dhakaঢাকা :: আজ শুক্রবার সকালে পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে ‘হাওরের পাশে বাংলাদেশ’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘হাওরের পাশে বাংলাদেশ’ কর্তৃক গঠিত ’গণতদন্ত কমিশন’ এর প্রধান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হাওরের জলমহালের ইজারা বাতিল করে মাছ শিকারের অধিকার উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানান।

‘গণতদন্ত কমিশন’ এর সদস্যবৃন্দের হাওর পরিদর্শনোত্তর পর্যবেক্ষণ প্রকাশের জন্য আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ’গণতদন্ত কমিশন’ এর সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, সদস্য ডা. শাকিল আখতার, ড. আনোয়ার হোসেন, ড. হালিম দাদ খান, জাকির হোসেন, জাকিয়া শিশির, আবুল হাসান রুবেল, হাওর পরিদর্শন দলের সদস্য মোঃ রিয়াজ উদ্দিন খান, সুব্রত দাস খোকন, আতিকুর রহমান পূর্ণিয়া ও শামীমা নাসরিন লাবণ্য। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ’গণতদন্ত কমিশন’ এর সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন।
কমিশনের প্রতিনিধিদল ২৯ জুন থেকে ১ জুলাই তিনদিনের হাওর সফরে কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর, নিকলী, মিঠামইন, ইটনা, নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জনপদ পরিদর্শন করেন। এরমধ্যে বাজিতপুর ও মিঠামইনে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবগের্র সাথে মতবিনিময় করেন। খালিয়াজুরী ও ধর্মপাশার গোলকপুর বাজারে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের সাথে মতবিনিময় করেন। ’গণতদন্ত কমিশন’ এর সদস্যবৃন্দ এ সকল মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ব্যক্তিদের বক্তব্য থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণসমূহ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উত্থাপন করেন।

আগাম বন্যার ফলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি হাওর অঞ্চলে তৈরী হয়েছে তার বিবরণ তুলে ধরে দুই কোটি হাওরবাসীর জীবন-জীবিকা, প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ সংকট মোচনে আশু ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য কতগুলো দাবি তুলে ধরা হয়। হাওরের একমাত্র ফসল বরো ধান ঢলে তলিয়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত কৃষকদের রক্ষার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ ২৪ লক্ষ পরিবারকেই সরকারি সহায়তার আওতায় আনতে হবে। চাল ও অর্থ সাহায্যের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষা চালিয়ে নিতে হাওরের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি দিতে হবে। কৃষি ঋণ, এনজিও ঋণ মওকুফ করতে হবে। আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। আগামী ফসল মওসুমের জন্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। নতুন কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। গবাদিপশুর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। হাওরের জলমহালসমূহের অবৈধ ইজারা বাতিল করতে হবে। ভাসান পানিতে মাছ শিকারের অধিকার উন্মুক্ত করে দিতে হবে যাতে ফসল হারানো কৃষক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

হাওরের এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য চাষের সময়কাল কম লাগে এমন উন্নত জাতের ধান আবিষ্কার করার উদ্যোগ নিতে হবে। হাওরের ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগুলো খনন করতে হবে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও তিতাস নদীর সংযোগ খালসহ সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং-এর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। হাওরের বুক চিরে ’আবুরা’ সড়কের নামে উঁচু বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে। কারণ এটি হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। সেনানিবাসের মত যে কোন স্থাপনা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুনাফাভিত্তিক লুটেরা ব্যবস্থার কারণে হাওরের পরিবেশ প্রকৃতি বিবেচনায় না নিয়ে নানা ধরনের প্রকৃতি বিরোধী প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এটা যেমন হাওরে হচ্ছে তেমন সুন্দরবনেও হচ্ছে। তিনি জলমহালের ইজারা বাতিলে করে মাছ শিকার উন্মুক্ত করার আহ্বান জানান।

আগামী ২৯ জুলাই ঢাকায় দিনব্যাপী হাওর বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। আগষ্ট মাসে হাওর অঞ্চলের সাতটি জেলার হাওর উপজেলাসমূহে তদন্ত কমিশনের সদস্যবৃন্দ সফর করবেন।- প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here