অবরোধ হরতালের ফসল যাবে জামায়াতের ঘরে!রবীন্দ্র নাথ পাল :: মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের প্রথম সারীর নেতারা অভিযুক্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় রাজনীতিতে এক রকম কোনঠাসা হয়ে বিএনপি’র ঘাড়ে সওয়ার হয়ে অবরোধ ও হরতালের নামে দেশব্যাপী সংহিসতা চালিয়ে প্রকারান্তরে বিএনপি কে রাজনীতির মাঠে একটি সহিংস দলে পরিনত করেছে জামায়াত।

গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধ ও হরতালে গাড়ীতে আগুন দিয়ে সাধারন নিরিহ মানুষ হত্যা সহ এসএসসি পরীক্ষায় চলাকালীন সময়ে ক্রমাগত হরতাল দিয়ে বিএনপি তাদের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের সন্মুখীন হয়েছে। এভাবে সাধারন মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে কেউ কোনদিন কেউ ক্ষমতায় গেছে, তার নজির আছে কিনা সন্দেহ। গত ৫ জানুয়ারির আগে বেগম জিয়া দেশব্যাপী সফর করে সরকারের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়ে নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা যেভাবে বাড়িয়ে তুলছিলো, তাতে সবচেয়ে শংকা ছিল সরকারী দলের।

কিন্তু হঠাৎ করে ৫ জানুয়ারির অবরোধ ও পাশাপাশি লাগাতার হরতাল ঘোষনার মধ্য দিয়ে নিজদলীয় নেতা কর্মীদের বিপাকে ফেলেছেন। এদের নামে ৫ জানুয়ারির’২০১৪ এর নির্বাচন কালীন সময়ে যে মামলা গুলো চালু আছে,তা চালাতেই তারা হিমশীম খাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে তারা এখন ডজন-ডজন মামলার আসামী হয়ে লুকিয়ে না হয় পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন কেন খেই হারিয়ে ফেললো-এ প্রশ্ন সবার।

আমাদের ধারনা ২০ দলীয় জোট মহাজোটের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে হেরে গেছে। প্রথমত আন্দোলন বেগবান করতে গিয়ে পেট্রোল বোমা মেরে নিরিহ মানূষ হত্যা , অহিংস রাজনীতি থেকে সহিংস রাজনীতিতে চলে যাওয়া এবং এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে লাগাতার অবরোধ ও হরতাল দিয়ে ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর ভবিষৎ নিয়ে হেলা ফেলা করে তাদের বিপাকে ফেলা।

বিরোধীরা যদি পরীক্ষার ব্যাপারটা একটু মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করতো, তবে বোধহয় এত সমস্যা হতো না। উল্টো আরো বিএনপি নেতা ওসমান ফারুক বললেন, প্রশ্নপত্র বাজারে পাওয়া গেলে সেই পরীক্ষা দিয়ে লাভ নেই। যদিও এবারের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র আউট হওয়ার এখনো কোন জোরালো অভিযোগ উঠেনি।

এই ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর বিষয়টি বুমেরাং হতে পারে বিএনপি’র জন্য।আর গাড়ীতেপেট্রোল বোমা মেরে নিরিহ মানুষকে আগুনে পুঁড়িয়ে হত্যা শুধু আমাদের নয় বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এ সহিংসতার নেপথ্যে বিএনপি’র যতটা না ভুমিকা তার চেয়ে বেশী ভুমিকা জামায়াতের।

বিএনপিকে ষ্ট্যাম্প কার্ড বানিয়ে জামায়াত রাজনীতির মাঠে আগুণের রাজনীতি করে বিএনপি’র উপর সমস্ত দোষ চাপাচ্ছে। জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রায় সবাই বিচারের সন্মুখীন হয়ে আজীবন কারাবাস, ফাঁসির খড়গ মাথায় নিয়ে জেলে আছে।

এমন অবস্থায় জামায়াত যদি জঙ্গীদের মত নৃশংসতায় নেমে ফায়দা লুটতে চায়, তাহলে এর দায়ভার বিএনপি’র উপর বর্তাতে বাধ্য। বিএনপি’র এমন সহিংস কাজে সায় নেই দলের অনেক নেতা কর্মীর। দীর্ঘ ৫৩ দিনের অবরোধ ও হরতালে ২০দলীয় জোটের লাভক্ষতি হিসেবের সময় এসেছে। জামায়াত ইসলামী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আদালতের দেয়া বিভিন্ন রায়ে নিষিদ্ধ সংগঠন বলে পরিচিতি পেয়েছে।

সরকার যদি এ দলকে নিষিদ্ধ করে দেয়, তার জন্য একটি ড্রেস রিহার্সেল দিলো বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার মাধ্যমে। আর আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেলে কি করতে হবে এবং কিভাবে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, সেটিই এখন পরখ করে দেখছে।

জামায়াত চায় বলেই বিএনপি এ ধরনের হিংসাত্মক আন্দোলন চালাচ্ছে। যেভাবে বিশ্বে জঙ্গী সংগঠনগুলো সহিংসতা চালাচ্ছে, ঠিক একইভাবে তারা অবরোধ ও হরতালে মাঠে চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্ছে। এ ধরনের চোরাগুপ্তা হামলায় সরকারের পতন হবে না, এটা বিএনপি- জামায়াত ও জানে। এসব হিংসাত্মক কাজ কর্মে বিএনপি যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তার ফায়দা লুটবে জামায়াত।

কারন বর্তমানে যে আন্দোলন চলছে,তার নেতৃত্বে আছে বিএনপিপন্থি সুতরাং দায়ভার তারই বেশী। লাভ লোকসানের বিচারে বিএনপি’র চেয়ে বর্তমান কথিত সরকার পতনের আন্দোলনে লাভবান হবে জামায়াত।

আর বিএনপি পরিনত হবে ব্য্রাকেট বন্ধী একটি দলে। যা আগামী দিনে আমাদের রাজনীতির একটি গুনগত পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এটা নির্ধিদায় বলা যায় এদেশ আফগান বা ইরাক লিবিয়া হবে না,কারন এখানে মুক্তমনা অসামপ্রদায়িক লোকের অভাব নেই।

২৭/২/১৫

লেখক : সম্পাদক, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ, মোবাইল:০১৭১৩-৮১৯২৯৪,

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here