মাদকদ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তিদের জন্য সুস্থ সুন্দর জী্বন নিশ্চিত করতে নানারকম চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচেষ্টা চালিয়েও এখন পর্যন্ত সমস্যাটিকে নিয়ন্ত্রনে আনা যায়নি৷ এরই ধারাবাহিকতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষক দল এখন কোকেনে আসক্তি রোধে টিকা বের করার চেষ্টা করছেন৷

অ্যামেরিকার হিউস্টন, ফিলাডেলফিয়া ও নিউইউর্কের সমীক্ষাকেন্দ্রের এক সমীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে আসেন কোকেনে আসক্ত বহু ব্যক্তি৷ ছয় সাত বছর ধরে এই মাদকে আসক্ত তারা৷ কোকেন আসক্তি রোধে টিকা বের করার পরীক্ষা নিরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী তারা৷ হিউস্টনের বেইলর কলেজ অব মেডিসিনের মানসিক রোগের চিকিত্সক টমাস কোস্টেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অধিকাংশ রোগী পরিবার কিংবা তাদের কর্মপ্রতিষ্ঠানের চাপে এখানে আসেন৷ কোকেন তাদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে৷ অনেকে নিজেরাই কোকেনের নেশা থেকে মুক্ত হতে চেয়েও সফল হতে পারেননি৷

টমাস কোস্টেন এমন এক ধরনের টিকা বের করেছেন, যা কোকেন প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে৷ এর ফলে মস্তিষ্কে আর কোকেনের নেশা পৌঁছাতে পারেনা৷ এই ভাবে রোগীরা এই মাদকের নেশা থেকে মুক্ত হতে পারেন৷ টমাস কোস্টেন জানান, ‘‘কোকেনের অ্যান্টিবডি বেশ বড়৷ কোকেন সেবন করলে তা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ে৷ অ্যান্টিবডি রক্তে মিশে কোকেনকে আর মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে দেয়না৷ ফলে নেশাও আর হয়না৷ রক্তে থাকা কোকেন পরে মূত্রের সঙ্গে বের হয়ে যায়৷”

গত কয়েক বছরে গবেষকরা ৪০০ কোকেন আসক্ত ব্যক্তিকে টিকা দিয়েছেন৷ প্রতি চার জনে তিন জন সুফল পেয়েছেন৷ এই টিকা এত বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি করে যে, অনেক বেশি পরিমাণের কোকেনও তার কার্যকারিতা হারায়৷ এই টিকা বেশ সহনীয়৷ নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিজ্ঞানী কার্ল হার্ট মাদকাসক্তদের দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন৷ তিনি এই টিকার গুণাগুণ দেখে বেশ আশান্বিত৷ তার ভাষায়, ‘‘আমি আনন্দিত যে, বিজ্ঞানীরা এই ধরনের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন৷ মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা এব্যাপারে অত্যন্ত উত্সাহী৷ তারা মনে করেন টিকা নিলেই বুঝি কোকেনের আসক্তি চলে যাবে৷ আসলে কিন্তু তেমনটি নয়৷ কোকেনাসক্তি আচার আচরণের ত্রুটিজনিত জটিল এক সমস্যা৷ অতি সহজে একটি ইন্জেকশনের মাধ্যমে তা দূর করা যায়না৷ এই টিকা আশ্চর্যজনক কোনো নিরাময়কারীও নয়৷

টিকা কোকেনের নেশাকে প্রতিহত করতে পারে কিন্তু কোকেন সেবনের স্পৃহাকে দমন করতে পারে না৷ প্রথম কয়েক সপ্তাহ পার করাটাই বেশ কঠিন৷ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা যখন লক্ষ্য করেন যে, কোকেন সেবন করার পরও নেশা হচ্ছেনা, তখন তারা হতাশ হয়ে পড়েন৷ কেউ কেউ নেশার জন্য দশ গুণ পর্যন্ত কোকেন সেবন করে ফেলেন৷ যদিও অতিরিক্ত কোকেন সেবন করে অসুস্থ হওয়ার মতো কোনো ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি৷ তবে বিষয়টিকে এখন চোখে রাখতে হবে বলে মনে করেন গবেষকরা৷ কার্ল হার্ট বলেন, ‘‘অংশগ্রহণকারীরা অন্যান্য মাদকের দিকে হাত বাড়াতে পারেন৷ কোকেন প্রতিরোধক টিকা নেওয়ায় অন্য মাদকের প্রতি আগ্রহ দেখা দিতে পারে তাদের৷ টমাস কোস্টেনও এই রকমটি মনে করেন৷ এই বিজ্ঞানী জানান, ‘‘কোকেনাসক্তি একটি আচরণের ত্রুটিজনিত সমস্যা হয়েই থাকবে৷ আমরা রোগীদের এই ত্রুটি দূর করতে চাই৷ আমরা যদি শুধু তাদের টিকা দেই, একদিন হয়তো তারা আর দেখাই দেবেন না৷

একারণে রোগীদের জন্য দুটোই দরকার৷ মাদকাসক্তির অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য বিশেষ থেরাপি এবং টিকা৷ এই যৌথ উদ্যোগ মাদকাসক্তি দূর করতে সহায়তা করবে রোগীদের৷ কিন্তু এজন্য সময়ের প্রয়োজন, আজ কালের মধ্যেই তা সম্ভব হবে না৷স্বাভাবিক আচরণের জন্য থেরাপি কাজে লাগতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে৷ আর টিকার কার্যকারিতা কয়েক মাস টিকে থাকে৷ বার বারই নতুন করে টিকা দিতে হয়৷ টমাস কোস্টেন বলেন, ‘‘আমাদের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, কোনো রোগী যদি থেরাপির পাশাপাশি টিকা নেন, তাহলে তিনি পাঁচ বছর নেশামুক্ত থাকেন৷ এটাই আমাদের লক্ষ্য ৷

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/এসকে

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here