নাজিম উদ্দিন, স্ত্রী আইরিন ও তাদের মেয়ে নুসরাত জাহান মুন।
নাজিম উদ্দিন, স্ত্রী আইরিন ও তাদের মেয়ে নুসরাত জাহান মুন।

স্টাফ রিপোর্টার :: নাজিম উদ্দিন। বয়স ৩৭। তিন দিন আগে যিনি দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হয়েছেন। থাকতেন রাজধানীর শ্যামপুর থানার পোস্তগোলায়। বাসা নম্বর ২৭২/৩। গত মঙ্গলবার মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালে তার স্ত্রী আইরিন একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। তাদের বড় মেয়ে নুসরাত জাহান মুনের বয়স ৭। নবাগতার নাম ইসরাত জাহান নুর। তাকে নিয়ে হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন আইরিন।

বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসের উদ্দেশে বের হন নাজিম। আদ্-দ্বীন হাসপাতালে স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল তার। মোটরসাইকেলে করে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় মনজিল পরিবহন ও শ্রাবণ সুপার নামে দু’টি যাত্রীবাহী বাসের তীব্র প্রতিযোগিতা- কে কাকে ছাড়িয়ে আগে যাবে। চালকদের এই বেপরোয়া প্রতিযোগিতার শিকার হয়ে নিহত হন নাজিম।

স্বামীর মৃত্যুর পর আইরিনকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়। প্রথমে এ দুঃসংবাদটি তাকে জানানো হয়নি। কিন্তু এক সময় জেনে যান। তারপর থেকে কান্না থামছেই না আইরিনের। ‘দুটি শিশু সন্তান এতিম হয়ে গেল আমার’ কান্নার সঙ্গে বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল এ করুণ আর্তি। সিজারের মাধ্যমে সন্তান হয়েছে তিন দিন আগে। এখনও তিনি অসুস্থ ও ক্লান্ত।

দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয় নাজিমের লাশের। বাদ আছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে তার প্রথম জানাজা নামাজ শেষে গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলার বালুরচরের উদ্দেশে নেওয়া হয়। লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন নাজিমের শ্বশুর আরিফ হোসেন ও চাচাত ভাই মসলেহ উদ্দিন রিফাত।

রিফাত বলেন, ‘সড়কে চলছে অব্যবস্থাপনা। কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। অদক্ষ চালকদের হাতে মালিকরা রাস্তায় গাড়ি ছেড়েছে। এতে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে। এর পরও সংশ্নিষ্টদের মাথাব্যথা নেই।’ দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে শেষে তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে না পারলে এ রকম হতাহতের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে আর আমরা শুধু দেখতেই থাকব।

নাজিম ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এবং ঢাকাস্থ লালমোহন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান শরিফ জানান, যাত্রাবাড়ীর দিক থেকে ফ্লাইওভারে ওঠা দু’টি বাস আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করছিল। তিনিও মোটরসাইকেল নিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন। সায়েদাবাদের জনপদের কাছে ফ্লাইওভারের ওপরে তিনটি মোটরসাইকেলের একটিতে ছিলেন নাজিম। একটি বাস নাজিমের মোটরসাইকেলের পেছনে ধাক্কা দিলে পড়ে যান তিনি। এর পরই আরেকটি বাস পাশ থেকে চাপা দেয় তাকে। নাজিমের কান ও মাথা দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে সঙ্গে সঙ্গে। এ সময় তিনিসহ (শরিফ) কয়েকজন তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

শরিফ বলেন, অটোরিকশায় ওঠানোর সময় নাজিম একটু নড়েছিলেন। এ ছাড়া কোনো শব্দ করেননি আর। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক ইসিজি করতে পাঠান। সেখানে বলা হয়- অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

দুর্ঘটনার পরপরই আরেক মোটরসাইকেল আরোহী নাইম দ্রুত গুলিস্তানের সার্জেন্ট আহাদ আলী বক্সে গিয়ে পুলিশকে খবরটি জানান। এর পরই বাস দুটি জব্দ করে চালক ও হেলপারকে আটক করে পুলিশ।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, শ্রাবণ সুপার বাসের চালক ওহিদুল (৩৫) ও মনজিল পরিবহনের হেলপার কামালকে (৩২) আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে বাস দুটিও। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মামলার প্রস্ততি চলছে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here