কলকাতা: দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় সিনেমা এবং সিনেমার বাইরের নানা মন্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। ভারতের জনপ্রিয় বাংলাদৈনিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন, ছেলে বা মেয়ের চুমুতে কোন পার্থক্য নেই। তাহলে স্বস্তিকা কি লেসবিয়ান? এমন প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে।
শ্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় এর নেয়া সাক্ষাৎকারের পুরো অংশটিই তুলে দেয়া হলো খাসখবরের পাঠকদের জন্য-শঙ্কর দেবনাথের ‘কাট ইট’ ছবির ফার্স্ট লুকের জন্যে জিনস্, টপ আর তেল মাখা মাথায় সিঁদুর ঢেলে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আমার সামনে হাজির হলেন। যেন পাশের বাড়ির ছটফটে তরুণী। ফেসবুকে একুশটা ফেক প্রোফাইল তৈরি হয়েছে এই নায়িকার নামে। মাথার ওপর এখনও তেরো বছরের ডিভোর্স কেসের ক্লান্তি জেগে থাকে স্বস্তিকার মনে। কিন্তু কোনও কিছুকেই তোয়াক্কা না করে ‘জাতিস্মর’, ‘টেক ওয়ান’, ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’, ‘শেষের কবিতা’-র মতো বাংলা ছবিতে কাজ করে তিনি অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর স্কোরবোর্ডে রান বাড়িয়েই চলেছেন। আমার আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শুধু বাংলা ছবি নয়, পাওলিকে চুমু খাওয়া থেকে ভালবাসার ভাললাগার নানান আড্ডায় বিস্ফোরক মন্তব্যে মন খুললেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: এত রোগা হচ্ছেন কেন? শুভশ্রীও তো জিরো ফিগারে ঝুঁকেছে। বলিউডে যেখানে বিদ্যা, সোনাক্ষীর কার্ভি শরীরের চর্চা, সেখানে আপনারা কি উল্টোপথে হাঁটবেন নাকি?
স্বস্তিকা : না না, এত কিছু ভেবে আমি কিছুই করি না। এখন খেতে একদম ইচ্ছে করছে না। খাচ্ছি না। আমি দিব্যি উপোস করে থাকতে পারি। তবে বলা যায় না ডিসেম্বর তো পার্টির মাস তখন আবার খাব! আর মোটা হয়ে যাব। বুম্বাদা তো বলেই, আমার কোনও ধারাবাহিকতা নেই। আজ মোটা তো কাল রোগা। ‘মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর’-এর সময় আমি মৈনাককে বলেছিলাম তুই ক্যামেরাটা আমার মুখের থেকে নিচে কখনও নামাবি না। পরে দেখেছি অবশ্য লোকে সেটাই পছন্দ করেছে। (রহস্য ভরা হাসি নিয়ে)।

প্রশ্ন: তা হলে বাংলা ছবিতে মোটা, রোগা বিষয়টা আজ কি আগের মতো…
স্বস্তিকা : (থামিয়ে দিয়ে) না এখন চরিত্রটাই সবচেয়ে বড়। চরিত্রের সঙ্গে মিশে গেলে কার কত সেক্সি বডি- এ সব লোকে আজ আর ভাবে না। লোকে দীপিকার রামলীলার চেহারাও চাইছে আবার সোনাক্ষীর রাউডিও দেখছে। ‘মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর’-এ গড়িয়াহাটে শর্টস পরা আমার পিছন থেকে নেওয়া দৃশ্যটা নিয়ে আমার খুব চিন্তা ছিল কিন্তু পরে লোকে ওটা নিয়েই আমায় বার বার বলেছে।

প্রশ্ন: এগারো বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। কিন্তু স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে যে কোনও ক্ষেত্রেই তাঁর সম্পর্কের নিরিখেই দেখা হয়? এটা কেন?
স্বস্তিকা : আসলে আমি টিপিক্যাল অভিনেত্রী সুলভ আচরণ করে উঠতে পারিনি কখনও। মাপ‍‍জোখ করে চলা আমার ধাতে নেই। পার্টিতে গিয়ে মুখ দেখিয়ে চলে আসতে পারি না আমি। এমন কখনই ভাবি না যে অমুকের সঙ্গে পার্টিতে নাচলে সেটা পেজ থ্রি-র গসিপ হবে বলে আমার ইচ্ছে হলেও সেটা করব না। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আসলে এক রকম। অভিনেত্রী বলে ‘দুরকম’ স্বস্তিকা হয়ে বাঁচতে পারব না আমি।

প্রশ্ন: এই কারণেই কি আপনার অভিনয় নিয়ে আলোচনা না করে সৃজিতের সঙ্গে আপনি ঠিক কী করছেন সেটা নিয়েই লোকে বেশি কথা বলতে বা শুনতে চায়?
স্বস্তিকা : দেখুন ইদানিং অনেকেই এক গাল হেসে আমার কাছে জানতে চাইছে আমার সৃজিতের ব্রেক আপ হয়েছে কি না? এর মানে কী? আমি কবে বলেছিলাম যে ওর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক? আমাদের প্রিমিয়ারে একসঙ্গে দেখা গেল মানেই আমরা প্রেম করছি? আরে আমি ছাড়াও সৃজিতের আরও ৯০ জন বান্ধবীর নাম আমি-ই জানি। আমি কেবল অভিনেত্রী বলেই লোকে আমার কথা বলছে।

প্রশ্ন: তবে এখন কিন্তু অনেকে বলছেন সৃজিতের চেয়ে আপনি এখন মৈনাকের দিকে ঝুঁকছেন বেশি…
স্বস্তিকা : মৈনাক? (বিস্ময়ে, খুব হেসে) দেখুন, মৈনাকের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির জন্যে তো আমার আলাপ হয়নি। ওর সঙ্গে আমার বোনের মাধ্যমে যোগাযোগ। ও আমার খুব ভাল বন্ধু কাউকে ভাল না লাগলেও যেমন ওকে সেটা আমি বলতে পারি আবার কাউকে খুব ভাললাগলে ওকেই জানাই। আমার মে‍য়ের সঙ্গেও ওর রোজ কথা হয়। থ্যাঙ্কফুলি মৈনাকের চেহারাটা এমন যে আমার পেয়ার হিসেবে লোকে ওকে ভাবতে পারে না বলেই মৈনাক আর আমাকে নিয়ে প্রেমের মাখো মাখো গল্প তৈরি হয়নি। তবে ও যদি মেয়ে হত তাহলে আমি কবেই লেসবিয়ান হয়ে যেতাম! ওর পরের ছবিতে আমি নেই, কিন্তু তার পরের ছবিতেও ও যদি আমায় না নেয় আমি খুব মারব ওকে।

প্রশ্ন: আপনি মনে করেন অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে ট্যালেন্টটা সবচেয়ে শেষ কথা। এটা কেন?
স্বস্তিকা : হ্যাঁ। পরিচালক, প্রোডিউসার থেকে সিরিয়ালে সুযোগ পাওয়ার জন্যে আমি দেখেছি স্ক্রিপ্ট রাইটারদের সঙ্গেও নিয়মিত পি. আর. করতে হয়। শুধু পি. আর. নয় তাঁরা যখন যেমন চান সেটাই করতে হয়। ট্যালেন্ট দেখানোর জন্যে এটা মেনে নিতেই হবে।

প্রশ্ন: বলিউডের নানা ধরনের ছবি তৈরি হচ্ছে সেই প্রেক্ষিতে নিউ এজ বাংলা ছবিকে আপনি কী ভাবে দেখেন?
স্বস্তিকা : এখন বাংলা ছবিতে অনেক নতুন ধারার কাজ হচ্ছে। ‘আমি আমার গার্লফ্রেন্ড’-এর মতো ছবিতে আমি যা প্রশংসা পেয়েছি সেটা ভাবাই যায় না। বাংলা ছবিতে মহিলা চরিত্র গালাগালি দিচ্ছে, সে তার বরকে তার ইচ্ছে অনুসারে মা হওয়ার, মানে অন্যের সন্তানধারণ করে সেটা জানিয়ে দিচ্ছে, তার মধ্যে কোনও গিল্টও নেই, এটা কিন্তু বড় ব্যাপার। আমি মৈনাককে বলেওছিলাম চরিত্রটা কনসিভ করার জন্যে যদি স্বামীর কাছে ক্ষমা চাইত আমি করতাম না।

প্রশ্ন:আপনি এই যে নিজের মতকেও ছবির চরিত্রের মধ্যে মেলে ধরছেন এটা সব ছবির ক্ষেত্রে পারেন? নাকি মৈনাক বলেই…
স্বস্তিকা : না, কেবল মৈনাক বলেই পারছি এমন নয়।

প্রশ্ন: তা হলে আপনার মতো অভিনেত্রী ‘তবে তাই হোক’ ছবি করতে চেয়েছিল?
স্বস্তিকা : আসলে স্ক্রিপ্ট পড়ে খুব ভাল লেগেছিল কিন্তু দেখলাম এগজিকিউট করতে গিয়ে সেটা একটা মামুলি পরকীয়ার ছবি হয়ে দাঁড়াল।

প্রশ্ন: কিন্তু স্বস্তিকা কি কেবল প্রেম, সম্পর্কের ছবি করবে?
স্বস্তিকা : না তা কেন? এই তো মিশর রহস্য করার সময় আমার ভেঙ্কটেশ-এর সঙ্গে যখন নিয়মিত যোগাযোগ হয়েছে, ওঁদেরকে তো বলছি-ই মেরেকো ব্যাকলেস চোলি পেহেনকে নাচ না হ্যায়। কমার্শিয়াল ছবি আগেও তো করেছি। সুযোগ আসলে আবার করব।

প্রশ্ন: কিন্তু ইদানীং কম করছেন বলে কি শুভশ্রী বা শ্রাবন্তীর মতো গ্রামের দিকে ক্রাউড পুল করার করার ক্ষমতা ওঁদের তুলনায় আপনার কমে আসছে?
স্বস্তিকা : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু তো বদল হবে। আরও যারা নতুন আসবে তাদের চাহিদা পুরনোদের চেয়ে বাড়বে।

প্রশ্ন: মানে? স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় কি পুরনো হয়ে গেলেন?
স্বস্তিকা : আরে না আমি ২০১১ অবধি গ্রামে কোনও নায়ক ছাড়া কুড়ি হাজার লোকের সামনে টানা দু’ঘণ্টার শো করেছি। আমি এখন কমার্শিয়াল ছবি করি না তাই ওই জায়গাটাই ঢুকতে চাই না। এটাই বলতে চাইছি।

প্রশ্ন: পাওলির সঙ্গ চুমু খাওয়ার দৃশ্যটা কেমন ছিল?
স্বস্তিকা : মৈনাকের ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’-এর জন্যে এই দৃশ্যটা শুট হল। আনন্দবাজারে ছবিগুলো দেখে আমার মায়ের একটু অস্বস্তি হয়েছিল। কিন্তু মাকে বললাম, একজন অভিনেত্রী হিসেবে এই কাজটা না করলে জানতে পারতাম না যে চুমু খাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে বা মেয়ে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যতটা গুরুত্বপূর্ণ আমার মন! আমার মন আদর করতে চাইছে এটাই সবচেয়ে সত্যি। বিশ্বাস করুন, মেয়ে বা ছেলের চুমুতে কোনও তফাত নেই। আর চুমুর সঙ্গে সেক্সের কী আছে?

প্রশ্ন: আপনার কি কোনও মহিলার সঙ্গেই এখন মেন্টাল বন্ডিংটা জমে?
স্বস্তিকা : দেখুন, বন্ধুতা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটা ফিজিক্যাল বন্ডিং-এর জায়গায় নিয়ে যেতেই পারে তার মানে এই নয় যে ইউ জাস্ট হ্যাভ ট্যু গেট আ ডিল্ডো অ্যান্ড ফাক ইচ আদার।

প্রশ্ন: আপনার কাছে সম্পর্কটা তা হলে কেবলই সেক্সের ওপর নির্ভর করে না?
স্বস্তিকা : এ রকম তো হতেই পারে একটি ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হল, এবং সেটা চুমু পর্যন্তই গেল। কিন্তু বিছানা অবধি গেল না। তা হলে কি আমি ভাবব ওটা কোনও সম্পর্কই ছিল না?

প্রশ্ন: কিন্তু পাওলির সঙ্গে চুমু খাওয়ার দৃশ্যটা সত্যিই সাহসের…
স্বস্তিকা : (উত্তেজিত হয়ে) এতে সাহসের কী আছে? জামা ঠ্যাঙের ওপরে উঠলেই কলকাতার লোকেরা গেল গেল করে ওঠে! ‘আমি আমার গার্লফ্রেন্ড’-ভাবুন, একটা আঁতেল ছবি নয়, ফেস্টিভাল সার্কিটের ছবি নয়, আমাকে মৈনাক ভৌমিক জামাকাপড় খুলিয়ে চেঞ্জ করিয়েছে। আর কি সাহসিপনার বাকি রইল? তবে পাওলি এই দৃশ্যটায় খুব সহযোগিতা করেছে। নয়তো এত ভাল হত না।

প্রশ্ন: নিজের মেয়েকে মানুষ করতে হচ্ছে… একা লাগে না? মনে হয় না কেউ থাকলে হত?
স্বস্তিকা : একটু ভেবে… মনে তো হয়। কিন্তু পাবো কোথায়? ইন্ডাস্ট্রির কেউ আমার বন্ধু হতে পারে না। ইন্ডাস্ট্রির বাইরেও দেখেছি মহান ইন্টেলেকচ্যুয়াল ব্যক্তিত্বদের, মুখে যাই বলুক বান্ধবী স্ক্রিনে চুমু খেলে অশিক্ষিত বউ-পেটানো স্বামীর মতো মানসিকতা হয়ে যায়! আসলে সম্পর্কের মধ্যে থাকার অনেক হ্যাপা। আমারও তো নানান ব্যাপার আছে সেগুলোই বা কেন কেউ মেনে নেবে? মেন্টাল কম্প্যাটিবিলিটির সমস্যা… তবে হ্যাঁ সেক্সুয়াল কম্প্যাটিবিলিটি নিয়ে আমার কারওর সঙ্গে কোনও সমস্যা হয়নি (খুব হেসে)।

প্রশ্ন: প্রেমে আর পড়তে চান না?
স্বস্তিকা : নাহ… আসলে প্রেমে পড়লে আমি দেখেছি প্রেমের স্রোতে যার জন্যে আমি সাত সমুদ্র পেরিয়ে গেলাম সে হয়তো রাস্তাই পেরলো না… খুব চাপ! সিঙ্গল থাকাই ভাল…

প্রশ্ন: একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। টলিউডের আজকের প্রথম পাঁচ পরিচালকের নাম বলুন…
স্বস্তিকা : সৃজিত মুখোপাধ্যায়, মৈনাক ভৌমিক, অনীক দত্ত, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী।

প্রশ্ন: বেশ। এক মিনিটে জবাব দিন… প্রসেনজিৎ-
স্বস্তিকা : ডিরেক্টরস অ্যাক্টর।

প্রশ্ন: দেব-
স্বস্তিকা : ফুল্টু হিরো।

প্রশ্ন:শুভশ্রী-
স্বস্তিকা : খুব ভাল ফিগার। খুব বেশি ছবি দেখিনি। কাজও কম করেছে।

প্রশ্ন: শ্রাবন্তী-
স্বস্তিকা : খুব ভাল মেয়ে, ডাউন ট্যু আর্থ। ভাল অভিনয় করছে। আমার খুব পছন্দের।

প্রশ্ন:পাওলি-
স্বস্তিকা : চরিত্র নিয়ে ভাবে। ভাল কো-অ্যাক্টর কোনও চুলোচুলি নেই কিন্তু আমাদের।

প্রশ্ন: জিৎ-
স্বস্তিকা : আমার ফেভারিট। হট! আমার মেয়েরও খুব পছন্দ। পারফেক্ট কমার্শিয়াল হিরো। বহুত হট…

প্রশ্ন: ঋতুপর্ণা-
স্বস্তিকা : ঋতুদির অভিনয় সিনেমা যখন করি না তখন থেকেই ভাল লাগে। কিন্তু এখন যে ছবি করে, ওই এক্সপোসিং রোল সেগুলো না করলেও পারত। ঋতুদির দরকার ছিল না। ছবিগুলোও যে দরকার সেটাও মনে হয় না। ‘মুক্তধারা’-য় দারুণ লেগেছে ওকে, কিন্তু ছবিটায় তো আর কিছু নেই।

কলকাতার সাংবাদিক শ্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যা ‘র সৌজন্যে

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here