কেমনে কাটবে বন্ধের দিনগুলো?সায়েম মাহামুদ :: বন্ধ বা ছুটির কথা শুনলেই লাফিয়ে উঠতাম। নানা বাড়ি, মামা বাড়ি যাওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম বুঝি। মাস জুড়ে ঘুরব আর আনন্দ করব, কোন পড়ালেখা নাই, চিন্তাও নাই, নাই দিনরাত কষ্ট ব্যাগ টানাটানি।
সেই দিনগুলোর কথা বলছিলাম যখন আমরা স্কুলে পড়তাম অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক। খুব মজা করতাম তখনকার বন্ধের দিনগুলোতে কিন্তু এখনকার ছেলে পেলেরা তেমন বড় বন্ধ পায়না বললেই চলে পেলেও সেটাও নানান প্রতিযোগীতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার মাধ্যমেই কেটে যায়। এই প্রতিযোগীতামুলক সমাজে এর কোন বিকল্পও নাই, সকলকেই তার নিজের মত করে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে সময় ও প্রয়োজন বুঝে।
তোমরা যারা এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছ তাদের ইতোমধ্যেই পরীক্ষা শেষ হয়েছে তোমরা কি চিন্তা করেছ, এই বন্ধের দিনগুলো কি কাজে ব্যয় করবে?চল তাহলে জেনে নেই কি করা যায় বন্ধের দিনগুলোতে।
গত কয়েকদিন আগে আমাদের প্রিয় সংগঠন এলসের আয়োজনে আয়েজিত হয়েছিল #ডিবেট ওয়ার্কসপ।
একান্ত আলাপে প্রেসিডেন্ট ম্যাম বলছিলেন, “সায়েম জান?, তুমি বন্ধের দিনগুলো কিভাবে কাটিয়েছ সেই হিসেবটা রাখাও জরুরী। তুমি যখন বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে যাবা তখন তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করবে যে কিভাবে তোমার পেস্টাইম বা অবসর সময় কাটিয়েছ।যদি তা কোন সৃজনশীল কাজের জন্য হয় তবে তা তোমার সফলতায় সহযোগিতা করবে।”
ম্যাডামের সেদিনের সেই কথা আজ আমার মনে আবার আসল যখন আমার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্র আমাকে জিজ্ঞেস করল, “স্যার, পরীক্ষা তো শেষ হয়ে গেল এবার কি করব, একটা পরামর্শ দিন “।
ম্যাডামের সেই কথা, আমার অসফল জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা আর বর্তমান সময়ের প্রয়োজনের উপর আলোকপাত করেই এ প্রবন্ধ। অল্প কথায় জেনে নেই কোন কাজ গুলো তোমাদের জন্য এখনই প্রয়োজন।
এক. সোলায়মান সুখন নামের এক ভদ্রলোক আছেন যিনি কথায় কথায় বলেন, এইটা কর ঐটা কর, যেমনে পার কর। এমনও একবার বলেছিল “দরকার হয় বন্ধুর হাতে পায়ে ধরে হলেও করে ফেল তবুও তোমাকে করতে হবে”।তোমরা যারা সেই বক্তব্য শুননাই তাদের মনে প্রশ্ন এসেছে যে কি করব?
উনি লাইফ হ্যাক নিয়ে একটা ভিডিও আপলোড করেছিলেন যাতে বেশ কয়েকটা বিষয়ে আলোকপাত করেছেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম শিক্ষা। বর্তমান বিশ্ব যেভাবে তর তর করে আধুনিকায়ন আর সফ্ট হয়ে যাচ্ছে তাতে কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তার কথা তোমাদের জানার বাহিরে নয়।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিটি কাজে কোন না কোনভাবে তুমি আমি সবাই কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল।
মনে কর তুমি সকাল সকাল একটু বেড়াতে বের হওয়ার প্লান করেছ, একটা জায়গাও সেই মত ঠিক করে রেখেছ কিন্তু তুমি ঠিক চিন না জায়গাটি কোথায়, কি কি আছে দেখার মত। তখন যদি বাসায় কেউ নাও থাকে তোমাকে কিন্তু একজন হেল্প করতে পারে। সে আর কেউ নন, গুগল আর তারজন্য চাই একটা কম্পিউটার। আবার মনে কর তোমার স্কুলে একটা নির্দিষ্ট জায়গার বর্ণনা করতে বলে একটা এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে।
এখন যদি তুমি সেখানে গিয়ে জানতে চাও তবে তা একদিকে হবে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতি। দুইয়ের একও না করেই একটা উপায় আছে, জান সেটা কি? তাহল কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষন। তুমি যদি কম্পিউটারের মাধ্যমেই কাজটি কর সাথে সাথে তা সেব করে রাখতে পার। এটা তো করলে তোমার নিজের প্রয়োজনে, কিন্তু তুমি চাইলেই তোমার ছোট্ট কষ্টটুকু দ্বারা আবার অন্যকেও সহযোগীতা করতে পার। ( www.academia.edu / hometaskmaker.com / সব জান্তা wikipedia.com ) নামক কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে তোমার লিখাটা তুমি পোস্ট করে দিতে পার যার দ্বারা অন্যরাও উপকৃত হতে পারবে। অতএব এটা স্পষ্ট যে সব কাজের আগেই বন্ধের মধ্যে এ ছোট্ট কাজটি করে ফেলতে হবে।
দুই. আমি খুব আশ্চর্য হই এটা ভেবে যে, একটা স্টুডেন্ট ১০/১২ বছর যাবৎ ইংরেজী পড়ার পরেও এক পৃষ্ঠা ইংরেজী লিখতে ও বলতে পারে না। মজার ব্যপার কি জান? আমরা ৭ জন শহীদের বিনিময়ে মাতৃভাষার সম্মান পেলেও তা এখন আর তেমন সম্মানের কাতারে নাই এর কারণ হল বিশ্বায়ন এবং সময়ের প্রয়োজন। তুমি যখন তিনমাস পর কোন একটা ভাল কলেজে ভর্তি হতে যাবা তখন তোমাকে এ ভাষাতেই কথা বলতে হবে, উত্তর করতে হবে। আবার মনে কর তোমার প্রিয় ক্রিকেটারটা হঠাৎ তোমার সামনে চলে আসল। তোমার মনে কত বাসনা ছিল যে তুমি তার থেকে অটোগ্রাফ চেয়ে নিবে কিনন্তু তুমি যদি ইংরেজী না জান সেতো তোমার কথাই বুঝবে না।
এত কিছু বলার একটাই উদ্দেশ্য, ইংরেজী ভাষা এখন আর কেউ শুধু পাশ করার জন্য পরে না বরং সব কাজের জন্যই শিখে। কিভাবে খুব সহজে ইংরেজী শিখা যায় তার জন্য তারুণ্যের অহংকার আয়মান সাদিক করেছে এক জাদুর আবিষ্কার। যখন যা লাগবে ক্লিক করবা (10minuteschool.com) আর চলে আসবে তোমার প্রয়োজনীয় সব লেকচার। তো আর দেরী কেন, যখন যেখানে খুশী সেখানে বসে হয়ে যাও ইংরেজীতে পাক্কা। অতএব যেভাবে পার, যতকম সময়ে পার ইংরেজীতে কথা বলা, লিখতে পারাটা শিখে ফেলতে হবে।
তিন. তোমরা হয়ত পত্রিকা পড়তে পড়তে চোখে চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি একবার হলেও দেখেছ, আর সেখানে নিশ্চিত করে একটা শব্দ তুমি পেয়েছ “এক্সপেরিয়েন্স “। পৃথিবীটা এক্সপেরিয়েন্স চায়, শুধু এক্সপেরিয়েন্স। একটু খেয়াল করলেই দেখবা এক্সপেরিয়েন্স বা জানা শুনার কত দাম। মাঝে মধ্যে দেখবে তোমার যে বন্ধুটি ছোটখাট কিছু কাজে দক্ষতা রাখে তাকে স্যাররা একটু বেশী আদর করে, ধর তোমার কোন বন্ধু মেইলিং বা এন্ড্রয়েড সেটিংসে খুব ভাল দক্ষতা রাখে। সেজন্য স্যাররা কোন সমস্যায় পড়লেই তাকে ডাকে। এতে করে তার সাথে না চাইতেই স্যারদের একটা সম্পর্ক হয়ে যাচ্ছে । তাই যে করেই হোক সব কিছু সম্পর্কে নিজের জানা শুনার পরিধি বাড়াও।
চার. নতুন বন্ধুঃ তোমরা হয়ত একটা ছোট্ট প্রানীর কথা ভেবে মাঝে মধ্যেই খুব অবাক হও। এই তো এখন আবার চিন্তায় পরে গেছ, কোন সে প্রানী?।
হা হা, তোমরা সবাই তাকে চেন শুধু তার একটা গুনের কারণে। যখনই এ শহরে কোন কাজ হয় তার প্রিয় সে খবর পেয়ে যায় আর সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে হাজির হয় জায়গামত। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ, আমি কিসের কথা বলছিলাম। হু ঠিক ধরেছ, আমি পিপড়ার কথাই বলছিলাম। দেখ, শহরের যে প্রান্তেই চিনি বা অন্যকোন মিস্টি জাতীয় খাবার পরল সঙ্গে সঙ্গে সে হাজির। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু অন্যদের সাথে তার সখ্যতা এবং নিজের সজাগ দৃষ্টির কারণে। এখন যে তিনমাস ছুটি পেয়েছ এই তিনমাসে এলাকার যত বন্ধু আছে সকলের সাথে সখ্যতা গড়ে তুল এমনভাবে যেন এলাকার কোন এক প্রান্তে ভাল কোন প্রোগ্রাম, সেমিনার বা কোন সুযোগ এলে সাথে সাথেই তোমার কানে এসে যায়।আর প্রোগ্রামে অংশ নিতে নিতে তুমি হয়ে উঠবে এক অন্যরকম তুমি যাকে সবাই স্যালুট করবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। sayemkajal@gmail.com
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here