মিলন কর্মকার রাজু, কলারোয়া প্রতিনিধি :: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি বলেছেন, সড়ক, নৌ কিংবা রেলপথ যাই হোকনা কেন যোগাযোগটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কুয়াকাটা সীবীচ এবং বন্দর এরিয়া কাছাকাছি হওয়ায় আপনারা ভাগ্যবান। সবচেয়ে গভীরতর বন্দর হচ্ছে পায়রা সেটাও কলাপাড়ায়। পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবিষ্কার। এখানে উন্নয়ন হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা দুই টায় কুয়াকাটা সৈকতে অর্থমন্ত্রী মেগাবীচ কার্ণিভাল কুয়াকাটা ২০১৭ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ আরও দুই বছর বাকি রয়েছে। এসময়কে তিনি গোল্ডেন টাইম উল্লেখ করে এসময়ে আমাদের দেয়া অঙ্গীকার পুরন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, কুয়াকাটাকে আকর্ষনীয় এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনার সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা সম্পৃক্ত করতে পারলে এটি আরও কার্যকর হয়।

তিনি আরও বলেন স্থীতিশীল রাজনীতি থাকলে আগামি দুই বছরে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে পৌছবে। দারিদ্র্যসীমা ২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ শতাংশে নিয়ে আসা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথীবির অঙ্গীকার দারিদ্র্য থাকবে না বাস্তবায়ণে কাজ করতে হবে।

সাড়ে তিন কোটি দরিদ্যসীমার মানুষকে বের করে আনতে হবে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, দেশের সকল মানুষ বেশি লেখাপড়া না জানলেও বুদ্ধিমান। তাদের কাছে প্রযুক্তি পৌছে দিলে তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারছে। দেশের কৃষি জমি কমলেও খাদ্য উৎপাদন ১১০ লক্ষ টন থেকে ৩৮০ লক্ষ টনে উন্নীত করেছে। দেশের মানুষ উদ্ভাবনশীল বুদ্ধিতে দীপ্ত। তিনি বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। সমুদ্র তীরের মানুষের জন্য আজকের দিনটি একটি বিশেষ দিন।

বিশেষ অতিথি বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, আজকে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা পেয়েছে। কুয়াকাটায় আগামীতে ওসান ট্যুরিজম চালু করা হবে। সেই লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মৌলবাদ উত্থান বন্ধে সরকার সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। প্রতিবছর কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত হবে বীচ কার্ণিভ্যাল।

পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের চেয়ারম্যান এসএম গোলাম ফারুক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আসম ফিরোজ এমপি, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, আলহাজ মাহাবুবুর রহমান এমপি, শওকত হাসানুর রহমান এমপি, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, এলজিইডি সচিব আব্দুল মালেক, পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মোশাররফ হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মোঃ গাউস, বরিশাল পুলিশের ডিআইজ শেখ মোঃ মারুফ হাসান (বিপিএম বার), কুয়াকাটা পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা প্রমুখ।

এসময় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক একেএম শামীমুল হক সিদ্দিকী, কলাপাড়ার ইউএনও এবিএম সাদিকুর রহমানসহ পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যানগণ, পৌরসভার মেয়রগণসহ সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

মেগাবীচ কার্ণিভ্যাল ২০১৭ উপলক্ষ্যে কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম দিকে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। তিনদিনের এ অনুষ্ঠানে রয়েছে প্রতিদিন ওয়াটার বাইক, ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্দা, ভলিবল, ওয়াটার বাইক, এটিভি রাইডস, বোট বোয়িং, বিচ লাইটিং, ক্যাম্প ফায়ার, সমুদ্র পথে কুয়াকাটার সঙ্গে ফাতড়া, সুন্দরবন, সোনার চর, হরিণ খোলা, কটকা ও করমজলের সী-ক্রুজিং। রয়েছে রাখাইনদের পিঠেপুলি ও তাদের বুনন হস্তশিল্পের প্রদর্শনী। থাকবে লাঠিখেলাসহ বর্ণাঢ্য ঘুড়ি উৎসব ও স্থানীয় শিল্পীদের উপস্থাপনাসহ দেশের লোক সংগীতের স্বনামধণ্য সঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গীত ও ব্যান্ড  শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনা থাকছে তিন দিনের আয়োজনে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের আয়োজনে এ কার্ণিভ্যাল নিয়ে কুয়াকাটার স্থানীয় মানুষসহ পর্যটক-দর্শনার্থীরা যেমনি ছিল উৎসবমুখর। তেমনি উৎসবের সমন্বয়হীনতা এবং আগাছোলা অবস্থা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল সর্বত্র। ফলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য কুয়াকাটাকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করার অন্তরায় হয়ে যায় আয়োজকদের সমন্বয়হীনতা।

স্থানীয় সকল শ্রেণির মানুষের প্রশ্ন ছিল কুয়াকাটার প্রকৃতি ও সৌন্দর্যে কোথাও সাম্পানের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ট্যুরিজম বোর্ডের এ কার্ণিভ্যাল কেন্দ্রিক সকল পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে সাম্পানের দৃশ্য বিরাজমান ছিল। এছাড়া র‌্যালিতে ব্যবহারের টি-শার্ট এবং ক্যাপের বর্ণ এবং মান নিয়েও ছিল ব্যাপক সমালোচনা। এখানে রাখাইনদের ঐতিহ্য সম্পুর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।

এব্যাপারে আয়োজক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা এ বছরের ভুল-ত্রুটি সেরে আগামিতে সবার সমন্বয়ে কার্ণিভ্যাল কুয়াকাটা বর্ণিল এবং ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আগামি ১৬ জানুয়ারি শেষ হবে এ কার্নিভ্যালের।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here