রক্তাক্ত জনপদ বলে খ্যাত খুলনায় আবারও প্রতিনিয়ত প্রাণহানী হচ্ছে। রক্ত ঝরছে স্থানীয় রাজনীতিকদের। এ বছরের প্রথম ১০ মাসে খুলনায় সরকারী ও বিরোধী দলের ৬ রাজনীতিক খুন হয়েছে। জেলার তেরখাদা ও দিঘলিয়ায় দু’টি খুনের বদলা নিতে প্রতি পক্ষ মরিয়া হয়ে উঠেছে। নিয়মিত র‌্যাব-পুলিশের পাহারা সত্বেও স্থানীয় রাজনীতিকদের মধ্যে আতংক কাটছে না। পুলিশ বলেছে, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অপরদিকে, স্থানীয় রাজনীতিকরা উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে কাটাচ্ছে। পুলিশের সূত্র বলেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তেরখাদা উপজেলা সদরে শাসকদলের দু’পক্ষের ব্যাপক মহড়া হয়। প্রত্যাকটি ইউনিয়ন পরিষদে শাসক দলের একাধিক প্রার্থী ছিল। আধিপত্য লাভকে কেন্দ্র করে বছরের প্রথমই রক্ত ঝরে তেরখাদা উপজেলা সদরে। ১৯মার্চ প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফকির ইমরান হোসেন। এ হত্যা মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়। ২৫সেপ্টেম্বর পুলিশ শহিদুল ইসলামসহ একাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছে। ছাত্রলীগ নেতা হত্যাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দিন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ১০ফেব্রুয়ারি বটিয়াঘাটা উপজেলার তেতুল তলা গ্রামের জলমা ইউনিয়নের যুবলীগের সহ-সভাপতি মোঃ বেল্লাল খুন হয়। এ ঘটনায় এলাকার যুবলীগ নেতা মোঃ আলম ও মোঃ বাদশাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। ২৫জুন প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হয় শ্রমিক লীগের নেতা মহেশ্বরপাশা খাদ্য গুদাম শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তা আব্দুস সালাম দুপু। ২০অক্টোবর সন্ধ্যায় মহেশ্বরপাশা কেন্দ্রীয় খাদ্য গুদাম ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি মোদাচ্ছের হোসেন প্রতি পক্ষের গুলিতে নিহত হয়। ২৮অক্টোবর দিঘলিয়া উপজেলায় যুবদলের নেতা মোঃ নাসিম নিহত হয়। ৩০অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হালিম উপজেলা পরিষদের অদুরে সন্ত্রাসী গুলিতে আহত হন। ৩দিন পরে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় পুলিশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার আগ থেকে দিঘলিয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য’র সাথে প্রতি পক্ষের বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জের হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। গাজী হালিম হত্যার পর সাদা পোষাকে গোয়েন্দা পুলিশ এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিচরণ করছে। হত্যার কারণ উদঘাটনে পুলিশের পক্ষ থেকে তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে জানান, জনবলের জানমালের নিরাপত্তা লক্ষে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার পর অপরাধীদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা চলছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি আমার দেশকে বলেন, তিন কারণে খুলনায় রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসনে নগ্ন দলীয়করণ, খুনীরা জেল থেকে বের হয়ে আসা এবং উচ্চ মহলের টেলিফোনে প্রশাসন চলার কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, মোদাচ্ছের ও হালিম হত্যাকান্ডের পর খুলনায় কোন আইন শৃংখলা টিকে আছে বলে মনে হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ এখন চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, খুলনায় যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বেড়েছে তার জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতি দায়ি। সন্ত্রাসীদের মদদদানকারী  এই সরকারের পরিবর্তন ছাড়া এই অবস্থা উত্তোরণের আর কোন পথ খোলা নেই। আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি শেখ হারুন অর রশিদ বলেন, হত্যাকান্ডের প্রকৃত খুনীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে হবে। তা না হলে দল মত নির্বিশেষে খুলনাবাসী কেউ নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে না পারলে রাজনৈতিক নেতাসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে। খুলনা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, প্রশাসন ও সরকার দলের লোকজন এখন নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। এ জন্য কারো নিরাপত্তা দেওয়ার সময় তাদের নেই। যে কারণে খুলনার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইন শৃংখলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো বলে যে বক্তৃতা দেন, এখন তা দেওয়া উচিত না। একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটনায় তার লজ্জা পাওয়া উচিত। খুলনা নগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ খালিদ হোসেন গতকাল দুপুরে স্থানীয় প্রেসক্লাবে এ প্রতিবেদককে জানান, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটেছে। এ অবস্থার অবসানের লক্ষে রাজনীতিকদে সমঝোতা প্রয়োজন। নিরপেক্ষভাবে পুলিশের তদন্ত হওয়া উচিত। যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শিমুল খান/খুলনা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here