ষ্টাফ রিপোর্টার :: ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণির নেতাদের দাপটে স্থানীয় প্রশাসন ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। অধিকাংশ সংসদীয়  আসনে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব। এত দিন ছিল বিষোদ্গার ও মারামারিতে সীমাবদ্ধ, এখন শুরু হয়েছে নির্বাচনী এলাকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ।
আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রশাসনে।  নেতাদের এমন আচরণে প্রশাসন সঠিকভাবে  আইন বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এতে সরকারেরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ভেস্তে যাচ্ছে দেশের ব্যাপক উন্নয়নের সফলতা।
জানা গেছে, সম্প্রতি একটি এলাকায় ক্ষমতাসীন নেতাদের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়ায়। এক পক্ষ থানায় গিয়ে ওসির ওপর চড়াও পর্যন্ত হয় ।
এমনকি ওই পক্ষের নেতা থানায়  হুমকি দিয়ে বলে গেছেন, তার পূর্বপুরুষরা এসপিকে পর্যন্ত থাপ্পড় মেরেছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে শীর্ষ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ময়মনসিংহে সম্প্রতি যুবলীগের এক নেতা খুন হয়েছেন। নিহত নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে গেলে অভিযুক্ত আসামিদের ক্ষমতার দাপটে থানা মামলা নেয়নি।
একপর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়ে। পরে আদালতের নির্দেশে ২৫ দিন পর থানা মামলাটি গ্রহণ করে। সম্প্রতি পিরোজপুরে পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
ওই সময় এ ঘটনা সম্পর্কে  বিস্তারিত জানবার জন্য  স্থানীয় প্রশাসনের কাছে  ঢাকা থেকে একাধিক কর্মকর্তা ফোন করেছেন।
ইতোমধ্যে পিরোজপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলির ঘটনাও ঘটে। তারই জের ধরে দুই পক্ষ এখন মুখোমুখি। সেখানকার পরিস্থিতি এখন খুবই উত্তপ্ত। অথচ এ বিষয়টি সম্পর্কে জানবার জন্য ঢাকা থেকে কেউ ফোন করেনি। অর্থাত্ বিষয়টি সম্পর্কে  কেউ কিছু জানতেও চায়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগের এক প্রশাসনিক  কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে এক গ্রুপের বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। আহতরা থানায় গিয়ে মামলা করে। আর এ  মামলা নেওয়ার  কারণে ওই থানার ওসিকে তাত্ক্ষণিক বদলির ঘটনায়  স্থানীয় প্রশাসনে ক্ষোভ দেখা দেয়।
এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্থানীয় প্রশাসনও ঠিকমত কাজ করতে পারছেন না। গত ১৫ দিনে আওয়ামী লীগের তিন এমপিকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা।
টেন্ডার ভাগাভাগি, এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও পদ পদবি নিয়ে তাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে  দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ বিভেদ ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে  চরম আকার ধারণ করেছে।
বেশ কয়েকজন এমপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি দলের এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে কুত্সা রটাচ্ছে। ‘দুর্নীতিবাজ’ এমনকি ‘গডফাদার’  আখ্যা দিয়ে এবং গুরুতর অভিযোগ সামনে এনে একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি বরগুনা, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও কাহারোল, রাজশাহীর পুটিয়ার দুর্গাপুরে ক্ষমতাসীনদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময়ও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে, ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রায় ২০০ নেতা-কর্মী ও সমর্থক প্রাণ হারিয়েছেন নিজেদের মধ্যে সংঘাতে।
এর বেশির ভাগই নির্বাচনকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব ও টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে। অতীতে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। সেসময়ও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হতো প্রশাসনের।
রিপোর্টটি করতে সহযোগিতা করেছেন ইত্তেফাকের স্থানীয় প্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনসহ ভুক্তভোগীরা।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here