ঢাকা :: ’গার্লস টেকওভার’- উদ্যাপনের সাফল্যজনক অধ্যায়ের তৃতীয় বছরে এসে ‘এল সালভাদও থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত ১০০০ এর বেশি মেয়েশিশু সমতার দাবীতে বিশ্বের ৬০ টি দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ যেমন প্রেসিডেন্ট, মেয়র, কর্পোরেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রধান শিক্ষকসহ আরো বিভিন্ন পদে প্রতীকিভাবে কর্তৃত্ব গ্রহন করে। আর্ন্তজাতিক মেয়ে দিবসকে কেন্দ্র করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বব্যাপী এই আয়োজন মেয়েদের এগয়িে যাওয়ার পথে যে বিষয়গুলো বাঁধা হয়ে দাড়ায় সেগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।
‘গার্লস টেকওভার’- এর এবারের আয়োজনে বাংলাদেশ, ইেন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন-এর কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান), বরগুনা মিউনিসিপ্যালটি কর্পোরেশনের মেয়র, পটুয়াখালী চেম্বার অব কর্মাস-এর প্রেসিডেন্ট এবং ভোলার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যাম্যান তাদেরই এলাকার মেয়েশিশুদেরও নিকট প্রতীকি ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে প্রমান করে দেন যে বাংলাদেশের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দরাও মেয়েশিশুদের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তনে এবং তাদের ক্ষমতায়নে তাদের পাশে আছেন।
‘গার্লস টেকওভার’- এর অংশ হিসেবে লতা (১৬), ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের কান্ট্রি ম্যানেজারের (বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান) পদে প্রতীকিভাবে ক্ষমতা গ্রহন করে। অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে লতা বলেন, “যদি সমান সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে একটি মেয়েশিশুও ছেলেশিশুদেও মতোই সমান সাফল্য অর্জনে পারদর্শী।” একই সাথে ওয়েন্ডি ওয়ার্নার, আইএফসি এর কান্ট্রি ম্যানেজার বাংলাদেশ সহ বিশ্বের সকল দেশে মেয়েশিশু ও নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।
এদিকে পটুয়াখালী চেম্বার অফ কর্মাসের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের প্রতিকী দায়িত্ব গ্রহন করেন তাসনিম (১৭)। পটুয়াখালী চেম্বার অব কর্মাসের ৪৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নারী প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব নেয়। তাসনিম ক্ষমতা গ্রহনের পর বোর্ড ডিরেক্টরদের সাথে একটি সভায় তারা কিভাবে যুবনারীদের একজন নারী উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করতে পারেন সে বিষয়ে আলোচনা করেন। পটুয়াখালী চেম্বার অব কর্মাসের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পটুয়াখালীতে নারীদের ব্যাবসায়ী উদোক্তা হিসেবে গড়ে উঠা এবং সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
অন্যদিকে, ভোলায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতীকি দায়িত্ব পালন করেন সুমাইয়া (১৩)। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর সুমাইয়া ’যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির’ সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং শিশু বিবাহ ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে একটি রেজুলেশনের খসড়া প্রনয়ণ করেন। সুমাইয়া বলেন, ”এই প্রতিকী ক্ষমতা গ্রহনের মধ্য দিয়ে এখন আমার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে এবং এই আত্মবিশ্বাস একদিন আমাকে এই ধরনের নেতৃস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালনে সাহায্য করবে।”
পাশাপাশি বরগুনা পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব নেন আজনোভা (১৫)। দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে আজনোভা পৌরসভার কাউন্সিলর, অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দসহ সুশীল সমাজের সদস্যদের উপস্থিতিতে এক সভায় সভাপতিত্ব করেন। আজনোভা বরগুনা শহরটাকে মেয়েশিশু ও নারীদের জন্য নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের অংশগ্রহন এবং সহায়তা কামনা করেন। বরগুনা পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বরগুনা শহরে সকল প্রকারের নারী নির্যাতন, যৌন নির্যাতন এবং শিশু বিবাহ প্রতিরোধে তার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অরলা মারফি বলেন, ”এই গালর্স টেকওভারের মধ্য দিয়ে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল সরকারের প্রতি মেয়েশিশু ও নারীর প্রতি সকল প্রকারের নির্যাতন, বৈষম্য এবং অবিচারের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে আহবান জানাচ্ছে। এই পদক্ষেপ পরিবার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও প্রচার মাধ্যম সকল স্তরেই নিতে হবে। মেয়েশিশুরা অবশ্যই নিজেদের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পার। কিন্তু তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকার, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, মা-বাবা, নারী, পুরুষ ছেলেশিশুসহ সকলে মিলে চিহিৃত করতে হবে জেন্ডার বৈষম্য কি, কেন হয় এবং এটি দূর করতে তাদের ভূমিকা কি হতে পারে এবং কিভাবে তারা এটি দূর করতে পারে।”
আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে, সেনেগালের প্রধানমন্ত্রী, উগান্ডার ভাইস-প্রেসিডেন্ট, গুগল, ফেসবুক ও স্পোটিফাই সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক কর্পোরেট এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস্ এর সিইও, ফিনল্যান্ডের বৈদেশিক বানিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী এবং ভিয়েতনামের জাতীয় পরিষদ “গার্লস টেকওভার ২০১৮” তে অংশগ্রহন করেন।- প্রেস বিজ্ঞপ্তি