অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার কলিট তালুকদার, পাবনা প্রতিনিধি :: এই ফেব্রুয়ারী মাসে ভাষার জন্য রক্তে লাল হয়েছিল বাংলার মাটি। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। ছালাম, রফিক, শফিক, বরকত, জব্বারদের মতো অকুতোভয় সৈনিকদের বুকের তাজা রক্তে অর্জিত আমাদের বাংলা ভাষা।

তাদের স্মৃতি ধরে রাখতেই নির্মাণ করা হয় শহীদ মিনার। অথচ এখনও পাবনার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নেই শহীদ মিনার। শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানলেও ভাষা শহীদদের শ্রওদ্ধা জানাতে যেতে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,১৯৪৮ এর মাতৃভাষা আন্দোলনে পাকিস্তান গণ পরিষদে ‘ভাষা প্রশ্নে বির্তকের প্রতিবাদে’ ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ধর্মঘট পালনের খবরে পাবনায় ছাত্র সমাজ ও রাজনৈতিক দল এক সভায় মিলিত হয়ে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে ছিলো।

সে ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ এর ১১মার্চ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সে সময় পাবনা জেলা প্রশাসক’কে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে অনেকেই পুলিশের হাতে বন্দি হয়েছিলো। ৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সর্বপ্রথম পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছিলো।

এ ছাড়া ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে জেলার সুজানগরে একুশের মিছিল ও শোভাযাত্রায় গুলি চালালে সুজানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুস সাত্তার এর বা পাঁজরে গুলি লেগে সে দিন তিনি শহিদ হয়েছিলেন।

ভাষা আন্দোলনের এই ইতিহাস সমৃদ্ধ’ পাবনায় ১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত পাবনা জেলা স্কুল, ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল গালর্স হাই স্কুলসহ জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, পাবনায় মোট ১হাজার ৫শ’৪২টি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭৯টি, মাদ্রাসা ১৩৯ টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১হাজার ১শ’২৪টি এবং ডিগ্রি কলেজ রয়েছে ৬৬টি। এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশগুলোতে নেই শহীদ মিনার। এমনকি পাবনা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাবনা জেলা স্কুলও নেই শহীদ মিনার।

শহীদ মিনার না থাকায় পূর্নাঙ্গভাবে শহীদ দিবস পালন করতে পারে না শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই অভিবাবকদের। পাবনা জেলা স্কুলের এক অভিবাবক ভাস্কর চক্রবর্ত্তী বলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকা দুঃখ জনক। সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার নেই এটা ভাবাই যায়না।

নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় ক্ষোভের শেষ নেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে তারা বলেন, পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাল ভাবে পালন ও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দিতে পারে না তারা। আবার অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীদের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল দিতে কষ্ট করে যেতে হয় দূরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

স্কুলে শহীদ মিনার না থাকা দুঃখজনক স্বীকার করে পাবনা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়েদুর রহমান জানান, তিনি চার বছর যাবৎ এই স্কুলে যোগদান করেছেন। তিনি যোগদানের পর থেকেই প্রতিবছর শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করে আসছেন। তার পরেও শহীদ মিনার নির্মান হচ্ছেনা।

তবে পাবনা জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দেব বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিবাবকেরা চাইলে আগামী বছর একুশে ফেব্রুয়ারীর আগেই স্কুলের নিজস্ব অর্থায়ানে স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, পাবনা জোনের সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল করিম জানান

যে সকল স্কুল গুলোতে শহীদ মিনার নেই, সেই সকল স্কুল গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পত্র উদ্ধতর্ন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে স্কুল গুলোতে শহীদ মিনার নির্মান কাজ শুরু হবে

এ ব্যাপারে পাবনার জেলা প্রশাসক রেখা রাণী বালো বলেন, ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা গেলে সেটিই শহীদদের প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হবে। একুশের চেতনায় কোমলমতী শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মান হবে এমণটাই প্রত্যাশা পাবনা বাসীর।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here