Congratulationsস্টাফ রিপোর্টার :: ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’- এমন স্লোগানে জনগণকে নতুন করের চাপ না দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থ  বছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মন জয় করতে আয়-ব্যয়ে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই ঘোষণা করেছেন এই বিশাল বাজেট। যদিও তিনি বাজেট বক্তৃতায় উচ্চতর প্রবৃদ্ধি এবং অপ্রতিরোধ্য গতিতে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি সব ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বড় অঙ্কের আয়ের লক্ষ্য অর্জনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এটি উপস্থাপনের আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়। এরপর অনুমোদন নেয়া হয় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের। এর মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট দেয়ার রেকর্ড স্পর্শ করলেন তিনি। এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।

নতুন করে কোনো করারোপ করা না হলেও অর্থমন্ত্রীর বেশকিছু প্রতিশ্র“তি প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর কথা থাকলেও তা আড়াই লাখ টাকাই বহাল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর কথা বলা হলেও শুধু ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হয়নি।

এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কর্পোরেট কর ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির সাড়ে ৪২ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষেরই বেশি লাভ হবে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও এটি মোকাবেলায় বাজেটে কিছু পদক্ষেপ থাকা উচিত ছিল।

কিন্তু সেটি অনুপস্থিত। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে সমস্যা চলছে। এটি নিরসনে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। উল্টো মূলধনের ঘাটতি মেটাতে করের টাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে মানুষের আয় বাড়ানো। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এ ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপের কথা বলা হয়নি।

বিশ্বব্যাংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ অনুমান করলেও প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ ধরে উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী আর্থিক প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী প্রবণতাকে মানতে রাজি নন। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকনির্দেশনায় মন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রায় দু’দশক ধরে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যেভাবে হচ্ছে সে ক্ষেত্রে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমরা এখন প্রস্তুত। এবং সেটি করতে হলে শাসন কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে।’

নতুন অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এ ব্যয় চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার জিডিপির ১৮.৩ শতাংশের সমান। মোট আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এতে অনুদান ছাড়া ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।

বিশাল ব্যয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘বাজেটের আকার বেড়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি পেতে হলে এর কোনো বিকল্পও নেই। এ ছাড়া দেশের জনগণের জীবনমানের মৌলিক পরিবর্তন আনার অন্যতম পূর্বশর্ত হল টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধি।’

তিনি যে বিশাল আয়ের লক্ষ্য ধরেছেন তা অর্জনেও আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আহরণ ও সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, তাতে রাজস্ব আহরণ যেমন বাড়বে, তেমনি দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজস্ব পরিসরও বৃদ্ধি পাবে।’

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here