তানসেন আলম, বগুড়া প্রতিনিধি :: বগুড়া সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে হোসেনে আরা(২০) নামের এক মহিলার ৩দিনের শিশু চুরি গেছে। সে বগুড়া শহরের ঝোপগাড়ী এলাকার দোকান কর্মচারী রুবেল উদ্দিনের ছেলে। এদিকে, শিশু চুরি ঘটনার পরপরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাইনী ওয়ার্ডে ও দেয়ালে নোটির্শ টাঙ্গিয়ে দেয়। নোটিশে লেখা রয়েছে, আপনার সন্তানকে অপরিচিত ব্যক্তিকে দেবেন না।
কাঁদতে কাঁদেতে হোসেনে আরা জানান, সন্তান প্রসবের জন্য তিনি গত মঙ্গলবার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বগুড়া সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গাইনী ওয়াডে ৩৫ নং বেডে ভর্তি হন। পরেদিন বুধবার তার একটি ফুটফুটে ছেলে শিশু জন্ম গ্রহন করে। এটাই তার প্রথম সন্তান।
শনিবার সকাল ৮টায় তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান তার পাশে এক অপরিচিত মহিলা। এসময় তার মা রেহেনা বেগমও ছিল। তার মা ছেলে শিশুটিকে ওয়ার্ডের বাইরে নিয়ে রোদে দাড়ায়। ওই অপরিচিত মহিলাটি তার মার পিছু পিছু যায়।
অশিক্ষিত রেহেনা বেগম জানান, শিশুটির জন্ডিস হয়েছে এমনটি ভেবে হাসপাতালের বাইরে সিড়িতে নিয়ে রোদে দাড়ায়। এসময় এক অপরিচিত মহিলা তার পাশে আসে। তিনি আরো জানান, ওই মহিলা আগের রাত ৯টায় কয়েক বার শিশুটিকে দেখতে আসে এবং বলে আমার রোগী রয়েছে ১৫ নং বেডে।
কথায় কথায় ওই মহিলার সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। সকালে শিশুটিকে ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের সিড়িতে রোদে নিয়ে আসলে ওই মহিলা তার সাথে আসে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত আলোচনা হয়। রেহেনা মহিলাকে বিশ্বাস করে তার কোলে শিশুটিকে রেখে সকাল ১০টায় ওয়ার্ডে কাপড় নিতে আসে। পরে ফিরে গিয়ে দেখে শিশু বাচ্চাসহ ওই মহিলাটি নেই। হাসপাতালের এখানে ওখানে খুজাখুজি করে না পেয়ে নার্সদের ঘটনাটি বলে।
ওই শিশু সন্তানের বাবা রুবেল উদ্দীন জানান, দেড় বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। শিশুটি জন্ম নেয়ার পর আমরা খুবই খুশি। শনিবার শিশুটির নাম রাখার কথা ছিল। কিন্তু আমি সন্তানকে হারালাম। এটাই আমাদের প্রথম সন্তান। দুপুর আড়াই টায় পুলিশ তার কাছ থেকে অভিযোগ লেখে নিয়ে চলে যায়। তবে, হাসপাতালের উর্দ্ধতন কোন কর্মকর্তা তার কাছে আসেনি।
গাইনী ওয়ার্ডের ইনচার্জ (নার্স) সানজিদা আকতার জানান, আমরা সব মাকে বলি, কেউ অপরিচিত কারো হাতে সন্তান দেবেন না এবং ওয়ার্ড ছেড়ে কেউ বাচ্চা নিয়ে বাইরে যাবেন না। তারপরও বাচ্চাটিকে বাইরে নিয়ে অপরিচিত মহিলার হাতে দেয়ায় দুঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ১৫ নং বের্ডে কোন রোগী ছিল কিনা এ প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, রাতে ডিউটি আমার ছিল না। তবে, খাতাতে ১৫ নং বের্ডে কোন রোগী ভর্তির এন্ট্রি নেই।
গাইনী ওয়ার্ডের কয়েকজন রোগী সাথে কথা বল্লে তারা জানান, শিশু চুরি হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাইনী ও শিশু ওয়ার্ডসহ দেয়ালে নোর্টিশ ঝুলে দেয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিধান চন্দ্র মজুমদার জানান, শিশু চুরি ঘটনায় পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। শিশুটির বাবা রুবেল উদ্দীন থানায় শিশু চুরির ঘটনায় অভিযোগ দিয়েছেন। রোগীদের সচেতন করার জন্য অপরিচিত ব্যক্তির হাতে শিশু তুলে না দিতে ওয়ার্ডে ও দেয়ালে নোর্টিশ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) আসলাম আলী জানান, শিশু চুরির ঘটনা জানার পর পুলিশ সেখানে যায়। শিশুর বাবা রুবেল উদ্দীন এ ঘটনায় একটি থানায় অভিযোগ দেন। শিশুটি উদ্ধারে বিভিন্ন জায়গায় খুজাখুজি করা হচ্ছে।