হাতিয়া : নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে মেঘনা নদীতে অন্তত ২০টি মৃতদেহ ভাসতে দেখেছেন স্থানীয়রা। এসব মৃতদেহের মধ্যে কয়েকটি নিয়ে কুকুরে টানাটানি করতে দেখা গেছে।

রোববার সকালে সুখচর ইউনিয়নের কাদির সর্দারদের বাড়ি সংলগ্ন উত্তরপাশের নদীতে ফুলে ফেঁপে যাওয়া ও অর্ধগলিত ৪টি মৃতদেহ ভাসতে দেখেন এলাকাবাসী।

চেয়ারম্যানঘাট বাজারের পাশের উপকূলীয় নদীতে ভাসমান অবস্থায় আরো ৪ মৃতদেহ দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। সেগুলো কুকুরে টানাটানি করতে দেখেছেন তারা।

খবর পেয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহগুলো দেখতে পান। পরে তারা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোনে জানানোর চেষ্টা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাতিয়ার সুখচর ইউনিয়নের বৌবাজার, চেয়রম্যানঘাট, বাদশামিয়া গ্রাম, চরআমানুল্ল্যাহ গ্রাম ও ঢালচর এলাকায় উপকূলীয় মেঘনায় ভাসমান অবস্থায় প্রায় ২০টি মৃতদেহ ভাসতে দেখা গেছে। জোয়ারের সময় সেগুলো ভেসে আসে। আবার ভাটার সময় নদীতে চলে যায়।

এদিকে, উপকূলে মৃতদেহ ভেসে থাকার খবর পেয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির হাতিয়া উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আনোয়ান হোসেন মুঞ্জু গতকাল শনিবার বিকেলে সুখচরের চেয়ারম্যানঘাটে সরজমিন দেখতে যান। তিনি বলেন, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওই ঘাটে একটি লাশ ভাসতে দেখে ছবি তুলি। আধাঘণ্টা পর একই ইউনিয়নের বাদশা গ্রামের পাশে মেঘনায় আরো ৩টি লাশ ভাসতে দেখেছি। অনেকটা দূরে থাকায় মৃতদেহের ছবি নেয়া যায়নি।

রোববার সকালেও বাদশাগ্রামের উত্তরপাশে আরো একটা লাশ ভাসতে দেখেছেন আনোয়ার হোসেন ‍মুঞ্জু। তিনি বলেন, সকাল ৭টার দিকে গ্রামের উত্তরপাশে আরেকটি লাশ নিয়ে কয়েকটি কুকুরকে টানা হেঁচড়া করতে দেখি। এগিয়ে গেলে কুকুরগুলো তেড়ে আসে। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে সেখানে গেলে কুকুরগুলো পালিয়ে যায়।

গতকাল শনিবার রাতে সুখচর ইউনিয়নের বৌবাজার এলাকায় উপকূলীয় নদীতে ভাসমান অবস্থায় কয়েকটি অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ ভাসতে দেখেছেন জেলেরা। বিকেলে সুখচর ইউনিয়ন মধ্যচর আমানুল্ল্যাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ৪টি মৃতদেহ ভাসতে দেখে লোকজনকে খবর দেয়। পরে হাতিয়া থানায় খবর দেয়া হয়। কিন্তু খবর পেয়েও পুলিশ মৃতদেহগুলো উদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। অজ্ঞাত পরিচয় ওইসব মৃতদেহের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

ধারণা করা হচ্ছে ৩/৪ দিন আগে লোকগুলোর মৃত্যু হয়েছে। গলিত হওয়ায় সেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে, গত বুধবার সকালে হাতিয়ার চর গিয়াইস্যা থেকে জলডাকাত বাহিনীর প্রধান আলাউদ্দিনকে (৪০) আটক করে র‌্যাব-১১। এ সময় অপহরণের শিকার জহর লাল (৩৫) নামের একজনকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

একাধিক সূত্রমতে, ঘটনার দিন ভোরে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের জাগনাচর ও মৌলভীবাজার এলাকায় অভিযান আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। এসময় ডাকাত সর্দার আলাউদ্দিন ও তার কয়েকজন সহযোগীকে আটক করে তারা। স্থানীয় লোকজন গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায় বলেও জানা গেছে।

হাতিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মো. ফজলে রাব্বি বলেন, খবর পেয়ে শনিবার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন ও এসআই টিপুসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো মৃতদেহ দেখতে পাননি। রোববার বিকেলে খবর পেয়ে আবারো পুলিশ সেখানে যায়। তবে কোনো মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকে হাতিয়ার বিভিন্নস্থান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ৪ ব্যক্তির মৃতদেহ নদীতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হয়। এর এক মাস পর রোববার আবারো অজ্ঞাতপরিচয়  ২০ ব্যক্তির মৃতদেহ নদীতে ভাসতে দেখা গেল। অভিযোগ রয়েছে, চলতি মাসে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা উপকূল এলাকায় জলডাকাতদের ধরতে অভিযান চালায়।

এর আগেও এরকম অভিযানের পর মেঘনায় লাশ ভাসতে দেখে গেছে। তবে কয়েকদিন আগে মালয়েশিয়ায় রহস্যজনকভাবে বিমান নিখোঁজের পর নানা কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের জলসীমায় অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। একসঙ্গে এত মৃতদেহ দেখে অনেকেই নানা সন্দেহ করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here