এস এম মাসুদ আলম, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)

শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্দি গাও গ্রামের অভাবী আদিবাসী নারী অতয় মারাক ৭৫বছর বয়সে এসেও বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না।

অতয় মারাক জানান, গত ২০ বছর ধরে সে একটি বয়স্ক ভাতা কার্ডের জন্যে প্রশাসনসহ স’ানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দাড়ে দাড়ে ঘুরে বহু আবেদন নিবেদন করেও একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পায়নি । বর্তমানে অতয় মারাকের দিন কাটে খেয়ে না খেয়ে । বেঁচে থাকার জন্য জীবন যুদ্ধে হেরে যাইনি আদিবাসী নারী অতয় মারাক । শৈশব, কৈশর ও যৌবন পাড় হয়ে এখন সে বৃদ্ধ । জীবনের অনেক চড়াই উৎরাই পাড় হয়ে এসেছে ।

এখন বয়সের ভারে নূহ্য হয়ে হেলে দূলে জীবন বাঁচার তাগিদে বেছে নিয়েছে ভিক্ষা বৃত্তি । গজনী অবকাশ কেন্দ্রে ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবন চলে অতয় মারাকের । দেশের বিভিন্ন স’ান থেকে অবকাশে আসা ভ্রমণ বিলাসীদের কাছে হাত বাড়াতে হয় তাকে । এভাবে যা পায় তা দিয়ে কোন দিন একবেলা একমুঠো খাবার জোটে । আবার যেদিন এখানে ভ্রমণ বিলাসীদের আগমন না ঘটে সেদিন তাকে না খেয়ে উপোষ থাকতে হয় । মাথা গোজার ঠাইটুকুও নেই আদিবাসী নারী অতয় মারাকের ।স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অতয় মারাক স্বামী শিং সাংমা ভারতে আশ্রয় নেয় সরনার্থী হিসাবে । দেশ স্বাধীনের পর চলে আসে নিজ ভূমিতে ।

অতয় মারাক ২ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তানেক জননী হন । ১৯৮৮ সালে অতয় মারাকের স্বামী শিং সাংমার মৃর্ত্যু হয় । আদিবাসী নিয়ম অনুযায়ী ছেলেরা বিয়ে করে শশুড় বাড়ীতে চলে যায় । এক মেয়ে বিয়ে করে স্বামী নিয়ে ঘর সংসার করছে । তাদের মধ্যে মাতা-পিতার ভরণ-পোষণ ও খোজ- খবর নেয়ার রেওয়াজ খুব একটা নেই বললেই চলে । ভিক্ষা বৃত্তি করার শক্তি ও নেই তার শরীরে । মানুষকে দেখে দুহাত বাড়িয়ে ভিক্ষা চাইতে গিয়ে অনেক সময় মাটিতে লুটিয়ে পরেন অতয় মারাক । ঠিকমত কথাও বলতে পারেন না সে। ১৭ নভেম্বর দৈনিক খবরের প্রতিনিধি মুসা মিয়া,ভোরের কাগজের খোরশেদ আলম ও গণ জাগরণের মুহাম্মদ আবু হেলাল গজনী অবকাশে গেলে অতয় মারাক ওই তিন সাংবাদিককে দেখে দুহাত বাড়িয়ে ভিক্ষা চাওয়ার সময় মাটিতে লুটিয়ে পরেন ।

তার বয়সের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে সে তার বয়সের কথাও বলতে পারে না ।এসময় সাংবাদিকরা তাকে উঠিয়ে জিজ্ঞাসা করলে কান্না জড়িত কন্ঠে তার দূঃখ দুর্দশার কথা বলেন ।বয়স্ক ভাতার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে অতয় মারাক বলেন, হামি কোন বয়স্খ ভাথা ফাইনা, মরভার আগে আমাখে বয়স্খ ভাটা কেরা দিবু । সরখার আমাখে দেখে না। বোথের সময় হলে বোথ চায়। আমি এহন কি দিয়ে কিভাবে চলি ? কেথা খবর নেয়। তোরা আমার ছবি নিয়ে বেইচ্ছা খাবি ,আমারে কয়দা টাহা দিয়া যা। অতয় মারাককে কেউ খেতে দিলে খায়, না দিলে না খেয়ে অন্যের বাড়ীতে রাত কাটে ।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ সরকার বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বয়স্ক ভাতার কাজ আসেনি । এলে তাকে দেওয়া হবে ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here