কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যাস্ত বাগেরহাটের কামার শিল্পীরামোঃ শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এখন দম ফেলারও সময় নেই কামার পাড়ার শিল্পীদের। আর মাত্র ৩দিন পরেই পবিত্র কোরবানীর ঈদ,তাই এই ঈদকে সামনে রেখে ব্যাস্ত সময় পার করছে বাগেরহাট জেলা শহরের কামাররা। দিনরাত সমান তালে লোহার ঠুং ঠাং,ঝণ-ঝণাৎ শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলা শহরসহ উপজেলার প্রতিটি কামারপাড়া।

বাগেরহাট শহরের কামার পট্টিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামার শিল্পীরা দা, বটি, চাকু, চাপাতি ছুরি, খঞ্জর,সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তৈরি করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাজের চাপ থাকলেও মজুরি ও বিক্রি নিয়ে সন’ষ্ট নন তারা। বাগেরহাট শহরের কামার পট্রিতে,সদর উপজেলার যাত্রাপুরসহ বিভিন্ন হাটবাজার কামারদের বাড়িতে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বঁটি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছেন কামাররা।

এসব ব্যবহার্য জিনিস জেলা শহরের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন হাটবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো পুড়ে দা, বঁটি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছেন কামাররা। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প।

গত কাল শহরের কামার পটির ঘুরে দেখা কালে শংকর কর্মকার বলেন, মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে। হয়তোবা এক সময় এই পেশা আর থাকবে না। তবে কুরবানির ঈদের সময় আমরা একটু আশাবাদী হই। আমাদের বাপ দাদার পেশা বলে শত কষ্টের মধ্যেও ধরে রেখেছি। সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকলেও কুরবানির সময় আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর এখোন পর্যন্ত্য ক্রেতাদের অগ্রহ দেখছি না, দুই একজন আসছে তাও পুরানো যন্ত্রপাতি রিপিয়ার করতে। কুরবাণীর এখোন ২/৩ দিন বাকী দেখি ঈশ্বর কি মঙ্গল করেন।

শৈলেন কর্মকার বলেন, আমরা সারা বছর অলস সময় পার করলেও কোরবানীর ঈদ আসলেই অধিক শ্রম দিয়ে বেশি আয়ের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু কয়লা ও লোহার দাম বেশি হওয়ায় আমাদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে বসেছে। ছুরি, বটিসহ লোহার বিভিন্ন রকমের যন্ত্রপাতি তৈরীতে আমাদের ব্যায় বেশি হলেও উপযুক্ত মূল্যে কিনছেন না ক্রেতারা। ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকী থাকলেও আমাদের তৈরী যন্ত্রপাতির বিক্রি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছি আমরা।

সমীর কর্ম্মকার নামে এক দা-বটি ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা এলাকার নাম করা কামার ছিল। বাপের কাছ থেকে এই কাজ শিখে আমারা এই ব্যবসায় করছি, প্রতি কুরবানী ঈদ আসলেই কিছু লাভের আশায় আমারা ব্যবসায় একটু জোর দেই। আমাদের এই সব যন্ত্রপাতি বানানোর জন্য আমার বাহির থেকে লোহ ও কয়লা কিনে আনি। আমরা লোহা কিনি ৬০ টাকা কেজি ধরে আর নারকেলের মালার কয়লা কিনি প্রতি টিন ২৫০ টাকা ধরে। কিন্তু আমার দিন রাত এতো পরীশ্রম করেও আমারা লাভের মুখ দেখিনা। লোহা ও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তৈরি সামগ্রীর দামও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তৈরি যন্ত্রপাতি বেশি দামে কিনতে রাজি হয়না ক্রেতারা। তাড়াছা কিছু চায়না ছুরি, চাকু বাজারে এসেছে এতে করে আমাদের বাজার আরো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্য কোন কাজও পারিনা, না খেয়ে হলেও এই পেশায় থাকতে হবে।

জাহাঙ্গীর শেখ অভিযোগ করে বলেন, বছরে এই সময় চাপাতি, ছুরি, বটির চাহিদা বেশি থাকে। লোহা, কয়লার দাম বৃদ্ধি এবং পরিশ্রমও করতে হয় বেশি। সেই তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারা দিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হয়। ফলে বিভিন্ন ধরেনের সমস্যা শরীরে তৈরি হয়। যে কারনে এখন অনেক কর্মকাররা এগুলো বানাতে উৎসাহ হারাচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here