সিরাজী এম আর মোস্তাক>এ্যাডভোকেট, ঢাকা

Picture2বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার প্রায় দুই লাখ। শুধু এ দুই লাখ পরিবারের জন্য ৩৪৪০টি পদে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞাপন হয়েছে। আমরা কোটি কোটি বাংলাদেশী এ নিয়োগ থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশে ষোল কোটি নাগরিক অথচ মাত্র দুই লাখ পরিবার মুক্তিযোদ্ধা কোটাভুক্ত, এটি কি আদৌ ঠিক? শুধু এ দুই লাখ ব্যক্তিই কি দেশ স্বাধীন করেছে? আমাদের পূর্বপুরুষ তথা ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ন্যায় লাখ লাখ বন্দী ও শরণার্থীগণ কি মুক্তিযুদ্ধে কোনো ভূমিকা রাখেননি? বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাদের কারো নাম নেই। জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর নামও নেই। আমরা এ সকল স্বীকৃতি বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরী।

বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সকল বক্তব্যে ১৯৭১ এর সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিকেই মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালিকে দাবায়ে রাখতে পারবানা। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিবো। এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ তিনি বলেছেন, ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি তাদের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে দেশ স্বাধীন করে ছাড়বে।’ স্বাধীনতার পরও তিনি বলেছেন, ‘এদেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ স্বাধীন করেছে। ত্রিশ লাখ প্রাণ হারিয়েছে। এ স্বাধীনতা ও বিজয় রড়্গার দায়িত্ব আজ সবার।’ বঙ্গবন্ধুর এসব ভাষণ কি মিথ্যা ও প্রতারণা ছিল? তাহলে মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত কেন? আমরা মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে কেন?

বাংলাদেশে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস সবারই জানা। বঙ্গবন্ধুর সময়ে দেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল না। তিনি দেশবাসীকে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারে বিভক্ত করেননি। তিনি মাত্র ৬৭৬ বীরকে খেতাব দিয়ে বাকী সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করেছেন। এ নীতিতে তিনি যে কাউকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিতে কুন্ঠা করেননি। এমনকি ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে নৃশংশ হত্যাকান্ডের জন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও তার বাহিনী বাংলাদেশের প্রথম পরোয়ানাভুক্ত মানবতা বিরোধী অপরাধী হলেও বঙ্গবন্ধু তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও খেতাব দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে বঙ্গবন্ধু তাদেরকে অস্ত্র জমা দিয়ে সরকারি চাকুরিতে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে চাকুরিতে যোগদান করেছিল। এভাবে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেয়েছিল। এদের সন্তানেরা আজ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সুবিধা পাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে এদের তুলনায় ত্রিশ লাখ শহীদের অবদান কি কম ছিল? শহীদগণ কি মুক্তিযোদ্ধা নয়? তাদের তালিকা নেই কেন? তাদের তালিকা থাকলে আমরাও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারভুক্ত হতাম।

বাংলাদেশে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে অতিমাত্রায় প্রাধিকার দেয়ায় মারাত্মক বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। এটি বন্ধ না করলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হতে পারে। সরকার যেন তাই চাচ্ছে। শত আন্দোলন, সংগ্রাম ও লেখালেখির পরও মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু রেখেছে। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বরাদ্দ দিচ্ছে। এটি সম্পুর্ণ প্রতারণা ও প্রহসন। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত বাংলাদেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সনত্মান। আমরা চলমান বৈষম্যমূলক নিয়োগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের উচিত, আমাদের প্রতিবাদে সাড়া দেয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রদত্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here