লক্ষ্মীপুরে সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়ম মানা হচ্ছে নাজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ চলাকালে সড়কে নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা মানছে না ঠিকাদার। সংস্কার কাজের সময় পানি না ছিটানোর কারণে ধুলা-বালিতে খুব কষ্ট পাচ্ছে চলাচলকারীরা।

ধুলা- বালির কারণে সামনে কী আছে তা দেখা যায় না। আশপাশের গাছপালা ও ফসলের ক্ষেত অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। সংস্কারের জন্য পুরনো কার্পেটিং তুলে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সড়কে বেড়েছে ধুলা-বালি। ফলে চলতি শুষ্ক মৌসুমে সড়কে যাতায়াতকারী জনসাধারণকে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪০ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে বসবার করা জনসাধারণ ও সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাত্রীরা বলছেন এ যেন ধুলার রাজ্যে বসবাস।

সওজ সূত্র জানায়, চন্দ্রগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ৭৪ কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৬৯ টাকা বরাদ্ধ হয়। এর মধ্যে নতুন মাটি ব্যবহারের জন্য বরাদ্ধ রয়েছে ৮ কোটি ১৯ লাখ ২৭ হাজার ১১৮ টাকা। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর থেকে রায়পুরের বর্ডার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার নির্মাণের জন্য ৫৮ কোটি ৯৪ লাখ ১৩ হাজার ৫৭ টাকা বরাদ্ধ হয়। নতুন মাটি ব্যবহারের জন্য ১০ কোটি ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩৯ টাকা বরাদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ধুলা-বালি রোধে পানি দেওয়ার জন্য বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্ধ রয়েছে। কাজ দুটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার রানা বিল্ডার্স।

পরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজে চুক্তিবদ্ধ হয় হাসান বিল্ডার্স ও মেসার্স সালেহ আহমেদ। তারা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে। গত চার মাস ধরে লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার ও সম্প্রসারসহ চলছে উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন লরিতে করে ধুলা রোধের জন্য পানি ছিটানোর কথা থাকলেও ঠিকাদার পানি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন পথচারীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।

লক্ষ্মীপুরে সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়ম মানা হচ্ছে নাস্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ধীরগতিতে সংস্কারকাজের কারণে বাড়ছে এ সড়কে দুর্ঘটনা ও ধুলাবালুর অত্যাচার। বর্ষাজুড়েই ছিল কাধাপানি আর খানাখন্দকের দুর্ভোগ। এখন সড়কে বেরোলেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে ধুলাবালির, এই দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। ধুলাবালুর আন্তরণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে সড়কের আশপাশের ভবন, দোকানপাট ও গাছপালা। এ সড়কে পথচারী আর যাত্রীদের চলাচল করতে হয় নাক ও মুখ চেপে। দেখে মনে হয় মরুভূমিতে বসবাস করছে মানুষ। সড়কে যাওয়া-আসা করতে গিয়ে শ্বাসকষ্ট ও সর্ধি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। সড়কে পানি না দিয়ে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছে মত কাজ করায় উন্নয়নের ধুলায় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এলাকাবাসীর।

মঙ্গলবার সড়কটির নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান কাজে নিম্মমাণের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও সড়কে পানি না ছিটানোর কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত কাজ করা ও সড়কে নিয়মিত পানি ছিটানোর জন্যে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায়কে কাজ তদারকির দায়িত্ব দেন।

সড়ক দিয়ে চলাচল করা স্কুল ছাত্র কাউছার, তামিম, আরাফাত, কলেজ ছাত্রী মিলি, তামান্ন বলেন, সড়কে পানি ব্যবহার না করায় ধুলা-বালিতে চলাচল করতে আমাদের কষ্ট হয়। ধুলা-বালির কারণে আমাদের চোখ জালা পোড়া করে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়াও সড়কের কিছুদূর পর পর এক লেন বন্ধ রেখে অন্য লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় আমরা সময় মতো স্কুল-কলেজে যেতে পারছিনা।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, ধুলার দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, হাঁপানি, চোখের সমস্যা, সর্ধি, কাশিসহ মানুষ বহু রোগে আক্রান্ত হতে পারে। গত চার মাস ধরে লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে অতিরিক্ত ধুলাবালির কারণেই নানা সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে সড়কের আশপাশের বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ঠিকাদারকে সড়কে নিয়মিত পানি ছিটানোর জন্য বলা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here