ঝিনাইদহ : অপহৃত মেয়েকে ফেরত পেতে বাধ্য হয়ে আসামী পক্ষের সাথে সমঝোতা করেছিলেন পিতা।

স্থানীয় সাংসদের বাসায় হয় এই সমঝোতা বৈঠক।

সেখানে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেয়েকে দিয়ে আদালতে আসামীদের পক্ষে স্বাক্ষীও দিয়েছেন। তারপরও দায়েরকৃত অপহরণ মামলাটি শেষ হয়নি। পুলিশ আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

আর এই অপরাধে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কলেজ পড়ুয়া সেই মেয়েটিকে গত ২৬ জানুয়ারী দ্বিতীয়দফা অপহরন করেছে সন্ত্রাসীরা। এবার বোমা ফাটিয়ে নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেয়েটি। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে মামলা তুলে না নেওয়া পর্যন্ত আর মেয়েটিকে ফেরত দেওয়া হবে না। মেয়েটির পিতা আদালতে চলমান মামলাটির এই মুহুর্তে কোনো সমাধান করতে পারছেন না। আর পূর্বের মামলা মিটিয়ে নেওয়ায় পুলিশও নতুন করে মামলা নিচ্ছে না। মেয়েকে ফেরত না পেয়ে সারাক্ষন কান্নাকাটি করে ফিরছেন পরিবারের সদস্যরা।

মহেশপুর উপজেলার সাতপোতা গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান, তার ১৬ বছর বয়সী এক মেয়ে ভৈরবা শহিদুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করে। কলেজে যাওয়ার পথে একদিন পাশ্ববর্তী গাড়াপোতা গ্রামের দাউদ হোসেন মোল্লার পুত্র শাহিনুর রহমান খারাপ প্রস্তাব দেয়। এনিয়ে তার কন্যা ছেলেটিকে মন্দ কথা শুনালে বখাটে যুবক দেখে নেবে বলে হুমকী দেয়। এক পর্যায়ে গত বছরের ৩১ মে কলেজ যাবার পথে রাস্তা থেকে তার মেয়েকে অপহরন করে নিয়ে যায়।

শফিকুল ইসলাম জানান, এরপর তিনি মহেশপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পাশাপাশি মেয়েটির খোজ করতে থাকে। সে সময় পুলিশ তৎপর হলে আসামীরা মেয়েটিকে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর সেউ সময়ের স্থানীয় সাংসদ শফিকুল আজম খাঁন উভয় পক্ষকে নিয়ে তার বাসায় একটি বৈঠক করেন।

সেখানে মেয়েটিকে ফেরত দেন, পাশাপাশি মামলাটি মিটিয়ে নিতে তাকে অনুরোধ করেন। এরপর তিনি মেয়েকে নিয়ে আদালতে আসামীদের পক্ষে বয়ান দিয়েছেন।

কিন্তু নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখ মহেশপুর থানা পুলিশ ওই মামলায় আসামীদের প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জসীট দিয়েছেন। এরপর আসামীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েকে ক্ষতি করার হুমকী দিতে থাকে।

শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৬ জানুয়ারী আসামীরা ১৮/২০ জন সশস্ত্র অবস্থায় তার বাড়িতে হানা দিয়ে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গেছে। এ সময় বাড়ির অন্যরা বাঁধা দিতে গেলে ৪/৫ টি বোমা বিষ্ফোরন ঘটানো হয়। মেয়েটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেও ভয়ে কেউ তাকে রক্ষা করতে যেতে পারেনি।

তিনি জানান, এই ঘটনার পর ২৭ জানুয়ারী তিনি থানায় আরেকটি এজাহার দিয়েছেন। কিন্তু গত ১৫ দিনেও পুলিশ সেই মামলাটি নথিভুক্ত করেনি। তিনি জানান, পূর্বের মামলা মিটিয়ে নেওয়ায় পুলিশ তার উপর ক্ষিপ্ত। যে কারনে এই মামলা নথিভুক্ত করছেন না। আর আসামীরা পূর্বের মামলা সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাহার না করলে তার মেয়েকে ফেরত দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

শফিকুল ইসলাম জানান, পূর্বের মামলা তিনি ইচ্ছা করলেই মিটিয়ে নিতে পারছেন না। এ ব্যাপারে তিনি আইনজীবীর সাথে পরামর্শও করেছেন। তাৎক্ষনিক ভাবে তিনি কিছুই করতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জজ কোর্টের আইনজীবী আতিয়ার রহমান জানান, সাধারণত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর সংশোধনী ২০০৩ এর ৭/৩০ ধারায় পুলিশ চার্জসীট দিলে সেই মামলার বিচার ছাড়া কোন মিমাংশার সুযোগ থাকে না। এখানে বাদির কিছুই করার নেই। স্বাক্ষীর পর মামলার সমাধান হবে।

এ ব্যপারে মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, পূর্বের মামলা তদন্ত করে অভিযোগের প্রমান পাওয়ায় চার্জসীট হয়েছে। আর বর্তমানে মেয়েটির বিষয়ে স্থানীয় একটা সমাধানের চেষ্টা চলছে। যে কারনে মামলাটি নথিভুক্ত হয়নি। তবে সমাধান না হলে মামলা নিয়ে তারা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

আহমেদ নাসিম আনসারী/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here