সেঁজুতি বড়ুয়া

এই যে সমুদ্র, আপনার জন্যে 
সেঁজুতি বড়ুয়া

 

‘ভাবুক’ প্রকৃতির বলে আমি প্রতিদিন কী কী যেন হারাই!

শখের পেনড্রা্ইভটা টিস্যু পেপার ভেবে একদিন
ফেলে দিয়েছিলাম জানালার ফাঁকে গ’লে…
পরে নীল শার্ট পরা একজন এসে দরজায় নক করে বলেন-
‘সবাই তো শামুকে নাম লেখায়, এই প্রথম কারো নাম
পেনড্রাইভে খোদাই করা দেখলাম, এটা নিশ্চয়ই আপনার?’

পেনড্রাইভটা নয়, আমি তখন অবাক হয়ে দেখি
একটা আস্ত সমুদ্র- বিপুল নোনাগন্ধ ঝাউবন নিয়ে
কী ভীষণ পুরুষালি গাম্ভীর্যে দরজায় এসে দাঁড়িয়ে!

আমি যেন তখন তার চোখের দিকে তাকিয়ে
বলতে চেয়েছি- পেনড্রাইভটা আপনার কাছেই রাখুন
ওখানে ষোল জিবি মুভি আছে, একটা মুভি আছে সমুদ্র নিয়েই
তাতে একটা বালিকা সমুদ্রকে প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প শোনাতো
সেইসব গল্পে সমুদ্র নড়ে-চড়ে উঠতো…
গল্প শুনে খুশিতে ওর গায়ে বালি ছিটাতো…
গল্পের তীব্রতায় বিপুল গর্জনে ওকে প্রতিদিন জড়িয়ে ধরতো…
পায়ের কাছে বড় বড় ঝিনুক, মণিমুক্তা এনে ফেলতো…

এরপর, একদিন সমুদ্রটা ট্রেনের হুইসেলের সেই গল্পটা শুনতে চাইলে
বালিকা তাকে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া সবচে নীল নক্ষত্রের গল্পটা
বলতে চাইলো, সমুদ্রটা কিছুতেই গল্পটা শুনবে না, বালিকাও বলবে না…
শেষে সমুদ্রটা, বালিকাকে বলে- ঠিক আছে তাহলে আমার অতল গভীর
সুশীতল গহবরে আসো, সারা জীবন তোমার গল্প শুনবো….

নীল শার্ট পরা সমুদ্রকে আমার মনের কথাটা বলার আগেই
তিনি আমাকে জানান, সমুদ্র নিয়ে বানানো মুভিটা তার ভালো লাগেনি
এরকম কত বালিকারা সমুদ্রের কাছে ঘেঁসে নিজেদের গল্প শোনাতে আসে
কত বালিকা সেজেগুঁজে এসে ভালোবাসার কথা বলে
কত বালিকা নিজেকে আবার আত্মাহুতিও দেয়
তবে কোনো কিছুই শেষপর্যন্ত অতলে হারায় না
এই যেমন পেনড্রাইভটা…

পেনড্রাইভটা হাতে নিয়ে আমি দরজায় দাঁড়িয়ে
সমুদ্রকে নীল জলরাশি নিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে দেখি
জানালায় দাঁড়িয়ে ঝড়ের গর্জনে রাস্তায় আছড়ে পড়তে দেখি…

ঘুমের মধ্যেও একটা পুরুষ সমুদ্র কী ভীষণ থৈ থৈ জলরাশি নিয়ে
আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে মারছে, রক্তক্ষরণে জর্জরিত করছে
প্রবল জলতেষ্টায় বার বার কেঁপে কেঁপে উঠি…

এরপর থেকে আবার ফিরে পাবো বলে
বোকার মতো আমি আরও কী কী যেন হারিয়ে ফেলি…

 

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here