নবগঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে আগামী ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। মঙ্গলবার সকালে কমিশন সচিবালয়ে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা।

তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৪ ও ৫ ডিসেম্বর এবং ১৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

তফসিল ঘোষণার আগে আজ সকালে দুই নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও এম সাখাওয়াত হোসেন এবং ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন সিইসি।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কুমিল্লার সব ওয়ার্ডে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।

এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্র এবং গত ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডের ৫৮টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়।

চলতি বছরের জুলাইয়ে দুটি পৌরসভা নিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার ১৮০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এ নির্বাচন শেষ করতে হবে।

নতুন এ সিটি করপোরেশনে একজন মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ডে ২৭ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৯ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন ইসির উপসচিব ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন। তার সাথে থাকবেন নয়জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ১৯৯ জন এবং নারী ভোটার ৮৬ হাজার ৭৪ জন। ৬৫টি ভোটকেন্দ্রের ৪২১টি ভোটকক্ষে এবার ভোটগ্রহণ হবে।

সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, কুসিক নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখতে অন্যান্য বাহিনীর সাথে অতিরিক্ত র‌্যাব মোতায়েন করা হবে।

তিনি বলেন, সেনা মোতায়েন করা হলে অন্যান্য বাহিনী কাজের স্পৃহা হারিয়ে ফেলে।

তবে নির্বাচন চলাকালে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান শামসুল হুদা।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার সেনা মোতায়েন না করায় কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে বলেন, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের জন্য চিঠি দেয়া ছাড়া কমিশনের আর কি করার আছে?

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ার পরও নাসিক নির্বাচনের মত কুসিক নির্বাচনেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করছে। অথচ কমিশন কিছুই করতে পারছে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সমস্যা হবে।

শামসুল হুদা স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রভাব মুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে দলগুলোকে বের হওয়ারও আহ্বান জানান।

নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে বিএনপির আপত্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয়। তাই আইন অনুযায়ী বিএনপি বিরোধিতা করতে পারে না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিছু এলাকায় ইভিএম ব্যবহার হলেও তারা বিরোধিতা করেনি বলে তিনি জানান।

সিইসি আরো বলেন, নাসিক নির্বাচনে এ পদ্ধতি সুফল দিয়েছে। ইউএনডিপিসহ ১১টি দেশের পর্যবেক্ষক দল এ পদ্ধতিকে সমর্থন করেছে। এছাড়া নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদেরও এ পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণে সুবিধা হয়। তাই কেউ এর বিরোধিতা করলেও ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনী আচরণ বিধি সকল প্রার্থীকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। অন্যথায় কমিশন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।

আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে কুসিক এলাকা থেকে প্রার্থীদের সকল বিলবোর্ড, দেয়াল লিখন, পোস্টার ও ডিজিটাল ব্যানার মুছে ফেলার আহ্বান জানান শামসুল হুদা।

তিনি বলেন, প্রার্থীদের ব্যয় পর্যবেক্ষণে ইসির সুবিধার্থে প্রার্থীদের যেকোনো তফসিলী ব্যাংকে এবার নতুন একাউন্ট খোলার নিয়ম করা হয়েছে।

কমিশন সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিল করার সময় কোনো ধরনের মিছিল বা শোডাউন করার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

তবে প্রার্থীরা জনসভা করতে না পারলেও পথসভা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করতে পারবেন।

একই সাথে নির্বাচনী এলাকার ভোটার ছাড়া কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কিংবা সমমর্যাদার ব্যক্তিকে নির্বাচনী আইন মেনে চলার আহ্বান জানান সিইসি শামসুল হুদা।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কুমিল্লা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here