার্থক হবে।

পবিত্র মাহে রামাযানে সিয়াম সাধনায় নিয়োজিত থেকে ব্যক্তি জীবনে আমরা যেন সৎ-মুত্তাকি, পারিবারীক জীবনে কর্তব্যপরায়ন, সামাজিক জীবনে সহানুভূতিশীল ও পরউপকারী, অর্থনৈতিক জীবনে হালাল উপার্যনকারী দানবীর, রাজনৈতিক জীবনে খেলাফত শাসন প্রত্যাশী,আর্ন্তজাতিক জীবনে ইসলামী ভ্রাত্রিত্য ও সহমর্মি হতে পারি।

সর্বোপরি আমাদের গোটা জীবনকে আমরা যেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রদত্ত ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রদর্শিত সুন্নাহ’র আলোকে পরিচালিত করতে পারি। এই হোক মাহে রামাযানের শিক্ষা। খোশ আমদেদ মাহে রামাযান ।

 

 

লেখক: মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি, ইউনাইটেড নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম। ই-মেইল-rafiqmasum.jpr@gmail.com

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here