বোরহান উদ্দিন :: পৃথিবী ব্যতীত অন্য কোনো গ্রহে অন্য কোনো প্রাণী আছে কিনা সেই তর্ক-বিতর্ক এখনও চলছে। মহাশূন্যে কোথাও কেউ আছে কিনা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য চলছে বিরামহীন প্রচেষ্টা। বিস্ময়কর এই জগৎতের বাহিরে কতটা কি আছে আমরা তা জানি না? আরও কত কোটি কোটি গ্যালাক্সি রয়েছে, তা বলার ক্ষমতা এখনো আমাদের জানা নাই? আমরা তো কেবল চাঁদে পা দিলাম, মঙ্গলে যান প্রেরণ শুরু করলাম। কিন্তু এর বাইরে প্রায় সবই আমাদের অজানা। অজানা সেই জগতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা অস্বাভাবিক নয় বলে আমার বিশ্বাস। ঠিক বুঝেছেন, আমি আসলে এলিয়েনের কথা বলছি।
ইংরেজি “Aliens” শব্দটি অনাকাঙ্ক্ষিত বা অনাহুত কিংবা অপরিচিত আগন্তুককে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েন (Aliens) বলতে পৃথিবী-ভিন্ন মহাকাশের অন্য কোনো স্থানের প্রাণকে বোঝায়। অনেকেই ভিনগ্রহের প্রাণী বলতে মানুষের আকৃতির প্রাণী বুঝে থাকলেও বস্তুত যেকোনো ধরণের প্রাণীই এতালিকায় ধর্তব্য হতে পারে- এধারণায় পৃথিবী-ভিন্ন অন্য জগতের একটা সূক্ষ্ম ব্যাকটেরিয়াও ভিনগ্রহের প্রাণী হতে পারে। ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষের অজ্ঞতাই মূলত এই অপরিচিত প্রাণীদের জন্য “aliens” নামটি বরাদ্দ করেছে। বাংলায় পৃথিবী-ভিন্ন অন্যগ্রহের প্রাণকে একত্রে ভিনগ্রহের প্রাণী বলা হয়।
অর্থাৎ এলিয়েন বলতে এমন জীবকে বোঝায় যাদের উদ্ভব পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্য
কোথাও। আর সেখানেই এদের বসবাস। এলিয়েন দেখতে কেমন হবে তার কোনো ঠিক নেই। তারা দেখতে পৃথিবীর প্রাণীদের কাছাকাছিও হতে পারে, আবার এ ধারণা থেকে সম্পূর্ণ আলাদাও হতে পারে। আবার সত্যি সত্যি মহাবিশ্বে এলিয়েনের কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা এ নিয়েও দ্বিধার অন্ত নেই। তবে এলিয়েন আসলেই রয়েছে_ এরকম বিশ্বাসীদের সংখ্যাই বেশি। এলিয়েনরা দেখতে কেমন? আমাদের চেয়ে পিছিয়ে নাকি অনেক এগিয়ে? তাদের ভাষা কি? এলিয়েনদের এসব বিষয় সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের অস্তিত্ব রয়েছে- এ ধারণার পিছনে যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ খুঁজে পাওয়া গেছে।
ভিনগ্রহের প্রাণী সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞান কোনো সিদ্ধান্ত না জানালেও অনেকেই পৃথিবীতে তাদেরকে দেখার দাবি করেছেন এবং পৃথিবীর একটা বৃহত্তর অংশের মানুষ বিশ্বাস করে যে, ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে। অনেকেই দাবি করে থাকেন, এলিয়েনরা পৃথিবীতে বহুযুগ আগে থেকেই প্রায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করেছে….
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষই এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। আর তাদের ধারণা এলিয়েন আমাদের মাঝেই হেঁটে বেড়াচ্ছে। ভিনগ্রহের প্রাণী বা “এলিয়েন” আছে এবং তারা আমাদের মধ্যেই মানুষের ছদ্মবেশে হাঁটছে, চলছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাস্তবে তার প্রমাণ মিলুক বা না মিলুক অন্ততপক্ষে প্রতি পাঁচজনে একজন মানুষ এমনটাই বিশ্বাস করে। এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে কি নেই, থাকলে তারা কোথায় কিভাবে রয়েছে এ নিয়ে “রয়টার্স বিসিএমএম”-এর এক বিশ্ব জরিপের ফলাফলে মানুষের এই বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে। ২২টি দেশের ২৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, ভারত এবং চীনে এ বিশ্বাস সবচেয়ে বেশি। সেখানে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে এলিয়েনরা মানুষের ছদ্মবেশে আমাদের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবশ্য, বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ মানুষই এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না।
বাজার গবেষণা সংস্থা “ইপসস”-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জন রাইট বলেন, “জরিপের ফলাফলে এটা মনে হচ্ছে যে, জনসংখ্যা বেশি হওয়ার সঙ্গে। এলিয়েনে বিশ্বাস বেশি থাকার হয়তো একটা সম্পর্ক আছে। কেননা, কম জনসংখ্যার দেশের মানুষের মধ্যে এবিশ্বাস তুলনামূলকভাবে কম।” এছাড়া দেখা গেছে, এলিয়েনে বিশ্বাস নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি। পুরুষদের মধ্যে এ বিশ্বাস ২২ শতাংশ হলেও নারীদের মধ্যে তা ১৭ শতাংশ। আর ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এলিয়েনে বিশ্বাস বেশি।
আর বিশ্বের অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারণা, এই মহাবিশ্বে আমরা মোটেও একা নই। আমাদের মতো আরও অনেক বুদ্ধিমান প্রাণীই নাকি ছড়িয়ে আছে মহাবিশ্বে। আর এদেরই আমরা এলিয়েন নাম দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এরকম কিছু যদি থেকেই থাকে, তাহলে এরা কেমন? তারা খায়ই বা কি? তাদের কি বুদ্ধি আছে? নাকি স্রেফ পোকামাকড়ের মতো বোকাসোকা। বিজ্ঞানবিদরা মনে করে তারা হয়তো নিয়মিত ভাবেই পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। আর এ কারণেই হয়তো পৃথিবীতে হঠাৎ হঠাৎ তারা দেখতে পেয়েছে কিছু অদ্ভুত চেহারার জীব। যারা চোখের পলকেই আবার তারা মিলিয়েও যায়।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের ধারণা, “এলিয়েন আছে, অবশ্যই আছে। এত বড় মহাবিশ্ব আর এত গ্রহ-নক্ষত্র-ছায়াপথ, এদের মধ্যে কি কোথাও নেই এলিয়েন! তিনি বিশ্বাস করেন, অবশ্যই এলিয়েন আছে। শুধু আমরাই তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। তবে একদিন তাদের খোঁজ পাওয়া যাবেই।”
এব্যাপারে মগজ ধোলাই এর প্রতিষ্ঠাতা এবং গবেষক মাহিন বলেন, ‘নাসা অনেক কথাই গোপন রাখে। তারা আমাদেরকে বোঝাতে চায় এলিয়েন বিশাল মাথাওয়ালা চিকন শরীরের অন্য কোন গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণী। কিন্তু এটা পুরোপুরি ঠিক না। এলিয়েন আসলে শুধু এমন না। পৃথিবীর মধ্যেই থাকে তারা। আমাদের পৃথিবীর মধ্যেই আরো একটা পৃথিবী রয়েছে। যেটাকে আমরা অন্তঃপৃথিবী (inner world) নামে চিনি। পৃথিবীর অভ্যন্তরে অনেক টানেল রয়েছে যেগুলোর মুখ সাধরণত বন্ধ থাকে। এর দু’ একটা মুখ সম্পর্কে আমরা জানি। এর একটি মুখ রয়েছে তিব্বতে।
এছাড়াও ধারণা করা হয় ভ্যাটিকান সিটিতেও টানালের মুখ রয়েছে। আর কিছু দিন আগে চীনে একটা পুকুরে মাঝখানে বড় একটা গর্ত হয় তা আমাদের মনে আছে। অন্তঃপৃথিবীতে আমাদের (outer world) মত এত নেগেটিভ প্রভাব নেই। তাদের ওখানে সবাই এক। এসব কারণে তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, যেহেতু তারা প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে আছে তাই ওরা আমাদেরকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আমদের বহিঃপৃথিবীর বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রযুক্তি নিয়ে অনেক প্রজেক্ট করছে। আমরা একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই তা জানতে এবং ধরতে পারবো।
ঠিক তের হাজার বছর আগে আটলাস সভ্যতা ধ্বংস হয়েছিল। তবে এটা সত্যি পৃথিবী দখলের জন্য এখনও চলছে ‘তারকা যুদ্ধ’। কারন পৃথিবীর রয়েছে আলাদা কিছু ক্ষমতা।”
লেখক এবং সাংবাদিক আব্দুল্লাহ নুহু বলেন, “এলিয়েন বিষয়টা আমার কাছে বিবেচনা করার মতো কিছু মনে হয়।”
এদিকে সিআইএর সাবেক সদস্য এডওয়ার্ড স্নোডেন তার ব্লগে দাবি করেন, ‘সিআইএ এর হয়ে বেশ কিছু এলিয়েন কাজ করেন। যারা গভীর সমূদ্রের মাঝে একটি ঘাঁটিতে অবস্থান করেন। সেখানে যাওয়ার অনুমতি সাধারণত বিজ্ঞানীদেরও নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখানে যারা আছেন তারা অন্য গ্রহের কেউ নয়। তারা আন্তঃপৃথিবীর আত্মা। তবে তারা প্রায় বিলিয়ন বছরের উপরে বেঁচে আছে। এখানে তারা সম্পূর্ণ আলাদা তাপমাত্রায় থাকে।’
এদিকে, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান এসেঞ্জ দাবি করেন, যে আমরা পৃথিবীতে এক নই। সেখানে তিনি ইউএফও এবং অন্য গ্রহের প্রাণীর কথাও উল্লেখ করেন। তিনি সিআইএ এর সেক্রেটারি, প্রেসিডেন্ট এবং বড় বড় কর্মকর্তাদের সাথেও অন্য গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীদের সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।”
কিছুদিন আগে নাসার গবেষকদের দাবি করেন, এলিয়েনের অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া গেছে। নাসার গবেষকরা নাকি শনির সবচেয়ে বড় চাঁদ টাইটানে এলিয়েন বা মহাজাগতিক প্রাণী থাকার প্রমাণ পেয়েছেন। নাসার ক্যাসিনি থেকে পাঠানো ডেটা বিশ্লেষণ করেই গবেষকরা টাইটানে এ সূত্র খুঁজে পেয়েছেন। গবেষকদের বরাতে টেলিগ্রাফ অনলাইনে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, “শনির অনেকগুলো চাঁদের মধ্যে একমাত্র টাইটানের আবহাওয়াই প্রাণ ধারণের উপযোগী। আর চাঁদের এই আবহাওয়ায় জীবনের উৎপত্তি হয়েছে এবং তারা শ্বাস নিতে পারছে। আরো জানা গেছে, এ ভূপৃষ্ঠের জ্বালানি খেয়েই নাকি বেঁচে আছে টাইটানের এসব এলিয়েন। মানুষ যেভাবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস নিতে অক্সিজেন ব্যবহার করে তেমনি টাইটানের এলিয়েনরা হাইড্রোজেনে শ্বাস নিয়ে টিকে আছে।”
গবেষকরা জানিয়েছেন, “আগামী ৪০০ কোটি বছর পরে সূর্য যখন লাল বামন দৈত্যের আকার ধারণ করবে, তখন টাইটানে বাস করাটাই হবে উপযুক্ত। কারণ তখন এটিই হবে স্বর্গতুল্য।”
আরেক ধরনের এলিয়েন হচ্ছে রোবট এলিয়েন। তবে যেসব রোবট এলিয়েন পৃথিবীতে এসেছে তারা নাকি ঠিক এলিয়েন নয়। কেবল দূর কোনো গ্রহে বাস করা এলিয়েনদের পাঠানো দূত এরা। আমরা যেমন পৃথিবী থেকে অনেক রোবট বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছি, ব্যাপারটা অনেকটা সে রকমই।
হ্যাঁ, এটা ছিলো আধুনিক যুগে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে পৃথিবীতে এবং পৃথিবী থেকে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন অভিযান। আর প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় দার্শনিকদের প্রচেষ্টা দেখি এ বার।
খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ শতকে থেলাস নামের এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম ভিনগ্রহের প্রাণীর ধারণা পোষণ করেন। তার ধারণা মতে “দৃশ্যমান গ্রহ ব্যবস্থা ছাড়াও অন্য কোনো জীবনবহুল জগত রয়েছে।”
পুটার্চ নামের এক ব্যক্তি তার ধারণায় চাঁদে স্বর্গের অসুরদের আবাস ভূমিকে খুঁজে পেয়েছিলেন। অনুরূপভাবে মধ্যযুগের জ্যোতির্বিদগণও পৃথিবীর বাইরে অন্যান্য গ্রহে জীবনের কল্পনাই শুধু করতেন না, তারা কল্পিত জগতগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনেরও নিরন্তর প্রয়াস ও ধ্যান ধারণার চিহ্ন রেখে গেছেন ইতিহাসের পাতায়।
বিখ্যাত গণিতবিদ সি এফ গাউস সাইবেরীয় জঙ্গলের বৃক্ষরাজিতে একটি অতিকায় ত্রিকোণ তৈরি প্রস্তাব করেছিলেন। যা অন্যান্য গ্রহের অধিবাসীগণকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হবে। জে জে ভন লিট্রো সাহারা মরুভূমিতে জ্যামিতির পদ্ধতি অনুসারে সুবৃহত আকৃতির নালা তৈরি করে তাতে কেরোসিন ঢেলে রাতের বেলায় আগুন ধরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব রাখেন। সি গ্রস দিনের সূর্যালোকে অতিকায় আয়না স্থাপন করে আলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে ভিন গ্রহের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ পর্যন্ত দান করেছিলেন।
মাওলানা মিরাজ রহমান বলেন, পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন, তাঁর ইঙ্গিত সমুহের একটি – নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং এদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া জীব। তিনি যখন ইচ্ছা এদেরকে একত্র করতে সক্ষম। [আস শুরা : ২৯]
তিনি আল্লাহ যিনি সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং সমসংখ্যক (৭টি) পৃথিবীও সৃষ্টি করেছেন। [তালাক্ব : ১২]
এই আয়াত দুটি থেকে কি বোঝা যায়? পৃথিবীতে জীবন ধারনের জন্য যেমন পরিবেশ রয়েছে, এমন পরিবেশ বিশিষ্ট আরও অন্তত ৬টি গ্রহ এই মহাকাশে আছে। যেখানে তিনি প্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি চাইলেই এদের সবাইকেই একত্র করতে সক্ষম। আল-কুরআনের আরো অনেক আয়াতে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যে- শুধু আমাদের এই পৃথিবীই নয়, অন্য কোন অজানা প্রান্তেও রয়েছে আল্লাহর সৃষ্টি জীব। কিন্তু এর বিপরীতে মহাবিশ্বের কোথাও প্রাণ নেই এরকম কোন বার্তা আল-কুরআনের কোথাও পাওযা যায় না। সুতরাং ইসলামের আলোকে আমরা একথা বলতে পারি যে বিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে, হোক তার নাম এলিয়েন বা অন্য কিছু!
ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে বহু চটকদার এবং কখনও কখনও ভাবগম্ভির কাজও হয়েছে। যেমন লেখা হয়েছে বই, প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার প্রতিবেদন, তেমনি তৈরি হয়েছে গান, চলচ্চিত্র এবং এ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র। ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের মধ্যে সবার আগে উল্লেখযোগ্য হলো স্টার ট্রেক চলচ্চিত্রের নাম। এছাড়াও রয়েছে স্টিভ ম্যাকুইন অভিনীত ছায়াছবি দি ব্লব। আরো দেখতে পারেন ফার্মির হেঁয়ালি, সার্চ ফর এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (SETI), এরিক ভন দানিকেন এবং ক্রিস না হয় পিকে। বর্তমানে আরো নতুন নতুন ছবি আসছে চাইলে দেখে নিতে পারেন।
সভ্যতার সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত ঐ মহাকাশ কিংবা রাতের তারাভরা আকাশ হাতছানি দিয়ে ডেকেছে মানুষকে নিরন্তর। মানুষও সাড়া দিয়েছে সেই ইশারায় যুগে যুগে। আমরা এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করি যে, মানুষ সেই ইশারায় সারা দিয়ে প্রথম গিয়েছিল চাঁদে, সেই সাথে আমরা মনে করি পৃথিবী ব্যতীত অন্য কোথাও কোনো প্রাণী বা এলিয়েন নেই। কিন্তু আমাদের বিশ্বাসকে মাঝে শক্ত করে ঝাঁকুনি দেয় কিছু অমীমাংসিত রহস্য। আর সেই রহস্যগুলোর সৃষ্টি সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে, যখন কিনা আধুনিক বিজ্ঞানের আলো চলছে। আমরা জানি না কখন মানব জাতির এলিয়েন খোঁজার বিশাল অগ্রগতি অর্জিত হবে, তবে আমরা আশা করি এমন প্রচেষ্টা কখনই থেমে থাকবে না। কারণ অন্য ধরনের সংস্কৃতি এবং ভিন গ্রহের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হল মানব জাতির চিরদিনের আকাঙ্ক্ষা।
হ্যাঁ, যদি আরো উন্নত সংস্কৃতি বা নতুন কোনো বিষয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, তাহলে মানব জাতির সংস্কৃতিও আরো উন্নত হবে এবং বিজ্ঞানের জগতে উন্মুক্ত হবে নতুন এক জানালা। শেষে একটা বিষয় বলতে চায়। জানি আপনি বিশ্বাস করবেন না। তারপরও বলি পৃথিবীতে এলিয়েন আছে বলে আমরা প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে আছি। তার বড় উদাহরণ হচ্ছে ঘরে বসে টিভি দেখা অথবা মোবাইল ফোনে পৃথিবীর একপাশ থেকে অন্যপাশে তার ছাড়া কথা বলছি। তারা অনেক বুদ্ধিমান। একটু চিন্তা করে দেখুন। এটা মানুষ দিয়ে কি ভাবে হয়েছে শুধু এলিয়েনের সাহায্য ছাড়া? তাহলে আপনার কাছে প্রশ্ন থেকে যায়, পৃথিবীতে এরা আছে কি নাই……
আরো জানাতে পড়তে পারেন বই কিংবা পত্রিকা।
১. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের “আমরা কি একা?” (ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সংস্করণ)।
২. রণক ইকরামের “এলিয়েন কাহিনী” ৩ পর্বে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের
৭,৮,৯ নভেম্বর ২০১০ (প্রিন্ট) পৃ:৯।
৩. Extraterrestrial Intelligence in the Solar System: Resolving the Fermi Paradox , লিখেছেন রবার্ট এ. ফ্রেইটাস জুনিয়র।
৪. ‘Is There Anybody Out There?’ ভেগা সাইন্স ট্রাস্ট এবং BBC/OU’র ফ্রিভিউ ভিডিও।
৫. PBS: Life Beyond Earth টিমোথি ফেরিস-এর ছায়াছবি।
৬. PBS: Exploring Space – The Quest for Life লিখেছেন স্কট পিয়ারসন।
৭. Xenopsychology, লিখেছেন রবার্ট ফ্রেইটাস।
৮. “What Aliens Might Look Like” , ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
৯. Top stars picked in alien search, বিবিসি নিউজ।
লেখক: সমাজ উন্নয়ন কর্মী ও সংগঠক। borhan.2012@yahoo.com