খাদিজার স্বপ্নের সারথি বাবামিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া প্রতিনিধি :: এখনও বই কেনা হয়নি। নেই কলেজে যাওয়ার পরিধেয় পোষাক। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে দরিদ্র ভ্যানচালক বাবার ভ্যানে করে সাতশ টাকা ধার করে কলেজে ভর্তি হলো দরিদ্র মেধাবী খাদিজা।

এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া এ মেধাবী ছাত্রী এখনও জানে না তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরন হবে কিনা।

মেয়ের স্বপ্নপূরন করতে ভ্যান চালক বাবা আলমাস প্যাদা তাঁর স্বপ্নের সারথি হয়ে এখন পথে নেমেছেন। পথে পথে ঘুরে মেয়ের স্বপ্নপূরনে সহযোগীতা চাচ্ছেন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয় দরিদ্র পরিবারের এই মেধাবী। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় খাদিজা। মেঝ ভাই রাসেল সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। ছোট ভাই ইমনের বয়স তিন বছর। রাস্তার পাশে অন্যের জমিতে ঝুপড়ি তুলে খাদিজাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও দু’মুঠো ভাতের জন্য তার বাবাকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভ্যান চালাতে হয়।

বাবার কষ্টে ব্যাথিত খাদিজা লেখাপড়া শিখে বড় চাকুরী করে তাঁদের বাবা-মাকে একটু শান্তি সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে শত বাঁধা উপেক্ষা করে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয়।

কিন্তু আর্থিক সংকটে এখানেই থামার উপক্রম হয়েছে তাঁর স্বপ্ন।

কলাপাড়ায় টিয়াখালী ইউনিয়নের বিশকানি গ্রাম থেকে প্রায় পাঁচ/ছয় কিলোমিটার দূরে মহিলা কলেজে। অসুস্থ্য পিতা তাঁকে সেই ভ্যানে করে নিয়ে এসেছেন কলেজে ভর্তির জন্য। একইভাবে স্কুলেও রোজ ভ্যানে করেই পৌছে দিতেন। আবার সেখান থেকে বাসায় নিয়ে যেতো। খাদিজার উচ্চ শিক্ষার পথে তাঁর বাবাই স্বপ্নের সারথি হয়ে তাঁকে নিয়ে এগিয়ে চলছেন।

খাদিজা জানায়, “সেই শিশুকাল থেকে অন্যের জায়গা বেড়ে ওঠা। অন্যের সহায়তায় লেখাপড়া করা। কলেজে ভর্তি হইছিও অন্যের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে। বাবা ভ্যান চালায়। কয় টাকাই আর পায়। বই কেনতে অনেক টাকা লাগবে। হেইয়া কই পামু যানি না। স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শিখে পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করা। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন মনে হয় এখানেই থেমে যাবে।

খাদিজার পিতা আলমাস প্যাদা বলেন, “ মুই মূর্খ। তাই মাইয়া-পোলাগোরে ল্যাহাপড়া করাইতে চাই। যাতে তাঁদের কেউ মুর্খ না বলতে পারে। অন্যের দোকানের মালামাল টাইন্না রোজ একশ-দেড়শ টাহা পাই। কোনদিন চাউল কেনারও টাহা হয় না। পোলাডা স্কুলে পড়ে। মাইয়াডারে কলেজে ভর্তি করাইছি ধার কইর‌্যা। এ্যাহন যে ক্যামনে সংসার ও অগো ল্যাহাপড়া চলবে হেই চিন্তা করি।

খাদিজার মা জাহানারা বেগম বলেন, “মাইয়া-পোলার চিন্তায় ২০/২৫ দিন অসুস্থ্য হইয়া ঘরে পইড়্যা থাকলেও অগো মুখের দিকে চাইয়া অসুস্থ্য শরীর নিয়া আবার ভ্যান লইয়া বাইরাইছে। এ্যাহন জীবন না মাইয়া-পোলার ল্যাহাপড়াই তার কাছে সব। কিন্তু ভ্যান চালাইয়া কি কলেজে পড়ানো যায়। হেইয়ানে কতটাহা খরচ। আমরা এতো টাহা কই পামু।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here