গরু ‘মা’মোঃ রফিক :: আঠারো হাজার মাকলুকাতের মধ্যে গরু একটি। পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ-তায়ালা বর্ণনা করেছেন-মানুষের কল্যাণে সকল প্রাণীই নিয়োজিত। আল্লাহ তায়ালার পবিত্র সত্তার কোরআনুল কারিমের মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম প্রাপ্ত হয়ে নবী রাসুলগণ ও আলেম-ওলামাগণের পরামর্শে কোন কোন প্রাণী খাওয়া জায়েজ আবার কোন কোন প্রাণী খাওয়া নিষেধ করা হয়েছে।

যেমন-গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বার গোসত খাওয়া জায়েজ করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু প্রাণীর গোসত খাওয়া হারাম করা হয়েছে। যেমন-শুকর, বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, হাতী, বানর, সাপ ইত্যাদি।

গরু সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে একটি সুরা রয়েছে। যেমন-আল বাকারা (গরু)। এখানেই শেষ নয় গরু কিভাবে জবাই করা হবে, কিভাবে বন্টন করা হবে, কোথায় পাওয়া যাবে ইত্যাদি সবই নবী/রাসুলের মাধ্যমে আল্লাহ-তায়ালার পবিত্র কিতাবসমূহে বর্ণিত রয়েছে।

তবে ঘোড়ার গোসত খাওয়া মতভেদ রয়েছে এবং ঘোড়ার একটি অংগের গোসত খেলে মানুষের পেটে নানা ধরনের অসুখের আশংকা থাকে।

গরুর গোসত খেতে ‘না’ করলেন আজমির শরীফ প্রধান। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছেন। কেন তিনি আল্লাহ-তায়ালার নির্দেশন হালাল প্রাণী খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এটা আমার বোধগম্য নয়। যে জিনিস খেলে কোন মানুষের অসুখ বিসুখের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে সেটা হয়ত ঐ ব্যক্তির জন্য উপদেশ হতে পারে। কিন্তু ওভারঅল সবার জন্য তাঁর পরামর্শ সঠিক নয়।

হিন্দু সম্প্রদায় গরুকে ‘মা’ বলে সম্বধন করেন। তাদের কাছে গরুর মুত্র এবং গোবর পবিত্র। অনেকে গরুর মুত্র পান করেন এবং বলে থাকেন গরুর মুত্র (চনা) পান করলে তারা নাকি অনেক ধরনের রোগের আরগ্য লাভ করেন। বিষয়টি বিজ্ঞান সম্মত কিনা বা বিজ্ঞানে স্বীকৃতি দেয় কিনা আদৌ জানতে পারিনি।

শুরুতেই বলেছি আঠারো হাজার প্রাণী সবই মানুষের কল্যাণে। গরু দিয়ে হালচাষ করা যায়, গরুর দুধ পান করে জীবন ধারণ করা যায়, গরুর গোসত একটি আমিষ জাতীয় খাদ্য, গরুর গোবর এক ধরণের সার, গরুর হার এক ধরণের সার, গরুর সিং দিয়ে চিরুনি তৈরীর করা হয় ইত্যাদি। সুতরাং গরু নানাবিধ উপকারী প্রাণী।

গরু নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় পুজা করে, গরুকে ‘মা’ বলে, তাদের কাছে গরু এক ধরনের পবিত্র। তারা গরু খায় না ঠিক আছে। কিন্তু কোন মুসলিম জাতী কেন গরু খাবেন না। তাদের কাছেতো আল্লাহ-তায়ালার নির্দেশনা রয়েছে পবিত্র কোরআনুল কারিমে। তারা কেন খাবেন না। কেনই বা আজমির শরীফ প্রধান নিষেধ করবেন? এছাড়া আজমির শরীফ প্রধান কি জানেন না? গো-মাংস রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারত বিশ্বর মধ্যে তৃতীয় স্থানে।

হিন্দু জাতির নিকট গরু পবিত্র। যুগ যুগ ধরেই তারা সেটা পালন করে আসছে। যেমন-রাজা গৌরগবিন্দের শাসন আমলে গরু খাওয়া, গরু জবাই করা সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল। এই পবিত্র দেবতা বা মায়ের সাথে তারা কি করে আপনি জানেন কি? জানলে শিহরিত উঠবেন। গরু যখন হালচাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে তখন তারা তাদের পবিত্র গরুকে মালবাহী ট্রাকে তুলে নিয়ে মরুভুমিতে ফেলে দিয়ে আসে। কিছুদিন পর ঐ গরুটি খাবার ও পানির অভাবে পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরে যায়। তখন একদল লোক মায়ের চামরা তুলে নিয়ে আসেন। ঐ গরুর গোসতসহ নারীভুরি শকুনের খাবার হয়। কিছুদিন পর আবার একদল লোক গিয়ে ঐ গরুর হারগোর নিয়ে আসেন।

সুতরাং কি করে তাদের দেবতাকে এমন অমানষিক কষ্ট দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। কি করে তাদের মায়ের সাথে এ রকম আচরণ করেন?

আমার সম্মানিত আজমির শরীফ প্রধান এর নিকট সবিনয় জানতে চাই-মানুষের তৈরী আইন যথা গুজুরাটে গরু হত্যায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এমন কি তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে গরুকে জাতীয় পশুর মর্যাদা দেয়ার আবেদন করেছেন।

অথচ আল্লাহ বিধান ‘শুকর’ খাওয়া হারাম এব্যাপারেও তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কি উপদেশ দিয়েছে বা সেই ব্যাপারে তাঁর নিকট কি ধরনের আবেদন জানিয়েছেন।

আজমির শরীফ প্রধান ব্যাখ্যা দিয়েছেন হিন্দু ভাবাবেগকে মর্যাদা দিয়ে মুসলমানদের উচিত গরু হত্যা বন্ধ করা বা গরুর গোসত খাওয়া ছেড়ে দেয়া। তিনি কি আল্লাহ-তায়ালার বিধান অস্বীকার করতে চাচ্ছেন? তিনি কি ভুলে গিয়েছেন কোরবানী দেয়া আল্লাহ-তায়ালার বিধান। আসুন আল্লাহ-তায়ালার পবিত্র সত্তাকে মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখি, নবীর সুন্নতকে ধারণ করি। আল্লাহ-তায়ালার নির্দেশিত হালাল হারাম বেছে চলি।

 

লেখকঃ লালমোহন, ভোলা। লেখকের  ইমেইল: soyeb4@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here