খোরশেদ আলম বাবুল, শরীয়তপুর প্রতিনিধি :: প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প, আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় “জমি আছে ঘর নেই” এমন পরিবারের মাঝে ঘর বিতরণ করা হয়েছে। এ ঘর বিতরনে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও সখিপুর থানা যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
চেয়ারম্যান মেম্বারদের সাথে কোন প্রকার সমন্বয় না করে পাকা ঘর দেয়ার নামে প্রতি সুবিধাভোগী পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা। চেয়ারম্যান গৃহহীন গরীব লোকদের বাদ দিয়ে তার পছন্দের স্বচ্ছল ব্যক্তিদের এ ঘরের তালিকায় নাম দেয়ায় সাধারন মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিষয়টি ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন পর্যন্ত গড়ানোর পর তদন্ত হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান এ অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে বলেছেন যারা চেয়ারম্যানী নির্বাচন করতে চায় তারাই এ মিথ্যা রটাচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও স্থানীয় বাবুল সরকার জানায়, আশ্রয়ন কল্প-২ এর অধীনে সখিপুর ইউনিয়নে এক লাখ টাকা মূল্যমানের ২০টি সেমিপাকা ঘর বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস এ প্রকল্পের কাজ তদারকি করেছে।একইসাথে পাশবর্তী আরশিনগর, দক্ষিন তারাবুনিয়া ও চরসেনসাস ইউনিয়নেও ২০টি করে ঘর বরাদ্দ পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ”জমি আছে ঘর নেই” এমন দরিদ্রের জন্য সম্পূর্ন বিনামূল্যে এসব সরকারি ঘর দেয়া হলেও ঘরের বিনিময়ে টাকা নিয়েছে সখিপুর ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মানিক সরদার। টাকা আদায় থেকে বাদ পড়েনি প্রতিবন্ধী, হতদরিদ্র ও অসহায় লোক। প্রতি ঘরের বিনিময়ে সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে।
ঘর পাওয়ার আশায় অনেক হতদরিদ্র পরিবার এনজিও থেকে কিস্তিতে টাক এনে চেয়ারম্যানকে দিয়েছে। এ ছাড়াও ঘর তৈরীর মিস্ত্রী খাওয়া, মালামাল পরিবহনসহ বিবিধ খরচ বাবদ আরো ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে প্রতি পরিবারের। এ ঘর পেতে প্রত্যেকের ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে এ ঘর দিয়েছেন। চেয়ারম্যান বিত্তবান ও স্বচ্ছল সমর্থকদের মাঝে ত্রানের এ ঘর বিতরন করেছেন বলেও জানান তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নের ঢালী কান্দি গ্রামের বাদশা মিয়ার বাড়িতে দামী ঘর রয়েছে তাকেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ ঘর দেয়া হয়েছে। ঘর পেয়েছে অনেক জমি ও ঘর থাকা পরিবার। অথচ এ ঘর বিতরণের বিষয়ে ইউপি সদস্যগণ অবগত না।
এ বিষয়ে সাংসাদিকদের কাছে সুবিধাভোগী পরিবার বক্তব্য দেয়ার কথা চেয়ারম্যান জানতে পেরেছে। পরবর্তীতে সুবিধাভোগী অসহায় পরিবারকে ডেকে সুবিধা বঞ্চিত করবে বলে ভয় দেখিয়েছে চেয়ারম্যান। যাতে চেয়ারম্যানের সকল অনিয়ম ও দূর্ণীতি চেঁপে যায়। চেয়ারম্যানের অপকর্মের বিষয়ে কেউ মুখ খুললে তার ঘর ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে হুমকিও দেয়া হয়। বিষয়টি স্থানীয় এক ঢিস ব্যবসায়ী ফেসবুকে প্রচার করে তোপের মুখে আছেন।
ইউনিয়নের মালত কান্দির শাহিদা বেগম জানায়, দুই কক্ষের পাকা ঘর দিবে বলে চেয়ারম্যান ২০ হাজার টাকা নিছে। তার শ^শুর এনজিও থেকে কিস্তিতে টাকা এনে চেয়ারম্যানকে দিয়েছে। তারা যে টাকা দিয়েছে সেই টাকার বিনিময়ে এ ঘর কিনে নেয়ার সমান। তাহলে সরকারের সাহায্য পেলেন কই? বেপারী কান্দির শাহাজালাল মিয়া জানায়, ঘর দেয়ার কথা বলে চেয়ারম্যান ১৫ হাজার টাকা চেয়েছে। তিনি এখনও টাকা দেননি।
ইব্রাহীস বকাউল জানায়, মিস্ত্রীদের খাওয়া ও মালামাল আনার ভাড়া বাবদ তার ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়াও চেয়ারম্যান ১৫ হাজার টাকা নিয়েছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানায়, সরকারী ঘর বিনামূল্যে বিতরণ করার কথা। সেক্ষেত্রে সখিপুরে অনেক অনিয়ম ও দূর্নীতি হয়েছে। গৃহহীনদের উপেক্ষা করে বিত্তবানদেও ঘর দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করছেন তারা।
ঢিস ব্যবসায়ী বাবুল সরকার জানায়, ফেসবুকে অনিয়মের বিষয়টি প্রচার করায় চেয়ারম্যান তার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ৪নং ওয়ার্ড সদস্য সাব্বির মাদবর জানায়, চেয়ারম্যানের সমর্থক ও বিত্তবান লোকদের ঘর দিয়েছে। ঘর দেয়ার বিষয়ে তাদের সাথে সমন্বয় করা হয়নি।
চেয়ারম্যান কামরুজ্জাামান মানিক সরদার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। ঘরের বিনিময়ে কেউ টাকা নিয়েছে তা আমার জানা নেই। আগামীতে যারা ইউপি নির্বাচনের জন্য তৈরী হচ্ছে তারাই এ মিথ্যা রটাচ্ছে। আমি ওমরা হজ্বের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাচ্ছি। আজ (বৃহস্পতিবার) রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ফ্লাইট। ১৫ তারিখে ফিরে আপনাদের সাথে কথা বলব।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, দূর্নীতির অভিযোগ ইউএনও সাব্বির আহম্মেদ এর কাছে আসে। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। আমি সুবিধাভোগীদের ডেকে কাউকে টাকা না দেয়ার জন্য বলেছি। চেয়ারম্যান তখন টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমি কিছুদিন হলো দায়িত্বে আসছি। আমার কাছেও অনেক কথা আসছে। আপনারা তদন্ত করে দেখেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলবোনা।