শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বহিরাগত কতিপয় যুবকের হামলায় আহত হয়েছেন উপজেলার ছলিমপুর হাজী নাছির উদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মোমিন(৪০)। সেই সাথে হামলা করা হয় অধ্যক্ষের সাথে থাকা ৩ শিক্ষককে। গত ৩ দিন ধরে বিক্ষুব্ধ কলেজ শিক্ষকদের আন্দোলনের জেরে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। এ সময় বহিরাগতরা কলেজে ভাঙচুর ও তান্ডব চালিয়েছে। জানা গেছে, সকালে অধ্যক্ষ আব্দুর মোমিন নিজ মটর সাইকেলযোগে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সময় লাঠিশোঠা দিয়ে বহিরাগতরা তাকে মারধর করে।

হামলাকারীরা তার মটর সাইকেলটি ভেঙে চুরমার করে করে দেয়। একই সময়ে হামলা করা হয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, পার্থপ্রতিম বিশ্বাস ও কামরুজ্জামানকে। পরে অন্যান্য কলেজ শিক্ষকরা এসে তাদের উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস’লে যেয়ে পরিসি’তি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা রবিউল ইসলাম নামের এক শিক্ষককে বেদম মারধর করেন। শিক্ষকদের আন্দোলন ও মারপিটের ঘটনায় টানা দু’দিন এ কলেজে কোন ক্লাস হয়নি। শিক্ষকরা কলেজে আসলেও ক্লাসমুখি হচ্ছেন না। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা সকল শ্রেণি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের দাবি, কলেজ অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্ব্যবহার, একনায়কতান্ত্রিক কার্যকলাপ ও অনিয়মের প্রতিবাদে তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন।

তবে শিক্ষকদের এই আন্দোলনের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে কলেজের শিক্ষার্থীদের। তারা কলেজে এসে ক্লাস না হওয়ায় ফিরতে বাধ্য হচ্ছে বাড়িতে। ক্ষতিগ্রস- হচ্ছে শিক্ষাসূচির পাঠদান। কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা আরও জানান, কলেজ অধ্যক্ষ আবদুল মোমিন কলেজ শিক্ষকদের সাথে বিভিন্ন কাজের ত্রুটি ধরে অপদস- করে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। এক পর্যায়ে তিনি কলেজে দেরিতে আসার অপরাধে ৯ শিক্ষকের এক দিনের বেতন কর্তন করে বেতন শিট সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেন। এ ছাড়া কলেজের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী লিয়াকত আলীর কোন বৈধ কারণ ছাড়াই ২৬ দিনের বেতন কর্তন করেন। একইভাবে তিনি গত ৩১ জানুয়ারি কলেজের ৩ শিক্ষককে বিধি বর্হিভূতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। এ সব ঘটনায় কলেজের শিক্ষকরা প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষক রবিউল ইসলামকে মারধর করে কলেজ থেকে বের করে দেন। পরে ওই শিক্ষকরা সকল ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণি কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে ক্লাস রুমসহ কলেজের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। বন্ধ করে দেন কলেজের সকল কার্যক্রম। পরে শিক্ষকরা কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। শিক্ষক জিয়াউর রহমান, সঞ্জয় কুমার, আল মামুন, মুহসিন রেজাসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিকদের জানান, অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ, শিক্ষকদের বেতন কর্তন ও অবৈধ শোকজ বাতিল না করা পর্যন- শিক্ষকদের এ আন্দোলন চলতে থাকবে। কলারোয়া উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল খায়ের জানান, প্রতিবাদী শিক্ষকদের এই আন্দোলনের সাথে উপজেলা বাকশিস একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

কলেজের সার্বিক পরিসি’তির বিষয়ে আলাপকালে অধ্যক্ষ আব্দুল মোমিন শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের জানান, কোচিং ফির আদায়কৃত টাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩ শিক্ষক তার কাছে জমা না দিয়ে তারা নিজেদের কাছে রাখেন। তখন ওই টাকার বিষয়ে তাদের কাছে তিনি লিখিতভাবে একটি পত্রের মাধ্যমে জানতে চান। শিক্ষকদের সাথে তিনি কোনো দুর্ব্যবহার করেন না বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, কলেজে শিক্ষকদের বসার সুব্যবস’ার জন্য তিনি নিজ উদ্যোগে অত্যাধুনিক কমন রুমের ব্যবস’া করে দিয়েছেন। শিক্ষকদের কোন প্রকার অপদস- বা অসম্মানিত করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না বলে তিনি দাবি করেন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কলেজের কাউকে কোনো প্রকার হয়রানি বা অসম্মান করা হয় না বলে অধ্যক্ষ আব্দুল মোমিন জানান। তাঁর দাবি নিয়ম, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাই আমাদের চলার পথের মূল নির্ণায়ক। কলেজের দীর্ঘ দিনে গড়ে ওঠা শৃঙ্খলা ভাঙার জন্য কতিপয় শিক্ষক যে অপচেষ্টা করেছেন, তা কলেজের নীতি ও আদর্শ পরিপন’ী।

অধ্যক্ষ বলেন, বেলা ১১ টায় সরেজমিনে যেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বিএম নজরুল ইসলাম সার্বিক পরিসি’তি অনুধাবন করে তিনি গভর্নিং বডির মিটিং না করার পরামর্শ দেন। পরিচালনা কমিটির সভাপতি শিল্পপতি এনাম হক কলেজ অধ্যক্ষের ওপর হামলার ঘটনাটি দু;খজনক বলে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের জানান, কলেজের কোনো শিক্ষকের বেতন কাটা হয়নি। সুতরাং তা নিয়ে বিচ্ছৃঙ্খলা সৃষ্টির কোনো কারণ নেই। তিনি জানুয়ারি মাসের বেতন বিলে এখনো স্বাক্ষর পর্যন- করেননি বলে জানান। এদিকে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম তরিকুল ইসলাম জানান, ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষক তার কাছে শনিবার তাদের অভিযোগের একটি অনুলিপি দেয়। কলেজে বিচ্ছৃঙ্খলার খবর পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে দেন।

 

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডটকম/কামরুল হাসান/কলারোয়া।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here