আসাদুজ্জামান সাজু,
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানার ওসি রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ঢাকার এক চোরকারবারীর পক্ষ নেওয়ার পাওয়া গেছে। জাহাঙ্গীর আলম নামের ঢাকার ওই চোরকারবারীর পাওনা টাকা তুলে দিতে কোনো মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই স্থানীয় ইদু নামের এক লাইনম্যান ও রেজোয়ান নামের অপর এক লাইনম্যানের বৃদ্ধ পিতা জসির উদ্দিনকে(৭৩) ধরে এনে ২৪ ঘন্টা থানায় আটকে রেখে ক্ষমতার জোড়ে টাকায় আদায় করলেন ওসি।
থানায় আটক দুই ব্যক্তি ও স্থানীয় থানা সূত্রে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার কতিপয় লাইনম্যানের সহযোগিতায় বরিশালের পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলার বাসিন্দা ঢাকার উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর এলাকার আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের চোরাকারবারী ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম অভি দীর্ঘদিন ধরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ও ভারতের কুচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর সীমান্ত পথে অবৈধভাবে চোরাকারবারী ব্যবসা করে আসছিলেন।
তবে সম্প্রতি ওই ব্যবসায়ীর দুটি চালান ঢাকায় খোয়া গেলে সেই মালামালের টাকা ফেরতের দাবি করে আসছিলেন জাহাঙ্গীর আলম অভি। সেই চোরাকারবারীর মালামালের টাকা আদায় করতে পাটগ্রাম থানার ওসি রেজাউল করিমের আশ্রয় নেন ওই চোরাকারবারী সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। আর ওসিও সেই চোরকারবারীর পক্ষ নিয়ে গত শুক্রবার(২-জানুয়ারী) সন্ধ্যা ৬টায় কোন অভিযোগ ছাড়াই লাইনম্যান রেজোয়ানের বাবা বৃদ্ধ জসির উদ্দিনকে কৌশলে ডেকে এনে থানায় আটকে রাখা হয়। সেই সঙ্গে আটকে রাখা হয় অপর লাইনম্যান ইসমাইল হোসেন ইদুকেও। এ দুই লাইনম্যান ছাড়াও আরো কয়েকজন স্থানীয় সীমানেত্মর চোরাকারবারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে অবৈধব্যবসা করতেন জাহাঙ্গীর আলম।
এ দিকে চোরকারবারীর পক্ষ নিয়ে এক বৃদ্ধাসহ দুইজনকে পাটগ্রাম থানায় আটকে রাখার খবরে স্থানীয় সচেতন লোকজনের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, ঢাকার ওই চোরকারবারীর কাছে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ওসি রেজাউল করিম কোন মামলা ছাড়াই তাদেরকে আটক করে রেখেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃদ্ধ জসির উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেন ইদুকে থানার হাজতে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় খোদ থানা পুলিশের একাধিক সুত্র সাংবাদিকদের জানান, ওসি স্যার কি কারণে একজন বয়োজেষ্ঠ্য ব্যক্তিকে এভাবে থানায় কনকনে শীতের মধ্যে আটকে রেখেছেন তা হয়তো তিনিই ভাল বলতে পারবেন। আমরা এ বিষয়ে তেমন কিছু জানে না বলে দাবি করেন থানায় কর্মরত একাধিক উপ-পরিদর্শক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই চোরকারবারি জাহাঙ্গীরের বাড়ি বরিশালের দুমকি উপজেলায়। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে বসবাসের সুবাধে ঢাকায় আব্দুলস্নাহপুরের বিএনপি রাজনীতি করতেন। এখন তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে মিলেমিশে রয়েছেন। সদ্য গেল বছরের জানুয়ারী মাসে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী উফারমারা এলাকার জসির উদ্দিনের ছেলে রেজোয়ান ঢাকায় এক ওষুধের দোকানে চাকুরীরত অস্থায় পরিচয় হয় জাহাঙ্গীরের সাথে। সেই পরিচয় থেকে জমজমাট হয়ে ওঠে জাহাঙ্গীরের অবৈধ চোরাকারবারী ব্যবসা।
জাহাঙ্গীর হোসেনের স্থানীয় লাইনম্যান রেজোয়ান হোসেন জানায়, ‘ভারত থেকে অবৈধপথে আসা কার্টুন আর বসত্মা পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠাতাম। তবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে সরাসরি কথাবার্তা জাহাঙ্গীর ভাই নিজেই বলতেন। সেই কার্টুনে চিপস বা চকলেট আছে বলে আমরা জানতাম। কিন্তু জাহাঙ্গীর ভাইয়ের শর্ত মতে, সেসব কার্টুন কখনোই খুলে দেখিনি। সেগুলোতে কি ধরনের মালামাল থাকতো তা জানি না।’
পাটগ্রাম থানায় আটক থাকা ইসমাইল হোসেন ইদু ও রেজোয়ানের বৃদ্ধ পিতা জসির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘কোনো অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ অন্যায়ভাবে আমাদেরকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে থানায় আটকে রেখেছেন। আমরা বিচার চাই।’
বুড়িমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আছির উদ্দিন আহম্মেদ দুই গরীব অসহায় লোককে কোনো মামলা ছাড়াই পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি নারায়নগঞ্জের সেই আলোচিত ৭ ব্যক্তিকে অপহরণ ঘটনাটির স্টাইলে ঘটানো হয়েছে। এভাবে পুলিশ চোরকারবারীর টাকা তুলে দিতে লোকজনকে বাড়ী থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারেন কি না। তা নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জনের ডালপালা ছড়িয়ে পড়েছে।’
আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের চোরাকারবারী জাহাঙ্গীর আলম অভি লাইনম্যান ইসলামইল হোসেন ইদুর কাছে ২৫ হাজার টাকা ও রেজোয়ান হোসেনের কাছে ১লাখ ব্যবসায়ীক টাকা পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘অস্ত্র জাতীয় কোনো মালামালের ব্যবসার সাথে আমি জড়িত নই। ভারতীয় চকলেট, হরলিক্স ও চিপসের ব্যবসা ছিল ওদের সাথে আমার। সেই টাকা তুলতে আমি থানার ওসি রেজাইল করিমের সহযোগিতা চাইলে তিনিই ওদের থানায় ধরে আনেন। বিষয়টি এখন মীমাংসার চেষ্টা চলছে।’
পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) রেজাউল করিম রেজা চোরাকারবারী জাহাঙ্গীর আলমের লাইনম্যান ইসলামইল হোসেন ইদুর কাছে ১৫ হাজার টাকা নগদ জমা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসা জাহাঙ্গীরের পাওনা টাকার একটি ননজুডিশিয়াল স্টাম্প পেয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে আনা হয়েছে। রেজোয়ানের টাকাও তোলার চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রায় দুদিন ধরে কোন মামলা ছাড়াই থানায় আটকে রাখা আইন সম্মত কিনা- এমন প্রশ্ন এড়িয়ে ওসি বলেন, ‘বিষয়টি আমি সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে জাহাঙ্গীর চোরাকারবারী কিনা তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন ওসি রেজাউল করিম।’