সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ১০ বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। ফলে পৌর এলাকার মানুষ ভয়াবহ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে আর্সেনিকে ভুগছেন।

কলারোয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ তাদের দায়িত্ব গ্রহণের ৩ বছর পূর্ণ করলেও আজও এই জনগুরুত্বপূর্ণ পানি সরবরাহ প্রকল্পটি চালু করতে পারেননি। যার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে পৌরবাসীকে।

সূত্র জানায়,এ প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ থেমে আছে গত ১০ বছর ধরে। কলারোয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারাভিযানে পৌরসভার নানাবিধ সমস্যার মধ্যে পানীয় জলের বিষয়টি প্রাধান্য দেন। নির্বাচিত মেয়রসহ সকল কাউন্সিলরদের নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতির অন্যতম ছিলো পানি সরবরাহ প্রকল্পটি চালু করার।

২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী দায়িত্ব গ্রহণের পর এ বিষয়ে পৌর প্রশাসন গুরম্নত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেও তার বাসত্মবায়ন করতে পারেনি। যদিও দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত ৩ বছরে পৌর কর্তৃপক্ষ কর আদায়ের জন্য নানামুখি প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন সুবিধার কথা বলে কর প্রদানের জন্য নিয়মমাফিক মাইকিং করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বশীল পৌর প্রশাসনের কাছে পৌরবাসীর প্রত্যাশা ছিল অনেক।

কিন্তু গত ৩ বছরে কর আদায়ের উদ্যোগ ছাড়া তেমন কোন পদক্ষেপ জনসাধারণের চোখে পড়েনি। গোটা পৌরসভার কিছু এলাকা আজও বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে। পৌর এলাকার অধিকাংশ রাস্তার এখনও বেহাল দশা। রাসত্মার ওপর হাট-বাজার, আবাসিক এলাকায় ওয়েল্ডিং কারখানা, স’মিল, লেদ মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে ইচ্ছেমতো।

নাগরিক অধিকার বলতে যা বোঝায়, তা ক্রমেই বিলীন হতে চলেছে। তারপরেও পৌরবাসীর আশা ছিলো, নির্বাচিত পৌর প্রশাসন তাদের নির্বাচনী ওয়াদা পূরণে প্রথমেই পানি সরবরাহ প্রকল্পটি চালু করবে। কিন্তু গত ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও পৌরবাসীর সেই আশা বাসত্মবে রূপ নেয়নি।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে বগুড়ার রুরাল ডেভলপমেন্ট একাডেমি (আরডিএ) এর অর্থ সহযোগিতায় পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ১৮ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের জন্য পৌরসভার ট্রাক টার্মিনালের পাশে পানির হাউজ-প্ল্যান্ট নির্মাণ ও সেখান থেকে তুলসীডাঙ্গা ফুড গোডাউন পর্যন্ত পাইপ লাইনের কাজ হয়ে তা বন্ধ হয়ে যায়।

একটি হাউজ-ট্যাঙ্ক ও সামান্য পাইপ লাইনের কাজ করেই ১৮ লাখ টাকার বাজেট শেষ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্পটি আবারও চালু করার জন্য ২০০৪ সালের ২৭ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র আহ্বান করে সংবাদ পত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪শ’ ৮ টাকা। এ কাজ শেষে পরীক্ষামূলকভাবে পানি উত্তোলন করা হয়। কিন্তু তাতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক থাকায় পানি তোলা বন্ধ করে দেয়া হয়।

সূত্র আরও জানায়, ২০০৪ সালে বেসরকারী সংস্থা জেস ফাউন্ডেশন এই পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের সম্মতি সাপেক্ষে আরডিএ’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তির শর্ত ছিলো, জেস ফাউন্ডেশন পানি সরবরাহ করবে এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করবে। এসব নানা পরিকল্পনা, লাভ-ক্ষতি ও বাসত্মবায়নের বেড়াজালে আটকা পড়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ পানি সরবরাহ প্রকল্পটি।

সূত্রমতে,১৯৯০ সালের ১০ মার্চ ১৫.০৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে কলারোয়া পৌরসভা যাত্রা শুরু হয়। আর প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পর ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারী এই পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ সহস্রাধিক মানুষের এই পৌরসভা শুরুতেই অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, জলাবদ্ধতাসহ নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত পৌরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পানি সরবরাহ ব্যবস্থার। কেননা, পৌর এলাকার নলকূপের পানি প্রায় শতভাগ আর্সেনিকযুক্ত। ভয়াবহ আর্সেনিক কবলিত পৌর এলাকায় এ পর্যনত্ম সরকারীভাবে আর্সেনিকমুক্ত একটি নলকূপও স্থাপন করা হয়নি।

অথচ উপজেলা ১২টি ইউনিয়নে সরকারী-বেসরকারী ভাবে আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ বসানো হয়েছে। সুপেয় বিকল্প পানির কোন ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসীকে বাধ্য হয়ে পান করতে হচ্ছে আর্সেনিক দূষিত পানি। পৌরসভায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা না গেলে এ বিরূপ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার কোন বিকল্প পথ নেই।

কলারোয়া পৌরসভার মেয়র আকতারুল ইসলাম জানান, পানি উৎপাদন প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আমরা আবেদন করেছি। তবে উক্ত প্রকল্পটি চালু করণের জন্য বেসরকারী সংস্থার সাথে বারবার আলাপ আরোচনা হয়েছে কিন্তু প্রকল্পটি চালু করতে ব্যাপক ব্যায়বহুল হওয়ায় সংস্থা গুলো সম্মতি দিচ্ছে না। সরকারের জনস্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে পৌরসভার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ইতোমধ্যে ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছে। খুব দ্রুত প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে।

এম.আমিনূর রহমান/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here