ইটভাটায় জ্বলছে কাঠশিপুফরাজী, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি :: চরফ্যাশনে  অনুমোদন বিহীন ২৮টি ইটভাটায় নির্বিচারে কাঠ পোড়ানো শুরু হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝূঁকিতে থাকা ভোলার চরফ্যাসনে অধিকাংশ ইটভাটার মালিকেরা রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বিশেষ মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে ফসলি জমি, জনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং ভাঙ্গনকবলিত নদীর তীরে গড়ো তোলা হয়েছে এসব ইটভাটা। উপজেলার জ্বালানীকাঠ নির্ভর ২৫টি অনুমোদন বিহীন ইটভাটার জ্বালানীর যোগান দিতে উপকূলের দিগন্ত বিস্তৃত  সবুজ বেষ্টনী খ্যাত ম্যানগ্রোভ বাগান বিলীন হতে চলছে।

সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ইট পোড়ানো এবং জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহারের দায়ে  প্রথম মৌমুমে ৪টি ইটভাটার জরিমানা নামমাত্র করা হলেও অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ রাখতে এই জরিমানার কোন প্রভাব পরবে বলে মনে করছেন না সচেতন মহল।

অভিযোগ আছে, উপজেলা ও জেলা প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তাদের  ‘ম্যানেজ’ করেই অবৈধ ইটভাটাগুলো বছরের পর বছর ধরে বীরদর্পে অপকর্ম করেই যাচ্ছে । প্রত্যেক মৌসুমের শুরুতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানের নামে নূন্যতম জরিমানা আর মুচলেকা আদায়ের মাধ্যমে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা নিজেদের দায় এবং আখের গুছালেও অবৈধ ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা যায়নি,বন্ধ থাকেনি। এবছরও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে জানাগেছে।

স্থানীয় সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চরফ্যাশনে ২৮টি ইটভাটার মধ্যে ২৫টি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন ছাড়পত্র পায়নি। অনুমোদন বিহীন ইটভাটার  মালিকরা কয়েক দফা  আবেদন করলেও পরিবেশ আইন বহির্ভূত বিধায় অনুমোদন মেলেনি। জনবসতিপূর্ণ কৃষি জমি, ম্যানগ্রোভ বাগানের নিকটবর্তী অবস্থন এবং  টিন, ব্যারেল,ইট, বালি ও  সিমেন্ট  দিয়ে তৈরি নিষিদ্ধ চুল্লি ব্যবহার করা সহ নানান অনিয়ম বিদ্যমান থাকায়  ২৮টি ইটভাটাকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সীমিত সংখ্যক ইট পোড়ানোর অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তারপরও অনুমোদন বিহীন এসব ইটভাটার উৎপাদন কখনো বন্ধ থাকেনি, এবছরও শুরু করেছে উৎপাদন।

প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধ ভাটাগুলো টিকে আছে বছরের পর বছর।  যদিও চরফ্যাশন বা ভোলা জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে চরফ্যাশনে বৈধ বা অবৈধ ইটভাটার সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি।

উপজেলার কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, কয়লা ব্যবহারকারী অনুমোদিত ৩টি ইটভাটা ছাড়া বাকী ২৫টি ইটভাটায় ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি নেই। ব্যবহার করা হচ্ছে টিন, ইট, সিমেন্ট আর ব্যারেল তৈরী ৩০/৪০ ফুট উচ্চতার  চিমনী। জ্বালানী হিসেবে  পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটাগুলোর সবই স্থাপিত হয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, কৃষি জমি এবং ম্যানগ্রোভ বাগানের নিকটবর্তী স্থানে।

বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় গাছ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ বাগানে সক্রিয় কাঠ চোরা কারাবারি চক্রের মাধ্যমে ইটভাটা মালিকরা বিশাল পরিমান এসব কাঠের যোগান নিশ্চিত করছে বলে জানাগেছে।

এসব ভাটার অন্তত ২০ জন শ্রমিক জানান, ১ লাখ ইট পোডাতে গড়ে ২ হাজার মণ কাঠ পোডানো হচ্ছে। এক মৌসুমে একটি ভাটায গড়ে ৩০ লাখ ইট পোডানো হচ্ছে।এতে  ৬০ হাজার মণ কাঠ ব্যবহার হচ্ছে। সাবেক ইটভাটা ব্যবসাযী ও   মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মাহবুবুল আলম এ তথ্য সঠিক বলে নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে চলতি মৌসুমের শুরুতে দুই দফায় অভিযান চালিয়ে ৪টি অবৈধ ইটভাটার বিভিন্ন অংকে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার সর্বোচ্চ পরিমান ৫০ হাজার টাকার মধ্যে বলে জানাগেছে।

গতকাল নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো.আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালিয়ে ২টি ইটভাটার লোকজনকে আটক করা হয়েছে। এই দু’টি ইটভাটার মধ্যে একটি ইটভাটার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপরটির বিচারকার্য এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত চলছিল বলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবদুল মান্নান জানিয়েছেন।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালযরে বরিশাল বিভাগীয পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুকুমার বিশ্বাস  বলেন, ‘ইটভাটায কাঠ পোডানো সম্পূর্ণ অবৈধ; কযলা দিযইে ইট পোডাতে হবে। তবে ভাটায আগুন জ্বালানোর শুরুতে সামান্য কাঠ আমরা অনুমোদন করি। যদি কেউ আইন অমান্য করে তবে তাঁকে শাস্তির আওতায আসতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here