পরিকল্পনা মন্ত্রীবাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে :: পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমডিজি বাস্তবায়নে তাঁর সরকারের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘জাতিসংঘ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এমডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্টভাবে এবং লক্ষ্য স্থির করে কাজ শুরু করেন।

স্থানীয় সময় বুধাবার বিকেলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতিসংঘের হাই লেভেল পলিটিক্যাল ফোরামের সফলতা নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে বিষদ ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

‘দারিদ্র্য নির্মূল এবং পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক জাতিসংঘের ‘হাই লেভেল পলিটিক্যাল ফোরাম (এইচএলপিএফ)’ এর কার্যক্রম শেষ হয়েছে। গত ১০ জুলাই শুরু হওয়া নয় দিন ব্যাপী এ কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হয়েছে ১৯ জুলাই বুধবার।পরিকল্পনা মন্ত্রীর নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উল্লেখ করেন এইচএলপিএফ এর মূল অংশ ছিল ‘ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ’ বা ভিএনআর সেগমেন্ট। ১৭-১৯ জুলাই পর্যন্ত মন্ত্রী পর্যায়ের এই সেগমেন্টে স্বপ্রনোদিতভাবে বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের ৪৪টি সদস্য রাষ্ট্র স্ব স্ব দেশের এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। বাংলাদেশ এ রিপোর্ট উপস্থাপন করে ১৭ জুলাই অপস্রাহ্নে ভিএনআর-এর ৩নং সেগমেন্টে।

২০১৫ সালে এমডিজি বাস্তবায়ন শেষে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জন্য এসডিজি প্রণয়ন করে। এমডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমডিজি বাস্তবায়নে তাঁর সরকারের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘জাতিসংঘ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এমডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্টভাবে এবং লক্ষ্য স্থির করে কাজ শুরু করে। সরকার এসডিজি’র সফল বাস্তবায়নের লক্ষে একজন ‘এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী’ নিয়োগ দিয়েছেন যা বিশ্বের অনেক দেশেই নেই।

মন্ত্রী বলেন, এসডিজি গ্রহণের পর গত দেড় বছরে বাংলাদেশ এর বাস্তবায়নে কতটা সফলতার সাথে এগিয়ে চলছে, এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ কী এবং এ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশলসমূহ কী তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে বাংলাদেশ স্বপ্রনোদিতভাবে একটি জাতীয় রিপোর্ট প্রণয়ন করে যা এইচএলপিএফ-এর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেগমেন্ট ভিএনআর-এ উপস্থাপন করা হয়।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ভিএনআর সেগমেন্টে নেতৃত্ব দেন। ‘ইরাডিকেটিং প্রোভার্টি এন্ড প্রমোটিং প্রোসপারিটি ইন এ চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক বাংলাদেশের এই জাতীয় রির্পোট উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারের এসডিজি বাস্তবায়নের মুখ্য সমন্বয়কারী মো: আবুল কালাম আজাদ।

একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এই রির্পোট উপস্থাপন করা হয়। উল্লেখ্য এসডিজি’র ১৭টি অভীষ্টর মধ্যে বাংলাদেশের রিপোর্টটিতে ৭টি অভীষ্ট যথা: দারিদ্র্য নির্মূল (অভীষ্ট-১), ক্ষুধামুক্তি (অভীষ্ট-২), সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ (অভীষ্ট-৩), লিঙ্গ সমতা (অভীষ্ট-৫), শিল্প উদ্ভাবন ও অবকাঠামো (অভীষ্ট-৯), জলজ জীবন (অভীষ্ট-১৪) ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব (অভীষ্ট-১৭)- বাস্তবায়নের অগ্রগতি উল্লেখ করা হয়। এসডিজিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে উল্লেখ করে এর বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বিভিন্ন কৌশল যেমন- সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজিকে সন্নিবেশিত করা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে এসডিজিকে অন্তর্ভুক্ত করা, এসডিজি ট্রাকার সৃষ্টি, আন্ত:মন্ত্রণালয় এসডিজি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি গঠন, মন্ত্রণালয়ের ম্যাপিং এবং ডেটাগ্যাপ এনালাইসিস এর মতো বিষয়গুলোও এখানে তুলে ধরা হয়।

ভিএনআর প্রেজেন্টেশনে দেশের উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রদর্শন করা হয়। এখানে দেখানো হয় উচ্চ ও নিম্ন দারিদ্র্য রেখা যথাক্রমে ২৪.০৩% ও ১২.০৯% ভাগে নেমে এসেছে, যা ১৯৯১ সালে ছিল যথাক্রমে ৫৬.০৭% ও ৪১.০১%। প্রধানমন্ত্রীর প্রাধিকার প্রকল্প একটি বাড়ি একটি খামারের পাশাপাশি উঠে আসে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণ, ডিজিটাল ফিনানসিয়াল সার্ভিস এবং জনগণের দোরগোড়ায় সেবা প্রদানের লক্ষে গৃহীত বিশেষ বিশেষ কর্মসূচিগুলো। পদ্মা সেতুসহ মেগা অবকাঠামো প্রকল্পসমূহও এ রিপোর্টে স্থান পায়।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫টি ভিশন, যথা: ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা, ২০৩০ সালে এসডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের মহাসড়কে উপনীত হওয়া, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়া, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময়ে পরিণত করা এবং ২১০০ সালে ডেলটা প্লান বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিরাপদ ব-দ্বীপ হিসেবে গড়ে তোলা- এ রিপোর্টে সন্নিবেশিত হয়।

এইচএলপিএফ-এর এই অধিবেশনে ভিএনআর ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ছিল টেকসই উন্নয়ন-এর উপর ইকোসক-এর ‘জেনারেল ডিবেট’। গতকাল বেলা তিনটায় ইকোসকের উচ্চপর্যায়ের এই ডিবেটে অংশ নেয় বাংলাদেশ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এলডিসির দেশসমূহের পক্ষে এই ডিবেটে বক্তৃতা প্রদান করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এলডিসির দেশসমূহের বৈশ্বিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর বক্তৃতায় এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত এবং স্বল্পোন্নত থেকে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর জন্য উদার আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি তিনি স্বল্পোন্নত দেশসমূহ এসডিজি বাস্তবায়নে যে সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে এবং যে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা তুলে ধরেন।

উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যেন স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে আর্থিক, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমান, টেকসই এবং সময়োপযোগী সহযোগিতা প্রদান করে। এলডিসি’র দেশগুলোতে ওডিএ (ঙউঅ), এফডিআই, এবং বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে উল্লেখ করে পরিকল্পনা মন্ত্রী এক্ষত্রে বিদ্যমান প্রতিশ্রুতিসমূহ পূরণের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহবান জানান। এলডিসি’র দেশগুলোতে এসডিজির অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে মর্মেও মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

ভিএনআর ও জেনারেল ডিবেটের পাশাপাশি বাংলাদেশ ছিল ৮টি সাইড ইভেন্টের আয়োজক। এসকল সাইড ইভেন্টে সহ-আয়োজক ছিল জার্মানী, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ভিয়েতনাম, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইথিওপিয়া, ঘানা, এস্তোনিয়া, কাজাখিস্তান,কানাডা, নেদারল্যান্ডস্, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ ইউএনডিপি, ইউএনডিইএসএ, ইউএনওএইচআরএলএলএস ও জিপিইডিসি। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এইচএলপিএফ-এর আরও ১৫টি সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ১০ দিনব্যাপী এইচএলপিএফ এর এই অধিবেশনের সার্বিক সমন্বয় করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে অন্যান্যদের সাথে আরও অংশ নেন পরিকল্পনা কমিশনের জেনারেল ইকোনোমিকস ডিভিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম ও পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল করিম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জিআইইউ এর মহাপরিচালক আবদুল হালিম।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here