ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও ব্যাংকঋণ, ডলারে তেল কেনা এবং পরিবহনভাড়া বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীদের চাপে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করলেও তা চূড়ান্ত কিছু নয়। এর আগেও সরকার ভোজ্যতেলের দাম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু সরকার নিজেই নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেনি।
তারা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে ভোজ্যতেলের দামও নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি একে আজাদ বলেন “আগামী ২৯ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করবে সরকার।”
দাম না বাড়ানোর বিকল্প নিয়েও সরকার ভেবেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের চাপে সরকার দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মঙ্গলবার সচিবালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রী জি এম কাদের।
ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বেলা আড়াইটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত এই ম্যারাথন বৈঠক চলে।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানি কম হবার কারণে বাজারে সয়াবিনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারা ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে কৌশল নিতে পরামর্শ দেন। তবে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর দাবিতে অনঢ় থাকেন।
তবে বৈঠকে দাম না বাড়ানোর পরামর্শ চেয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে সহযোগিতা চান বাণিজ্য মন্ত্রী জি এম কাদের। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে দাম কম রাখা সম্ভব নয়।
তারা বৈঠকে যুক্তি হিসেবে বলেন “জ্বালানির দাম বাড়ায় ভোজ্যতেল পরিবহনে ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে।”
ডলারে ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয় উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা বলেন, “টাকা ভাঙ্গিয়ে ডলারের মাধ্যমে আমদানি করতে গিয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ভোজ্যতেল আমদানি করায় ঋণের সুদ দিতে গিয়ে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।”
এ ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট পলিসি করা দরকার বলে  বৈঠকে সুপারিশ করেন ব্যবসায়ীরা।
বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানান, বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও সরকার প্রয়োজনে ভুর্তকি দিয়ে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখে। ভোজ্যতেল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের সুদ শিথিল করাসহ বিভিন্ন কৌশল নেয়ার সুপারিশ করেন ব্যবসায়ীরা।
সয়াবিনের দাম স্থিতিশীল না থাকার কারণ উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীকে জানান, বিভিন্নভাবে খরচ বাড়ার পাশাপাশি শীতে সয়াবিনের উপর চাপ বেড়েছে। শীতে পাম ওয়েল জমে যাওয়ার কারণে সবাই সয়াবিন কিনছে। এ কারণে সেয়াবিনের বাজার স্থিতিশীল থাকছে না।
আমদানি কম হওয়ার কারণে ভোজ্য তেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে এমন আলোচনাও হয় বৈঠকে। চাহিদার বিপরীতে চার লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করা হয়েছে উল্লেখ করে বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানান, গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১০ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়েছে অথচ এ সময়ে চাহিদা ছিল ১৪ লাখ মেট্রিক টন।
এদিকে গত ২০ জুলাই খুচরা বাজারে প্রতিলিটার সয়াবিনের দাম ১০৯ ও পাম তেলের দাম ৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে প্রতি কেজি চিনির দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৫ টাকা। কিন্তু বাজারে সরকারের এ বেধে দেয়া দামের কোনো প্রভাব নেই। উল্টো ২৭ ডিসেম্বরের টিসিবি’র মূল্য তালিকা অনুযায়ী খুচরা বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ১২৪ থেকে ১২৮ টাকা করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২৯ ডিসেম্বরের বৈঠকে কে কত মূল্যে তেল আমদানি করেছে, কত টাকা শুল্ক দিয়েছেন এসব বিষয় পর্যালোচনা করে মূল্য নির্ধারণ করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, তেলের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় অনেকদিন ধরে তেলের মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজন হয়নি। হঠাৎ করে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আবার মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি এসেছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/স্টাফ রিপোর্টার
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here