ষ্টাফ রিপোর্টার :: বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৮ মাস ১১ দিন কারাগারে বন্দী। আজ বুধবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া আইনজীবীদের তিনি প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছেন, ‘আমাকে এখনও কেন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না?’।
তিনি বলেন, ‘আমি ভয়ানক অসুস্থ। বাম পা ও হাতের আঙ্গুলগুলো বেঁকে গেছে। হাত অবশ হয়ে গেছে। হাঁটতে পারছি না। হাত দিয়ে খেতেও পারছি না। পরশুদিন একবার পড়ে গেছি। এই মুহূর্তেই আমার চিকিৎসা জরুরী।
আমাকে এখনও কেন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না? সরকারকে বলুন, আজই যেনো আমাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আমি প্রচণ্ড অসুস্থ। আগে আমার চিকিৎসা দেওয়া হোক। আমি নিজে না বাঁচলে কিভাবে আদালতে হাজির হবো?
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার দেখা করতে গেলে তাদের তার ক্রম অবনতিশীল শারীরিক অবস্থার কথা জানান। বিকেল ৪ টা ১০ মিনিট থেকে একঘন্টা কারা অভ্যন্তরে ওই দুই আইনজীবী বেগম জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। তারা এই কারাগারের দ্বিতীয়তলায় বেগম জিয়াকে যেখানে বন্দী রাখা হয়েছে সেই কক্ষের সামনে বারান্দায় গেলে বেগম জিয়া একটি হুইল চেয়ারে এসে কথা বলেন।
পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে আইনজীবী অ্যাডভেকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার বলেন, বেগম জিয়ার বাম হাত ও বাম পা সম্পুর্ন অবশ। নাড়াচাড়া করতে পারছেন না। নিজে হাঁটাচলা করতে পারছেন না। হুইল চেয়ারে বসে থাকতে হচ্ছে। নিজে হাতে তুলে কিছু খেতেও পারছেন না। গত পরশু-১৭ সেপ্টেম্বর বাথরুমে যাওয়ার সময় হাঁটতে গিয়ে পড়ে যান।
মাসুদ আহমদ তালুকদার জানান, খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, ‘আমি একথা মোটেই বলিনি যে, আদালতে যাবো না। কারা কর্তৃপক্ষ অসত্য বলছে। তারা মিথ্যাচার করছে। আমি বলেছি, আমি আদালতে যেতে চাই। তবে আমার শাররীক অবস্থার এতই অবনতি ঘটেছে যে, আদালতে উপস্থিত হয়ে বসে থাকার মতো সামর্থ নেই। আগে আমাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করা হোক। তারপর আমি নিয়মিত আদালতে হাজির হতে পারবো। আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার মা ও আমার ছোট ছেলের মৃত্যুর দিবসেও আদালতে গেছি, সারাদিন না খেয়ে থেকেছি। এখনই আমার চিকিৎসা খুবই জরুরী।’
আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বেঁকে গিয়েছে। হাত অবশ হয়ে যাওয়ায় নাড়াচাড়া করতে পারছেন না। তার শারীরিক অবস্থা চরম উদ্বেগজনক। অথচ তাকে এখনো হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না। আমরা বেগম জিয়ার এই ভয়াবহ শারীরিক অবস্থা দেখে ভীষণ কষ্ট বোধ করছি। সরকারকে বলবো তাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। দয়া করে আজই বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করুন।
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই খালেদা জিয়া নানারকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। আমি আবারও বলছি, আর এক মুহূর্ত বিলম্ব করবেন না। তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তিনি সুস্থ না হলে আদালতে যেতে পারবেন না। কারাগারের অস্থায়ী আদালতে আসার মতো অবস্থাতেও নেই তিনি। খালেদা জিয়া দুদিন আগেও কারাকক্ষের বাথরুমে পড়ে গিয়েছেন।
৫ সেপ্টেম্বর কারাগারে আদালত বসানোর পর বেগম খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানায় বিএনপি। পরে তার চিকিৎসায় গঠিত সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর প্রদত্ত রিপোর্টে বলেছেন,
খালেদা জিয়ার বাম হাতের সমস্যাসহ (বিকলাঙ্গতা) রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (বাতজনিত সমস্যা), সার্ভাইকাল স্পন্ডিলোসিস, লাম্বার স্পন্ডিলোসিস, বাম কোমরের অস্থিসন্ধিতে অস্ট্রিয়আর্থ্রাইটিস, অস্ট্রিয়পোরোসিস, সিনাইল ট্রেমর, এলার্জিজনিত সমস্যার কারণে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ রয়েছে। এছাড়া তার দুই হাঁটুই প্রতিস্থাপিত।
রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বোর্ড বেগম জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। নিতে বলা হয়েছে যে হাসপাতালে সব ধরনের স্পেশালিটি আছে, সেখানে। এক্ষেত্রে সরকার গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেন।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here