আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী
আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী

কেয়া চৌধুরী ::

আজ ২২ অক্টোবর আমার জন্মদিন । পরিবার পরিজন ছাড়াও শুভাকাঙ্খিদের শুভেচ্ছায় আমি আজ সিক্ত।
বড়বেলায় জন্মের দিনটি আলো -ঝলমলে। কিন্তু, যেদিন আমি এই পৃথিবীতে এসেছিলাম, সেই মুহুর্তটা ছিল আনন্দহীন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ।

বিদ্যুৎ লাইন বাড়ীতে থাকা সত্বেও বিচ্ছিন্ন ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। ভুলেও তখন আত্বীয়স্বজনেরা আমাদের ভাড়া করা বাড়ীতে আসতো না, পাছে না আবার বিপদ আসে !

হবিগঞ্জে টাউন হল রোড, ফখরুদ্দীন ঠাকুর সাহেবের ভাড়া করা বাড়ীতে একটি অন্ধকার ঘরে হারিকেনের আলোতে সুভাসিনি মাসির হাতে ভোর রাতে, আমার জন্ম হয়েছিল।

আম্মার কাছে শুনেছি, পচাত্তরের পনের আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার প্রতিবাদে আমার আব্বা রাজপথে মিছিল বের করেছিলেন।

আব্বার সেদিনের সে উদ্যোগকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখল, বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোস্তাক । আব্বাকে (কমান্ডেট মানিক চৌধুরী, এমপি ও গভর্নর হবিগঞ্জ মহকুমা) তলব করা হল । মোস্তাকের তরফ হতে প্রস্তাব এলো, তার মন্ত্রী পরিষদে যোগ দেবার । আব্বা সে প্রস্তাবকে কেবল প্রত্যাখনই করেননি, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী মোস্তাককে, পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন-মন্ত্রী সভায় যোগ দেবার জন্য প্রস্তাব দেবার আপনি কে?

আব্বার, এই দুঃসাহসিক আচরণের কারণে দীর্ঘ চারটি বছর ডিটেনশনে বিভিন্ন জেলে বন্দী থাকতে হয়েছে । আব্বা যখন গ্রেফতার হন, তখন আম্মার শরীরে আমার অস্তিত্ব ‍বিদ্যমান । আম্মার গর্ভকালীন পুরোটা সময় আব্বার অনুপস্হিতি -পরিবারে শুধু আর্থিক অনটনই নিয়ে আসেনি, এনেছিল জেলখানার অন্ধকারে আব্বাকে গুপ্তহত্যার আশঙ্কা ।

আমি হলাম সেই দুর্ভাগা সন্তান, যার জন্মলগ্মে পিতা থাকা সত্বেও স্নেহ ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম । চরম দন্যতা, আব্বা বেচে আছেন কি না সে অনিশ্চিয়তা আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে সেই দিনটিতে আমার জন্ম বার্তা পরিবারের কারও কাছেই আনন্দ অনুভূতির কারন সৃষ্টি করতে পারেনি ।

আজ জন্মদিনের কষ্টের স্মৃতি গুলোর মাঝেও যারা শুভেচ্ছা জানিয়ে আমাকে সিক্ত করেছেন, তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমার কৃতঙ্গতা রইলো।

 

লেখক: আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, সংসদ সদস্য, হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসন।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here