মিলন কর্মকার রাজু , কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে

মাদ্রাসায় ঠিকমতো না আসার অপরাধে গত তিন ধরে একটি বড় গাছের গুঁড়ির সাথে পায়ে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে আউয়াল হোসেন (১০) এক শিশুকে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে এক মাদ্রাসা শিক্ষক ও তার পোষ্য ছাত্ররা। কলাপাড়ার মহীপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসায় এ মধ্যযুগীয় নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ মঙ্গলবার দুপুরে শিশু আউয়ালকে শিকল বাঁধা অবস’ায় উদ্ধার করেছে। শিশু নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ আনোয়ার জাহিদ (৪০)ও  নেছার উদ্দিন (১৫) এক ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে।

মহীপুর  পুলিশ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাযায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে পায়ে শিকল ও ঘাড়ে ১৫-২০ কেজি ওজনের গাছ গুড়ি বাধা একটি মাদ্রাসার পুকুরে গোছল করছে। এ দৃশ্য কলাপাড়া উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান খান সরকারী প্রাইমারী স্কুল ভেন্যু থেকে মহিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় যাওয়ার পথে পায়ে শিকল ও ঘাড়ে গাছের গুড়ি বাধা শিশুটি দেখে পুলিশকে জানান। মহিপুর পুলিশ তদন- কেন্দ্রের এএসআই ওসমান তাৎক্ষনিক ঘটনাস’ল মহিপুর নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে পায়ে শিকল ঘাড়ে গাছের গুড়ি বাধা আউয়ালকে উদ্ধার করে। এঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মাদ্রাসার প্রধান ও তার সহযোগী একই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

জানাযায়, বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার নাচনাপাড়া গ্রামের জেলে বেলাল হোসেন কলাপাড়ায় মাছ ধরতে এসে গত তিনমাস পূর্বে  আউয়ালকে এ মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসায় না আসার অপরাধে এ নির্মম নির্যাতন চালায় মাদ্রাসা সুপার। এমনকি নাওয়া-খাওয়া, ঘুম এমনকি প্রকৃতির ডাকেও তাকে এভাবে শিকল বাঁধা অবস’ায় যেতে হতো। এ ঘটনা এলাকার মানুষ জন দেখলেও ওই মাদ্রাসা শিক্ষকের ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। এমনকি প্রতিবাদ করতেও সাহস পায়নি।

মহিপুর পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান খান জানান, এ শিশুটিকে এভাবে শিকল বাঁধা দেখে সে ঠিক থাকতে না পেরে পুলিশকে খবর দিয়েছেন। শিশুটির সারা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে।
মহিপুর নূরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ আনোয়ার জাহিদ বলেন, ছেলেটি নিয়মিত মাদ্রাসায় না আসার কারনে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছেন। তার অভিভাবকদের সম্মতিতেই এ কাজ করেছেন বলে জানান।

মহিপুর তদন- কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস আই আবুল কাশেম জানান, বিষয়টি শুনে ঘটনাস’ল থেকে  শিশু শিক্ষার্থী কে উদ্ধার ও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ আনোয়ার জাহিদ ও নেছার উদ্দিন নামের অপর এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

শিশু আউয়ালের মা ফহিমা বেগম জানান, ছেলেটি মাদ্রাসা ফাঁকি দেয়ার জন্য আমি ওর বাবাকে বেধে রাখতে বলেছি। কিন’ এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে তা জানতাম না।

কলাপাড়া থানার ওসি মো. ইসাহাক আলী সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি আমরা কিছুক্ষন আগে জেনেছি। শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস’া গ্রহন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here