উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার নির্মিত হচ্ছেশিপুফরাজী, ভোলা দক্ষিণ প্রতিনিধি :: প্রায় ২১৫ ফুট উঁচু ভোলার চরফ্যাশনে সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা নির্মিত হচ্ছে উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার । স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লহ আল ইসলাম জ্যাকবের উদ্যোগে চরফ্যাশন শহরের খাসমহল মসজিদ ও ফ্যাশন স্কোয়ারের পাশে এ টাওয়ারটি নির্মিত হচ্ছে।

টাওয়ারটিতে লিফটের সংযোজনও করা হয়েছে। থাকছে উচ্চ ক্ষমতার বাইনোকুলার, যাতে ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার নানা কিছু দেখা যাবে অনায়াসে।

প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ তলা বিশিষ্ট ওই দৃষ্টিনন্দন টাওয়ারটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সে লক্ষে ইতিমধ্যে চর কুকরি-মুকরি, ঢালচরসহ আশপাশের বনাঞ্চলে ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।

ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়ালেই পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদীর শান্ত জলধারা, পূর্বে মেঘনা নদীর উথাল-পাতাল ঢেউ, দক্ষিণে চর কুকরি-মুকরিসহ বঙ্গোপসাগরের বিরাট অংশ নজরে আসবে।

পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, ‘দীর্ঘদিন পিছিয়ে থাকা জনপদ হিসেবে পরিচিত চরফ্যাশন জুড়ে এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্বখ্যাত আইফেল টাওয়ারের আদলে নির্মিত হচ্ছে এই ওয়াচ টাওয়ার। এটি চরফ্যাশনসহ ভোলাকে আলাদা পরিচিতি দেবে বলে আশা করছি।’ বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে ওঠা চরাঞ্চল বিশেষ করে চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলাজুড়ে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনার হাতছানি।

চরফ্যাশনের দৰিণে সাগর মোহনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুকরি-মুকরি, ঢালচর, তারুয়া সৈকত প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি। কয়েক বছরে ওই স্পটগুলো ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসছেন ওইসব এলাকায়।

ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে রয়েছে হরিণ, বানর, বন মোড়গসহ নানা বন্যপ্রাণী। কিন্তু পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো কোনো স্থাপনা গড়ে ওঠেনি সেখানে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা অপার সৌন্দর্যের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চরফ্যাশনে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন এই টাওয়ারটি।

ইতিমধ্যে নির্মাণাধীন টাওয়ারটি দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটে যাচ্ছেন। স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী বাদল দেবনাথ জানান, টাওয়ারকে কেন্দ্র করে চারপাশে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেচাকেনা বেড়ে গেছে। এলাকার জমির দামও বাড়ছে। দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে চরফ্যাশনের আর্থ-সামাজিক চিত্র।

চরফ্যাশন পৌরসভার প্যানেল মেয়র এস এম মোরশেদ জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে চরফ্যাশন পৌরসভা খাসমহল মসজিদ ও ফ্যাশন স্কোয়ার সংলগ্ন ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। টাওয়ারটির ডিজাইনার হচ্ছেন বিশিষ্ট স’পতি কামর্বজ্জামান লিটন।

২০১৩ সালের ফেব্র্বয়ারি মাসে এর কাজ শুরু হয়। এর মধ্যেই প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৫ সালের শুর্বতেই টাওয়ারটি উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, ৭৫ ফুট মাটির নিচ থেকে ৭০টি পাথর ঢালাই পাইলিং ফাউন্ডেশনের ওপর নির্মিত টাওয়ারটি সম্পূর্ণ ইস্টিলের তৈরি। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় ওই টাওয়ারের চূড়ায় ওঠার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি থাকবে ১৬ জন ধারণ ৰমতার অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট। টাওয়ারের চারদিকে অ্যালুমোনিয়ামের ওপর ৫ মিলি ব্যাসের স্বচ্ছ গৱাস থাকবে।

এক হাজার বর্গফিটের ১৭তম তলায় থাকবে বিনোদনের নানা ব্যবস্থা। একসঙ্গে দুই শত পর্যটক সেখান থেকেই শক্তিশালী বাইনোকুলারের সাহায্যে কুকরি-মুকরি, তারুয়া দ্বীপসহ চারপাশের একশত বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পাবেন।

এ ছাড়াও থাকবে বিশ্রাম, প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের সুব্যবস্থা। তিনি জানান, চরফ্যাশনের টাওয়ারটির মূল উচ্চতা ১৮৫ ফুট। এর ওপর রয়েছে ৩০ ফুট দীর্ঘ সুদৃশ্য ফলক। ঢাকার কারওয়ান বাজার হাসনা টাওয়ারের ‘আর্কিটেক্‌ট ফোরাম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই প্রকল্পের কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘ইউনুছ-আল মামুন জয়েন্ট ভেঞ্চার সরকার স্টিল’ কারওয়ান বাজার, ঢাকা।

চরফ্যাশন উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, ওই টাওয়ারের মাধ্যমে আমরা দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে চরফ্যাশন ও মনপুরাকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলতে চান। সে লক্ষে ইতিমধ্যে কুকরি-মুকরি, ঢালচরসহ আশাপাশের বনাঞ্চলে ইকোপার্ক গড়ে তুলছেন। সেখানে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক বিলাসবহুল রেস্টহাউস করা হচ্ছে।

সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা চরফ্যাশনের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে শুধু বাংলাদেশই নয়, বিদেশ থেকেও বহু পর্যটক এখানে আসবে। পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে সরকারও এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে মনে করছে এখানকার মানুষ।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here