সিলেট : চিনিস্‌ না আমি কে? আমি যুবলীগ নেত্রী মিনারা!’-এ কথা বলে ট্রাফিক কনস্টেবল দেলোয়ারের গালে চড় দিলেন মিনারা। একবার নয়, একাধিক বার। এতে বিব্রত হন ট্রাফিক কনস্টেবল দেলোয়ার। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। শ’ শ’ মানুষের সামনে তাকে এভাবে করা হলো নাজেহাল। এমন সময় পার্শ্ববর্তী কাজি ম্যানশনে সিভিল ড্রেসে দাঁড়িয়েছিলেন এক নারী পুলিশ। তিনি এসে ধরে ফেলেন মিনারাকে। এ সময় মিনারা তার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। গতকাল বেলা ২টায় সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের সিটি মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশকে মারধরের ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় চোখে জল চলে আসে ট্রাফিক পুলিশ দেলোয়ারের। শ’ শ’ মানুষের সামনে এভাবে হেনস্তার বিষয়টি তাকে অবাক করে দিয়েছে। শুধু ট্রাফিক পুলিশ দেলোয়ারই নয় ঘটনার সময় উপস্থিত লোকজনও হতবাক হয়েছেন। মিনারা বেগম সিলেটের আলোচিত এক নেত্রী। যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন সময় তাকে রাজপথে দলীয় মিছিল ছাড়াও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা গেছে। তিনি জেলা যুব মহিলা লীগের অর্থ সম্পাদিকা বলে জানা গেছে। যুবলীগ নেত্রী হলেও রাজনীতির আড়ালে তাকে নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। এক নামেই সিলেটের মানুষ মিনারাকে চেনেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ২টার দিকে যুবলীগ নেত্রী মিনারা বেগম রিকশাযোগে চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজার অভিমুখে আসছিলেন। ওয়ানওয়ে রোড হওয়ায় জিন্দাবাজারের তাঁতীপাড়া গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে কর্তব্য পালন করছিলেন ট্রাফিক কনস্টেবল দেলোয়ার। মিনারা বেগম তাঁতীপাড়ার গলির মোড়ে আসামাত্র ট্রাফিক দেলোয়ার তার রিকশার গতি রোধ করেন। ওই সময় তিনি জানান, ‘এটা ওয়ানওয়ে রোড। যাওয়া যাবে না।’ এ সময় মিনারা বেগম অনেকটা জোর করে রিকশা নিয়ে জিন্দাবাজার চলে আসার চেষ্টা করেন। ট্রাফিক কনস্টেবল দেলোয়ার রিকশার ড্রাইভারকে রিকশা নিয়ে না যাওয়ার জন্য বারণ করেন। এতে ক্ষেপে ওঠেন রিকশায় বসে থাকা মিনারা বেগম। রিকশা থেকে নেমে তিনি কনস্টেবল দেলোয়ারের কলার ও শার্ট ধরে টেনে সিটি মার্কেটের সামনে নিয়ে যান। বলতে থাকেন-‘চিনিস্‌ না আমি কে? আমি যুবলীগ নেত্রী মিনারা। আমাকে কেউ আটকায় না, তুই আটকালি কেন?’ এ কথা বলেই তিনি চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন ট্রাফিক পুলিশ দেলোয়ারকে। মহিলা হওয়ায় মিনারাকে আটক করতে পারছিলেন না ট্রাফিক পুলিশ দেলোয়ার। এমন সময় ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী কাজি ম্যানশনে সিভিল ড্রেসে ডিউটিতে ছিলেন এক মহিলা কনস্টেবল। তিনি দৌড়ে এসে মিনারার হাত ধরেন। এ সময় মিনারা ওই মহিলা কনস্টেবলের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন। এদিকে, প্রায় ১০ মিনিটব্যাপী চলা ঘটনার খবর শুনে সেখানে ছুটে যায় টহল পুলিশ। ছুটে আসেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মহিলা পুলিশও নেয়া হয়। ওই সময় ঘটনাস্থলেই প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন, আক্রান্ত হওয়া ট্রাফিক কনস্টেবল দেলোয়ারের বক্তব্য শোনার পর তাকে পুলিশের ভ্যানে তোলা হয়। পরে ওই ভ্যান থেকে নামিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে ছবি সংগ্রহ করতে সেখানে ছুটে যান সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা যখন তাকে গ্রেপ্তারের ছবি তুলছিলেন তখন মিনারা সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু পুলিশের হাতে বন্দি থাকায় তার হাত থেকে রক্ষা পান সাংবাদিকরা। এদিকে, ঘটনার পর ট্রাফিক কনস্টেবল দেলোয়ার জানান, ‘সকাল থেকে প্রচণ্ড যানজট ছিল নগরীতে। ওদিকে বিশ্বকাপ ট্রফি শহীদ মিনারে আসার কারণে রাস্তা জটমুক্ত রাখার নির্দেশ ছিল। এ কারণে ওয়ানওয়েতে কাউকে চলাচল করতে দেয়া হয়নি। এসব বিষয় ভদ্রভাবে বুঝিয়ে বলার পরও মহিলা যুবলীগের পরিচয় দিয়ে মিনারা বেগম আমাকে মারধর করেন।’ তবে, গ্রেপ্তারের পর মিনারা উচ্চ স্বরে বলছিলেন, তার কোন দোষ নেই। ওই কনস্টেবল তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। পুলিশ তাকে সাজানো ঘটনায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার এসআই শাহীন গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, কনস্টেবল দেলোয়ারের ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এক। এ কারণে ঘটনাস্থলে থাকা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here