বাংলাদেশ, একটি রক্তমাখা নাম। একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পৃথিবীর মানচিত্রে ঠাই করে নেয় বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশ। সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশকে ভালোবেসে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন অনেক মুক্তিসেনা। অনেকেই বরণ করেছেন যন্ত্রনাদায়ক পঙ্গুত্ব। ইজ্জত হারিয়েছেন অনেক মা-বোন।
তারপরেই আমরা পেয়েছি লাল-সবুজ পতাকা সম্বলিত আমাদের এই বাংলাদেশ। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, ইজ্জ্বত হারিয়েছেন এবং বরণ করেছেন পঙ্গুত্ব। আজকের এই সমাজে তারাই আজ সবচেয়ে বেশি অবঙ্গা ও ঘৃণার পাত্র। একটি শহীদ পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে ঘুরে সেটাই উপলব্দি করতে পারলাম। যা অত্যন্ত লজ্জাস্কর ও দুঃখজনক।
শহীদ পরিবারের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম ঈদগাঁও কাঁচা রাস্তার মোড় হতে কয়েক গজ উত্তর দিকে বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রীয় ভান্ডারের সামনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে বাংলাদেশী মুক্তিবাহিনীর এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংগঠিত হয়।
সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তৎকালীন ই.পি.আরের ল্যান্স নায়ক, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার গোরকাটা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মনু মিয়া শহীদ হয়। একই যুদ্ধে শহীদ হয় সিপাহী বাচ্চু মিয়া ও সিপাহী আবদুস ছাত্তারসহ নাম না জানা আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা।
সেই শহীদদের যুদ্ধকালীন সময়ে তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশ বেতার ভান্ডারের সামনে ডি.টি রোড সংলগ্ন স্থানে কবর দেয়া হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার ওই শহীদদের সমাধিস্থলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। শহীদ পরিবারের আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসে ওই স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাত।
কিন্তু সম্প্রতি একটি ডেভেলপার কোম্পানী ওই স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন স্থানে একটি বিশাল মার্কেট নির্মাণ করেছেন। ওই মার্কেটের গাড়ি পার্কি করার সুবিধার্থে সেই ডেভেলপার কোম্পানী স্মৃতিসৌধটি ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ মনু মিয়ার বড় মেয়ের জামাই মোঃ সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম হালিশহর বিজিবি ২৮ ব্যাটালিয়ান ওই ডেভেলপার কোম্পানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে পুনরায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার আহ্বান জানান।
তারপরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শহীদ পরিবারের দাবি, অতীত ও বর্তমান কোনো সরকারের আমলেই তারা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি। সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য কোনো চেষ্টাও করেনি। তাদের একটিই দাবি, একটিই চাওয়া-পাওয়া। আর সেটি হচ্ছে- ল্যান্স নায়ক, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মনু মিয়ার সমাধিস্থলে পুনরায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হোক।
এজন্য তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়েরর সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
আমিও আশা করি, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে, তাদের পরিবারের সম্মানার্থে ল্যান্স নায়ক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মনু মিয়ার সমাধিস’লে পুনরায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
লেখক- মোঃ আলাউদ্দিন মজুমদার, সাংবাদিক, লেখক ও সংগঠক। নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা।