স্টাফ রিপোর্টার :: জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে রায় দিয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত (রায়) অমান্য বা উপেক্ষা করলে কল্পনাতীত শাস্তির হুশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোক্তা ড. কামাল হোসেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চট্টগ্রামে এটাই প্রথম সমাবেশ। লালদীঘি মাঠে অনুমতি না দেয়ায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ আয়োজন করা হলেও সমাবেশটি রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার সময় ড. কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন সবাই চায়। জনগণ হাত তুলে রায় দিয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত অমান্য বা উপেক্ষা করলে, যে শাস্তি আপনারা পাবেন তা কল্পনাও করতে পারবেন না।

জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণকে সরকার ভয় পায় বলেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভার অনুমোদন নিয়ে গড়িমসি করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন দিলে জনগণ ভোট দেবে। যাকে খুশি তাকে দেবে। জনগণ আর ভাঙা নৌকায় উঠবে না।

সমাবেশে ড. কামাল ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের উদ্দেশ করে বলেন, তারা মনে করে নিজেরাই দেশের একমাত্র মালিক। এটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আসলে এটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি নয়।

দেশের মালিক হলো জনগণ আর তারা সেবক। দেশ সেভাবেই চলবে যেভাবে জনগণ চাইবে। দেশের মালিকরা সচেতন হয়েছে। জেগে উঠেছে। জনগণের দাবি উপেক্ষা করলে যে শাস্তি পেতে হবে তা তারা কখনো কল্পনাও করতে পারছেন না।

ড. কামাল হোসেন বলেন, বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এর জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। সংবিধান লঙ্ঘনের জবাবদিহি আদায় করে ছাড়বে জনগণ।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার মুক্তি এখন আর চাওয়ার নয়, হওয়ার ব্যাপার।

সমাবেশ সামনে রেখে পুরো নগরজুড়ে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। নগরীর মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের পাহারা। কোনো কোনো স্থানে সমাবেশমুখী মানুষকে বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগে বুধবার প্রথম সভাটি হয় সিলেটে।

ড. কামাল আরও বলেন, আমরা লালদীঘি মাঠে জনসভা করতে চেয়েছিলাম। অনুমতি দেয়া হয়নি। প্রায় চার ঘণ্টা কষ্ট করে দাঁড়িয়ে জনগণকে বক্তব্য শুনতে হয়েছে। এর জন্য কৈফিয়ত আদায় করতে হবে।

শাস্তি দিতে হবে। লালদীঘি মাঠ কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়। এটাও জনগণের সম্পতি। এখানে জনসভা করতে না দিয়ে সংবিধান লংঘন করা হয়েছে। অসাংবিধানিক কাজ একটার পর একটা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যারা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে অসাংবিধানিক কাজ করছেন, তাদের শাস্তি দিতে হবে। একদিন না একদিন বিচার করতেই হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বলা হয়েছিল আরেকটা নির্বাচন দেয়া হবে।

কিন্তু এরপর ৫ বছর নির্বাচন দেয়া হয়নি। এটা সংবিধানবিরোধী ও ঘোরতর অপরাধ। জনগণ অতীতকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ভবিষ্যৎমুখী হওয়ায় চিন্তা করেছে। এ জন্য তারা পার পেয়ে গেছে। এবার সেটা হবে না। তিনি অবিলম্বে ৭ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।

শনিবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ড. কামাল। প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য দেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ভয় পেয়েছে। এমন ভয়, সভাও করতে দেয় না। জনগণকে আটকে রেখে কোনো স্বৈরশাসক টিকে থাকতে পারে না। দেশে এখন নতুন লড়াই শুরু হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের সেই লড়াই করছে জনগণ।

তিনি সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, এত ভয় কেন? জনসভা তো গণতন্ত্রের অংশ। আপনারা নাশকতার কথা বলেন। নাশকতা, সহিংসতা তো আপনারা করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যেদিন বাতিল হয়, সেদিন থেকেই দেশকে অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন হবে। জনগণ ভোট দেবে। যাকে খুশি তাকে দেবে। এটাই তো নিয়ম। কিন্তু আপনারা নির্বাচন দিতে চান না। কারণ আপনারা জানেন, জনগণ ভোট দিতে গেলে আপনাদের ভাঙা নৌকায় আর উঠবে না।

গুম-খুন বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক গুম হয়েছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। হাজারো মানুষ কারাগারে। তবু মানুষ দমেনি। রাস্তায় নেমে এসেছে। জনগণ জেগে উঠেছে। জয় জনগণের হবে।

বেগম খালেদা জিয়া তখনই বলেছিলেন, আমি নাও থাকতে পারি। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে দেশকে রক্ষা করতে হবে। সেই ঐক্য এখন গড়ে উঠেছে। সাত দফা দাবি আদায় করে আমরা ঘরে ফিরব।

মির্জা ফখরুল বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে জনসভা বানচালের জন্য। এতে সফলতা আসেনি। জনগণকে বাধা দিয়ে আটকে রাখা যায় না।

জাতির অস্তিত্ব তখনই টিকে থাকে যখন স্বাধীনতা রক্ষা হয়। আজকে স্বাধীনতা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না। মামলা অনেক দিয়েছেন। লাভ হবে না। জনগণ জেগে উঠেছে।সমাবেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতারা মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সদস্যসচিব মোস্তফা মহসিন মিন্টু, বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের সদস্যসচিব মেস্তাফা আমিন, এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন তানিয়া রব, বিএনপির উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নাল আবেদিন ফারুক, ড. সুকোমল বড়ুয়া, গোলাম আকবর খোন্দকার, ফজলুল হক ফজু, গণফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আ হ ম শফিউল্লাহ, সহসভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিদি, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, জেএসডির কেন্দ্রীয় নেতা জমির উদ্দীন স্বপন, জেপির আহসান হাবিব লিংকন, গোলাম জিলানি চৌধুরী, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, এলডিপি নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম, লুৎফর রহমান কাজল, আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, আবু সুফিয়ান, বেগম নূরী আরা সাফা, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, ম্যা মা চিং মারমা, অ্যাডভোকেট জানে আলম, সাবেক চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন, নগর যুবদল সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, নগর ছাত্রদল সভাপতি গাজী মোহাম্ম সিরাজ উল্লাহ প্রমুখ। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এসএম সাইফুল আলম ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here