শিপুফরাজী, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি

 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকির মধ্যে থাকা ভোলার চরফ্যাসনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিচ্ছিন্ন জনপদের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে এবং দূযোর্গের খবরাখবর জানতে চালু হয় তথ্য প্রযুক্তির সেবা।

২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ইউএনডিপির প্রশাসক ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধান মন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক এ প্রযুক্তি উদ্বোধনের জণ্য আসেন কুকরী মুকরীতে।

কুকরীর ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে স্যাটেলাইন ও ইন্টারনেট সেবায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনার সাথে তার কার্যালয়ে কথা বলেন হেলেন ক্লার্ক, চর কুকরী মকরী পরিষদে দেয়া হয় তিনটি ল্যাপটব। ইন্টারন্টে কানেকশন। ল্যাপটপ চারালোর জন্য স্থাপন করা হয় সৌর বিদ্যুৎতের। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ।

এ যন্ত্রের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন কুকরী মুকরীর বাসিন্দাদের সুখ দুখের সব খবর জানবে সরকারসহ বিশ্ববাসি। হেলেন ক্লার্ক এ তথ্য সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চরকুকরীতে সফরকে ঘিরে রাতারাতি পাল্টে ফেলা হয় অহেলিত উন্নয়ন বঞ্চিত জনপথের চেহারা।

দেশের ৪ হাজার ৫শ ১ টি ইউনিয়ন পরিষদে এক যোগে তথ্য সেবা চালু করতে এর উদ্বোধন এর জন্য বেছে নেয়া হয় চর কুকরী মুকরীকে।

বুঝানো হয় সরকারের ডিজিটাল সেবা পৌছে দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে দূর্গম এলাকায়। কিন্তু যাদের জন্য এতো আয়োজন সে কুকরী মুকরী বাসী জানেনা তথ্য সেবা কাকে বলে। সরেজমিন কুকরীর বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায় এসব তথ্য।

অপর দিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এখানে চালু করা হচ্ছে না চরফ্যাসনের তিনটি ইউনিয়নের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের । ফলে অর্ধলক্ষ মানুষ ইউনিয়ন তথ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে ।

উপজেলার চর কলমী ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। হদিস মিলছে না কেন্দ্রের কম্পিউটার, প্রজেক্‌টর এবং ক্যামেরার মতো অত্যাবশকীয় দামীয় যন্ত্রাংশের ।

ফলে প্রত্যাশিত সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছে বিভাজিত ও পুনর্গঠিত চর কলমীর ৩টি ইউনিয়ন। অধিকন্তু তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের নানান উপকরণ ক্রয়ের নামে চেয়ারম্যান ও সচিবের সমন্বয়ে এলজিএসপির লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে।

এছাড়া ২ বছর আগে দেশ ব্যাপী তথ্য ও সেবা কেন্দ্রগুলো চালু করা হলেও এখনো চর কলমীসহ চরফ্যাসনের ১৪টি ইউনিয়নের ২৮ জন উদ্যোক্তার নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়নি। ফলে যে কোন সময় উদ্যোক্তারা কাজ হারানোর আশংকায় আছে।

২০০৯ সনে চর কলমী ইউনিয়নকে বিভাজন করে অধ্যক্ষ নজরুল নগর এবং মুজিব নগর নামে আরো ২টি ইউনিয়নে পুনর্গঠন করা হয়। দুই বছর আগে এই তিনটি পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দায়িত্ব গ্রহন করেন। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্‌স ভবন না থাকায় পুনর্গঠিত অধ্যক্ষ নজরুল নগর এবং মুজিব নগর ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র এখনো চালু করা হয়নি।

বিভাজিত চরকলমী ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রটি এই তিনটি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষের জন্য সেবা প্রাপ্তির একমাত্র ভরসা হয়ে পড়েছে। কিন্ত পরিষদ সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং লুটপাটের কারণে তথ্য ও সেবা কেন্দ্রটি দৃশ্যতঃ মানুষের কোন উপকারে আসতে পারেনি।

২০১০ সনের মাঝামাঝি সময় চর কলমী ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের মতো ২টি ল্যাপটপ, ২টি ডেক্‌সটপ, মালটিমিডিয়া প্রজেক্‌টর, ৩টি প্রিন্টার, ৩টি মডেম, সোলার প্যানেল এবং ক্যামেরার মতো উপকরণ নিয়ে কেন্দ্রটি পথ চলা শুরু করে। কিন্ত এখন ১টি মডেম, ১টি প্রিন্টার এবং ২টি ল্যাপটপ ছাড়া অন্যান্য উপকরণ গুলোর হদিস নেই।

তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা নাজিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, পরিষদ সচিব আব্দুল কাদের শুরু থেকেই এগুলো নিজের বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন। এ বিষয়ে উদ্যোক্তা বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পর্যন্ত প্রত্যেককে অবহিত করেও কোন সুরাহা পাননি। উদ্যোক্তা আরো অভিযোগ করেন, তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে বহুমুখী সেবা দেয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কিছু কিছু কম্পোজ এবং ইন্টারনেট ব্যবহার ছাড়া কোন সেবা দেয়া যাচ্ছে না। পরিষদের সাথে সংশ্লিষ্টদের কোন কম্পোজ বা সেবা কেন্দ্র থেকে দেয়া হয় না। চেয়ারম্যান এবং সচিব পরিষদ মুখী জনগনকে কেন্দ্রে ঘেষতে দেয়না।

অভিযোগে আরো জানাযায়, তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালুর পর ইউনিয়নের ৩৭ হাজার ৮০০ নাগরিকের জম্ম নিবন্ধন অন লাইনে দেয়া হলেও তার বিলের অংশ বিশেষ ভ্যাট অফিস খরচের নামে সচিব আত্মসাত করেন।

এছাড়া চলতি বছর কেন্দ্রের নামে উপকরণ কেনার ভাউচার দিয়ে লোকাল গর্ভনমেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রাম (এলজিএসপি)র লাখ টাকা চেয়ারম্যান ও সচিব আত্মসাত করেছেন। ভোটার তালিকা হাল নাগাদ করার সময় তথ্য ও সেবা কেন্দ্র থেকে সরবরাহকূত জম্ম নিবন্ধনের টাকা নানান ভাউচার দিয়ে পরিষদ সচিব গায়ের করে দিয়েছেন।

এসব বিল-ভাউচারের জন্য উদ্যোক্তার সহি-স্বাক্ষর নিলেও কোন টাকা তাকে দেয়া হয়নি। বিলের বয়েকা টাকা চাহিলে উদ্যোক্তাকে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করার হুমকী দেয়া হয়।

উদ্যোক্তারা জানান, ২ বছর ধরে কেন্দ্রের উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করলেও এখনো তাদের নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়নি। ফলে তারা আদৌ জানানেন না ঠিক কোন কর্তৃপক্ষের অধীনে তারা কাজ করছেন। এতে প্রতিনিয়ত কাজ হারানোর আশংকা কাজ করছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।

সিঙ্গাপুর প্রবাসী স্বামীর কাছে অন লাইনে ছবি পাঠাতে তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে আসা গৃহবধূ সারমিন জানান, তিনি প্রায়ই অনলাইন সেবা নিতে এখানে আসেন কিন্তু অন লাইন এবং কম্পোজ ছাড়া আর কোন কাজ এখানে নেই। উদ্যোক্তা শাহনাজ বেগম জানান, এখানে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর প্রস্ততি নিয়েও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সচিব জরুরী উপকরণ গুলো আটকে দেয়ায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি চালু করা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে চর কলমীর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রেজাউল করিম হাওলাদার জানান, পরিষদ কমপ্লেক্‌স ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় অস্থায়ী ভবনে কার্যক্রম চলছে। এতে পরিষদের আর সব কাজের মতো তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের কাজে কিছুটা বিঘ সৃষ্টি হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here